দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদীতে ২য় দফায় ডিম ছেড়েছে মা মাছ। তবে এবারও ডিম আহরণকারীদের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফায় হালদায় পাঁচশ কেজিরও কম ডিম পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে আজ আবার ডিম ছাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
গতকাল বুধবার বিকাল সাড়ে চারটার পর মা মাছ ডিম ছাড়ে। এর আগে সকাল ৯টা থেকে নদীর বিভিন্ন স্থানে নমুনা ডিম দেখা যায়। এরপর প্রায় সারাদিন মা মাছ নদীতে নমুনা ডিম ছাড়ে। তবে বিকাল সাড়ে চারটার পর ছাড়ে পূর্ণ ডিম। এর আগে গত ২৫ মে দিবাগত রাত ১২টার পর, পরদিন ২৬ মে দুপুর ১২টার পর এবং রাত ১০টার পর তিন দফায় নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। এরপর ২৭ মে দিবাগত রাতে ছাড়ে পূর্ণ ডিম। তবে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও পূর্ণিমার প্রভাবে হালদায় লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ওই সময় বেশিরভাগ ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এতে ডিম সংগ্রহকারীরা এক প্রকার হতাশ হয়ে পড়েন। গতকালও বিকালে ডিম ছাড়ার খবরে শুরুতে হালদা পাড়ে উচ্ছ্বাস দেখা দিলেও পরবর্তীতে আবারো হতাশা নেমে আসে। সাড়ে তিনশরও বেশি নৌকার মধ্যে মাত্র ৪০টির মতো নৌকা তিন-চার বালতি করে ডিম পেয়েছে। সব মিলিয়ে কত ডিম গতকাল পাওয়া গেল সেই হিসেব সম্পন্ন করা হয়নি। আজ বিকেলে হ্যাচারি ও মাটির কুয়ায় দেয়া ডিমের হিসেব করা হবে।
আমাদের রাউজান প্রতিনিধি জানান, গত বছরের ২২ মে হালদায় রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছেড়েছিল মা মাছ। ওই বছর ডিম সংগ্রহের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৬ হাজার কেজি। কিন্তু এবছর প্রথম দফায় ডিম ছাড়ে মাত্র সাড়ে ৬ হাজার কেজি। যা গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। এছাড়া এসব ডিম থেকে রেণু ফোটানো সময় অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এবার প্রতি কেজি রেণু বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দামে। গত রোববার প্রথম দফার ডিম থেকে উৎপাদিত রেণু বিক্রি শেষ হয়েছে। আর এর তিনদিন পরে পুনরায় নদীতে ডিম ছাড়ল মা মাছ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হালদা গবেষক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া জানান, বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে পরিপূর্ণ ডিম ছেড়েছে মা মাছ। পাশাপাশি হালদায় লবণাক্ততা কমে স্বাভাবিক হয়েছে। বর্তমানে লবণাক্তের পরিমাণ ০.০৬ পিপিটি যা একেবারেই স্বাভাবিক।
আমাদের হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, এবার নদীর উপরিভাগের সংগ্রহকারীরা বেশি ডিম পেয়েছেন। কাগতিয়া থেকে অংকুরিঘোনা পর্যন্ত এলাকায় সবচেয়ে বেশি ডিম পাওয়া গেছে। অংকুতিঘোনা ও গড়দুয়ারা নয়াহাটে ডিম সংগ্রহকারী কেউ কেউ ১০/১২ বালতি আবার কেউ কেউ ৫/৭ বালতি করে পেয়েছেন। তবে নিচের অংশ আজিমের ঘাট এলাকায় সবচেয়ে কম ডিম পাওয়া গেছে। এছাড়া মাছুয়াঘোনা থেকে রামদাস মুন্সির হাট পর্যন্ত কোনো ডিম পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুন হুদা রনি জানান, নদীর সত্তারঘাট থেকে শুরু করে আজিমের ঘাট পর্যন্ত নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছ ডিম ছেড়েছে। হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মাদ রহুল আমিন জানান, বিকাল সাড়ে চারটা থেকে নদীতে মা মাছ পুরাদমে ডিম ছাড়তে শুরু করেছে। তিনি জানান, নদীতে পাহাড়ি ঢল রয়েছে। জোয়ারের সময় নদীর পানি বাড়বে। ভাটার সময়ও পানি বেশি থাকবে। তখন মাছ আবারো ডিম ছাড়ার একটি সম্ভাবনা রয়েছে। এবার লবণাক্ততার পারিমাণ কমে যাওয়ায় নদী থেকে সংগৃহীত ডিম ফোটাতে তেমন সমস্যা হবে না বলেও জানান রহুল আমিন।