হারে শুরু, হারে শেষ

ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করে ফিরছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৫ নভেম্বর, ২০২১ at ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

গত আগস্টের কথা। বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সাতজনকে ছাড়াই বাংলাদেশ সফরে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া দল। আর সে দলকে পাঁচ ম্যাচের টি- টোয়েন্টি সিরিজে ৪-১ ব্যবধানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে। সতীর্থদের সে হার যেন এতদিন ধরে জ্বালা দিচ্ছিল ফিঞ্চ, ম্যাক্সওয়েল, স্মিথ, স্টয়নিসদের। তারা যেন সুযোগ খুঁজছিল কবে এই শোধ নেওয়া যায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চেই অসিরা পেয়ে গেল সে প্রতিশোধের সুযোগ। আর তাতেই যেন সব ঝাল মিটিয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া এক ম্যাচেই। না হয় এক ম্যাচে কেন এভাবে লজ্জায় ডুবাবে টাইগারদের। মাত্র ১৫ ওভারে বাংলাদেশকে ৭৩ রানে অল আউট করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। আর ৭৪ রান তুলে নিয়েছে মাত্র ৩৮ বলে। প্রতিশোধের নেশায় কতটা হিংস্র হয়ে উঠলে এক ইনিংসেই ম্যাচ শেষ করে দেয় কোনো প্রতিপক্ষ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বটা অন্য সবার জন্য আশির্বাদ হলেও বাংলাদেশের জন্য হয়ে এসেছিল অভিশাপের মত। কারণ এই পর্বেই বাংলাদেশের ক্রিকেটে সবচাইতে বেশি লজ্জাকে সঙ্গী করতে হয়েছে। টানা পাঁচ ম্যাচে হার, টানা দুই ম্যাচে শতরানের নিচে অল আউট, সবচাইতে কম ওভারে অল আউট, সবচাইতে কম বলে প্রতিপক্ষের জয় তুলে নেওয়া। অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপে গেলেও শেষটা হয়েছে হতাশা আর লজ্জার চাদরে মুড়িয়ে। এমনিতেই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতা তেমন নেই। তাই বলে এতটা হতাশা উপহার দেবে সেটা বোধহয় বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমিরা কখনোই ভাবেনি। বরাবরই শেষটা রাঙানোর একটা প্রত্যশা থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের। কিন্তু বরাবরই সে প্রত্যাশায় জল ঢেলে দেয় ক্রিকেটাররা। গতকালও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আরো একটি লজ্জার হার দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শেষ করল বাংলাদেশ। দুই ইনিংস মিলিয়ে ১২৮ বলের ম্যাচে বাংলাদেশ হেরেছে ৮ উইকেটে।
বল বাকি থাকার দিক দিয়ে এটাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। ২০১০ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ৭০ বল বাকি থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহরা হারলো ৮২ বল বাকি থাকতে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টেস্ট খেলুড়ে দেশের এটাই সবচেয়ে বড় হার। এই সংস্করণে বাংলাদেশের এর চেয়ে কম রান আছে একটিই। ২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০। এ সব সংখ্যাও ফুটিয়ে তুলছে কতটা বিব্রতকর ছিল বাংলাদেশের পারফরম্যান্স। ব্যাটিং উইকেটে জঘন্য ব্যাটিং প্রদর্শনীতে দলটি একটুও দেখাতে পারেনি লড়াইয়ের মানসিকতা।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে বাংলাদেশের ভোগান্তির শুরু প্রথম ওভার থেকেই। মিচেল স্টার্কের করা ইনিংসের তৃতীয় বলেই বোল্ড হয়ে গেলেন লিটন দাশ। লিটনের গোল্ডেন ডাকের ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতে সৌম্য সরকারের বিদায়। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে হেজেলউডের বলে বোল্ড হলেন সৌম্য সরকার। প্রতি ওভারে উইকেট হারানোর ধারা অব্যাহত রাখলেন মুশফিকও। