না পাকিস্তানের বিপক্ষেও জেতা হলো না। এবারের বিশ্বকাপের অন্যতম দুই বিধ্বস্ত দল বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। তাই আশা ছিল বিধ্বস্ত পাকিস্তানকে হারিয়ে অন্তত দ্বিতীয় জয়টি পাওয়া হবে। কিন্তু সেটাও হলো না। উল্টো বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকেই বিধ্বস্ত করে দিয়েছে। আগের চার ম্যাচে হারের সব ঝাল যেন বাংলাদেশ দলের উপর দিয়েই মিটিয়ে নিল বাবর আজমের দল। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও একেবারে ধারাবাহিক ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। আগে ব্যাট করতে নেমে দলের ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিং শুরু থেকেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়তে থাকে। লিটন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহরা নিজেদের ব্যাটিংটা করলেও তা দলের জন্য কোনো কাজে আসেনি। বরাবরের মতো এই ম্যাচেও দলের দায়িত্ব নিতে পারলেন না এসব সিনিয়র ক্রিকেটাররা। আর জুনিয়ররাতো ব্যর্থতার বৃত্তেই বন্দি হয়ে রইল। ব্যাটারদের দায়িত্ব জ্ঞানহীন ব্যাটিং এর বোলারদের নখদন্তহীন বোলিং আরো একটি সহজ পরাজয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশের। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে সব ধরনের অনুপ্রেরণা দেওয়া সত্ত্বেও কোনো মতেই উজ্জীবিত করা যাচ্ছে না বাংলাদেশ দলকে। এই ম্যাচের আগে ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতিসহ একাধিক পরিচালক মাঠে দলের অনুশীলনে হাজির থেকে চেষ্টা করেছেন দলকে অনুপ্রাণিত করতে। কিন্তু সে সব কোন কাজে আসল না। হারের বৃত্ত থেকে বের করা যাচ্ছে না। টানা ষষ্ঠ পরাজয় বরণ করতে হলো সাকিবদের। এমন ব্যর্থতা সবশেষ কবে এসেছিল বাংলাদেশ দলের সামনে সেটা মনে করাটা বেশ কঠিন। বাংলাদেশের ব্যাটার আর বোলাররা যে পথে হেঁটেছে সে পথে হাঁটেনি পাকিস্তানের ব্যাটার আর বোলাররা। পাকিস্তানের তিন পেসার শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ আর মোহাম্মদ ওয়াসিম বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। আর ব্যাট হাতে বাংলাদেশের বোলারদের কচু কাটা করেছেন ফখর জামান এবং আবদুল্লাহ শফিক। পাকিস্তান সহজে এই ম্যাচটা শুধু জিতেই নেয়নি। সে সাথে নিজেদের রান রেটও বাড়িয়ে নিয়েছে। সাকিব, মুশফিক, লিটন, শান্তদের যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ফখর জামান, আবুদল্লাহ শফিক কিংবা রিজওয়ান কিভাবে ব্যাটিংটা করতে হয়। একইভাবে শাহীনশাহ আফ্রিদি, হারিস রউফ আর মোহাম্মদ ওয়াসিমরাও যেন শেখালেন মোস্তাফিজ, শরীফুল, মিরাজ, সাকিবদের বোলিংটা কিভাবে করতে হয়। ব্যর্থতার চোরাবালিতে ডুবতে থাকা বাংলাদেশ কবে যে আবার আলোর সন্ধান পাবে সে ভাবনাটা না হয় তোলাই থাকল। আপাতত পরের দুই ম্যাচে কি পরিণতি হয় সেটাই দেখার অপেক্ষা। পাকিস্তান ম্যাচটি জিতে নিয়েছে ১০৬ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখে। এই জয়ের ফলে পয়েন্ট তালিকার ৫ নম্বারে উঠে গেছে পাকিস্তান।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই জোড়া ধাক্কা খায়। নিজের এবং ইনিংসের প্রথম ওভারেই তানজিদ তামিমকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। নিজের পরের ওভারে আবার আফ্রিদির আঘাত। এবার তার শিকার নাজমুল হোসেন শান্ত। সে ধাক্কা না সামলাতেই হারিস রউফের আঘাতে ফিরলেন মুশফিকুর রহিম। ২৩ রানে ৩ উইকেট নেই টাইগারদের। এরপর লিটন দাশকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা মাহমুদউল্লাহর। দুজন মিলে যোগ করেন ৭৯ রান। শুরু থেকেই ভালো খেলতে থাকা লিটন নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে পারলেন না। ৪৫ রান করে ফিরলেন ইফতেখারের বলে। এরপর মাহমুদউল্লাহর সাথে যোগ দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দুজন আবার যেন নতুন করে শুরু করছিলেন। কিন্তু জুটিটা লম্বা হলো না। মাত্র ২৮ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন দুজন। তবে নিজের হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মাহমুদউল্লাহ। ৭০ বলে ৬টি চার এবং একটি ছক্কার সাহায্যে ৫৬ রান করে শাহীন শাহ আফ্রিদির তৃতীয় শিখার হয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। আবার চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচ পর দলে সুযোগ পাওয়া তাওহিদ হৃদয় পারলেন না সুযোগটাকে কাজে লাগাতে। ওসামা মিরের বলে খোঁচা দিতে গিয়ে স্লিপে ধরা পড়লেন হৃদয়। এরপর মিরাজের সাথে কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। কিন্তু এবার অধিনায়কও ফিরলেন হারিস রউফের বলে। নিজের হাফ সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে পারলেন না তিনিও। ফিরেছেন ৬৪ বলে ৪৩ রান করে। এরপর দ্রুতই ফিরেন মিরাজও। পরপর দুই ওভারে তিন উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪ রানে থামিয়ে দেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। তিনটিউ ছিল বোল্ড। মিরাজ ফিরেন ৩০ বলে ২৫ রান করে।
বাকিদের কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। পাকিস্তানের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি এবং মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র। ২টি উইকেট নিয়েছেন হারিস রউফ। ২০৫ রানের জয়ের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের দুই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিক এবং ফখর জামান মিলে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান। পাকিস্তানের এই দুই ওপেনার যোগ করেন ১২৮ রান। মেহেদী হাসান মিরাজ এসে এই জুটি ভেঙ্গেছেন বটে। তবে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ৬৯ বলে ৬৮ রান করা আবদুল্লাহ শফিককে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন মিরাজ। এরপর অধিনায়ক বাবর আজম যোগ দেন ফখর জামানের সাথে। তবে তিনি বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফিরেছেন ৯ রান করে। এরপর মিরাজ ফিরিয়েছেন ফখর জামানকেও। ৭৪ বলে ৮১ রান করা ফখর জামান ফিরেছেন তাওহিদ হৃদয়কে ক্যাচ দিয়ে। এরপর রিজওয়ান আর ইফতেখার মিলে ৩৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। রিজওয়ান অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ২৬ রান করে। আর ইফতেখার অপরাজিত ছিলেন ১৫ বলে ১৭ রান করে। বাংলাদেশের বোলারদের হতাশার দিনে সফল কেবল মেহেদী হাসান মিরাজ। পাকিস্তানের তিনটি উইকেটই তিনি নিয়েছেন। তবে তার জন্য ৯ ওভারে দিয়েছেন ৬০ রান।