দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী। গত ২৬ মার্চ হালদাকে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ নদী সুরক্ষায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। হালদার মাছের সুরক্ষা ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে স্থানীয় প্রশাসন গত ৩১ মাসে হালদায় ১৭১ বার অভিযান পরিচালনা করেছে। একইভাবে নদী দূষণ রোধে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।
হালদায় ক্রমাগত অভিযানের কারণে গত বছর ২২ মে বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ডিম ছাড়ে। গত বছর ডিম ছাড়ার পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৫৩৬ কেজি। ২০১৯ সালে ডিম ছেড়েছিল ১০ হাজার ৫১৫ কেজি। এর পূর্ববর্তী বছরগুলোতে আরো কম ডিম ছেড়েছিল। হালদায় প্রতি বছর এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে যে কোন সময় মা মাছ ডিম ছাড়ে। দমকা হাওয়ার সাথে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণে নদীতে ঢল নামলেই ডিম ছাড়ে। আবার অনেক সময় প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকলেও ডিম ছাড়ে বলেও সংশ্লিষ্টরা অভিমত প্রকাশ করেছেন।
হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গত ৩১ মাসে পরিচালিত অভিযানে ৩ লাখ ৪ হাজার মিটার অবৈধ ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। নদীতে তাৎক্ষণিক অভিযান পরিচালনার জন্য ৩টি নৌকা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জাল ছাড়া ও জাল বসানোর ৬ টি নৌকা, ৩ কিলোমিটার বালি উত্তোলন পাইপ, ১টি ট্রাক্টর, ১৫ টি ড্রেজার, ৫৩টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা ধ্বংস করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। ৩ জনকে ১ মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। হালদা থেকে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালি জব্দ করা হয়। উক্ত বালি নিলামে ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হয়। এতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। উপজেলা প্রশাসন উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহায়তায় হাটহাজারী পৌরসভাস্থ ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও এশিয়ান পেপার মিলের বর্জ্য হালদায় পড়ে নদী দূষণ করায় এসব স্থাপনা বন্ধ করে দেয়া হয়। এসব স্থাপনা চালু করতে দূষণমুক্ত মেসিনারি সংযোজন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেয়া হয়। ২০১৯ সালে পৌরসভার মরা খাল রেলওয়ে ওয়াগন দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ওয়াগনের দূষিত বর্জ্য যাতে হালদায় না পড়ে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন এ খালের আড়াই কিলোমিটার জায়গায় ১২টি স্থানে বাঁধ দিয়ে দূষিত বর্জ্য অপসারণ করে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া কামালপাড়া খালের বর্জ্য যাতে হালদায় না পড়ে সেজন্য খালে লোহার দিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। প্রতিনিয়ত এ খালের বর্জ্য অপসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। হালদায় মাছের মজুদ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময় মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়। এমনকি হালদার ডিম থেকে উৎপাদিত রেনু স্থানীয় গড়দুয়ারা ইউনিয়নের একটি পুকুরে সামান্য বড় করে নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে। ডিম আহরণকারীরা যাতে সঠিকভাবে রেনু পোনা উৎপাদন করতে পারে সেজন্য হালদার পাড়ে সরকারি হ্যাচারি রক্ষনাবেক্ষণ করে প্রস্তুত রাখা হয়। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বছর নদীর দুই পাড়ে ১৩০ অত্যাধুনিক মাটির কুয়া স্থাপন করা হয়। হালদা সুরক্ষায় গত মার্চে মদুনাঘাট থেকে আমতুয়া পর্যন্ত নদী তদারকি করতে ৮ টি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩৬০ ডিগ্রি ২ কিলোমিটার এলাকার দৃশ্য ধারণ করতে সিসিটিবি ক্যামরা স্থাপন করা হয়। নদীর সুষ্ঠু তদারকিতে ইতোমধ্যে উত্তর মার্দাশা ইউনিয়নের রামদাস মুন্সিরহাটে নৌ-পুলিশের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। নদীর সার্বিক অবস্থা সার্বক্ষণিক তদারকিতে হালদার সুবিধাজনক স্থানে নৌ-থানা প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। নৌ-থানার সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে গত এপ্রিলে নৌ-পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম, এসপি মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া হালদা পরিদর্শন করেছেন বলে সদরঘাট নৌ থানার ওসি মিজানুর নিশ্চিত করেছেন।