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে মুশফিকুর রহিমকে বিদায় করেন ম্যাক্সওয়েল। তিনি ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। ১০ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধের চেষ্টা করে নাঈম শেখ ও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে। কিন্তু তাদেরকে এগুতে দিলেন না হেজেলউড। ২২ রানের জুটি ভাঙ্গে ১৬ বলে ১৭ রান করা নাইমের বিদায়ে। পাওয়ার প্লের পর আক্রমণে এসে প্রথম বলেই আফিফকে বিদায় করেন এডাম জ্যাম্পা। এরপর এই লেগ স্পিনারই করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে শামীম হোসেনের ২৯ রানের জুটি ভাঙেন তিনি। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শামীম। একটি করে ছক্কা ও চারের সাহায্যে ১৮ বলে ১৯ রান করেন তিনি। পরের বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন মেহেদি হাসান। রানের খাতা খোলা হয়নি তারও। এক প্রান্ত আগলে রাখা মাহমুদউল্লাহকে বিদায় করেন স্টার্ক। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১৮ বলে ১৬ রান করেন টাইগার দলপতি। ১৫ তম ওভারে আক্রমণে ফিরে হ্যাটট্রিক হয়েই যেত জ্যাম্পার। কিন্তু তাসকিন আহমেদের ক্যাচ নিতে পারেননি ম্যাথু ওয়েড। সেই ওভারেই মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলামকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে ৭৩ রানে থামিয়ে দেন জ্যাম্পা। সঙ্গে গড়েন বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড। বাংলাদেশ শেষ ৫ উইকেট হারায় কেবল ১১ রানে। শঙ্কা জেগেছিল নিজেদের সর্বনিম্ন রানে গুটিয়ে যাওয়ার। তবে কোনোমতে সে লজ্জা থেকে রক্ষা পেয়েছে বাংলাদেশ। ৪ ওভারে ১৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন এডাম জ্যাম্পা। ২০১৬ আসরে পাকিস্তানের বিপক্ষে জেমস ফকনারের ২৭ রান দিয়ে পাঁচটি ছিল আগের সেরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই প্রথম পাঁচ উইকেট পেলেন জ্যাম্পা। তার আগের সেরা ছিল ১৪ রানে ৩ উইকেট।
লক্ষ্য মাত্র ৭৪ রানের হলেও অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা দেখে মনে হচ্ছিল তারা যেন দুইশ রান তাড়া করতে নেমেছে। সেটারও অবশ্য একটা কারণ রয়েছে। রান রেট বাড়ানোর একটি প্রক্রিয়া। শুরু থেকেই ফিঞ্চ এবং ওয়ার্নার ছিলেন ভয়ংকর। অবশ্য ফিঞ্চ একটু বেশিই মেরেছে। দুজন ৫ ওভারে ৫৮ রান তুলে বিচ্ছিন্ন হন। তাসকিনের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাত্র ২০ বলে ২টি চার এবং ৪টি ছক্কার সাহায্যে ফিরেন ৪০ রান করে। অথচ ১৪ রানেই ফিরতে পারতো ফিঞ্চ। নিজের প্রথম ওভারের শেষ বলে নিজেই ক্যাচ ছাড়েন মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত তার উপর দিয়েই ঝড়টা বেশি গেছে। ২ ওভারে বাঁহাতি এই পেসার দিয়েছেন ৩২ রান। ১৯ রানে আবার ফিরতে পারতেন ফিঞ্চ। এবার তাসকিনের বলে ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য সরকার। আর সে সুযোগটা বেশ ভালই কাজে লাগিয়েছেন ফিঞ্চ। তাসকিনের বলে ফিঞ্চ ফিরে আসার পরের ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে বোল্ড করেন শরিফুল ইসলাম। তিনি করেন ১৪ বলে ১৮ রান। ম্যাক্সওয়েলকে নিয়ে বাকিটা সারেন মিচেল মার্শ। ৫ বলে ১৬ রানে অপরাজিত ছিলেন মার্শ। এই ম্যাচ থেকে নিজেদের প্রয়োজনীয় সবকিছু সেরে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। রান রেটেও এক লাফে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। এই ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়ার রান রেট ছিল -০.৬২৭। এক ম্যাচেই তা বেড়ে হয়েছে+১.০৩১।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙ্গুনিয়ায় এক চেয়ারম্যান ও তিন সদস্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল
পরবর্তী নিবন্ধঅননুমোদিত বহুতল ভবন দুর্ঘটনা বাড়াচ্ছে