দশ বছর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হারিয়ে যায় মানসিক প্রতিবন্ধী দাখিল পরীক্ষার্থী ছাইফা। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে না পেয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু পটিয়া উপজেলা গাউসিয়া কমিটি মানবিক টিমের আন্তরিক সহযোগিতায় পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন সাইফা।
জানা যায়, ২০১০ সালে মাদ্রাসার হোস্টেলে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন সাইফা আকতার (২৫)। এরপর পরিবারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে পরিবারের অজান্তে হাসপাতাল থেকে নিরুদ্দেশ হয় সাইফা। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন জায়গায় থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে পটিয়া উপজেলার ভাটিখাইন হজরত মির্জা আলী লেদু শাহ দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন এলাকায় সড়কের পাশে পড়ে থাকতেন। শারীরিকভাবেও অনেকটা অক্ষম হয়ে পড়েন তিনি। এলাকার মানুষ কিছু দিলে খেতেন। কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলেও কোনো কথা বলতে পারতেন না সাইফা। কিছু দিন আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে এলাকার লোকজন স্থানীয় সমাজসেবক নবী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সেলিম নবীকে বিষয়টি জানান। তিনি বিষয়টি পটিয়া উপজেলা গাউসিয়া কমিটি মানবিক টিমের প্রধান মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যানকে অবহিত করেন।
খবর পেয়ে গাউসিয়া কমিটি মানবিক টিমের মহিলা সদস্যরা গত ২৮ মার্চ রাতে সাইফাকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। কিন্তু তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় অন্য রোগীদের সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করেনি। তবে গাউসিয়া কমিটির হেফাজতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে চিকিৎসা সেবা দিতে থাকে। পরবর্তীতে সেলিম নবীকে বিষয়টি জানানো হলে তিনি ওই রোগীর চিকিৎসা সেবার জন্য হাসপাতালের বিপরীতে তার মার্কেটে একটি খালি রুমের ব্যবস্থা করে দেন।
উপজেলা গাউসিয়া কমিটি মানবিক টিমের সচিব মাওলানা মো. ইছহাক আলকাদেরী জানান, আমাদের মানবিক টিমের মহিলা সদস্যরা মিলে আমরা তাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলি। শনিবার বিকেলে মেয়েটির হঠাৎ জ্ঞান ফিরলে সে আমাদের টিমের কাছে তার বাবার নাম, ভাইয়ের নাম ও ঠিকানা একটি খাতায় লিখে প্রকাশ করে। এই লেখার সূত্র ধরে তার ঠিকানা জানা যায়। সে সাতকানিয়া উপজেলার বারদোনা গ্রামের অধিবাসী চট্টগ্রাম এমইএস কলেজের সাবেক অধ্যাপক মরহুম মোহাম্মদ ইস্কান্দরের মেয়ে। আমাদের সাতকানিয়া উপজেলা মানবিক টিমের মাধ্যমে যোগাযোগ করে সাইফার পরিবারকে বিষয়টি জানানো হয়। খবর পেয়ে গত রোববার সকালে পটিয়ায় ছুঁটে আসেন সাইফার মা শাকেরা বেগম, দুই ভাই তারেক আব্বাস ও হোসাইন মুহাম্মদ এরশাদ। তারা সাইফাকে দেখেই শনাক্ত করেন এ তাদেরই হারিয়ে যাওয়া বোন। এ দিন দুপুরে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল মামুন ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রাকিবুল ইসলামের উপস্থিতিতে সাইফাকে পরিবারের হাতে তুলে দেয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাউসিয়া কমিটি মানবিক টিমের প্রধান মাহবুবুল আলম চেয়ারম্যান, সচিব মাওলানা মো. ইছহাক আলকাদেরী, আবুল কাসেমসহ সংগঠনের সদস্যরা।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজের পর থেকে পরিবারের পক্ষ থেকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তারা সাইফার সন্ধান পাননি। এতে পরিবার এক প্রকার আশা ছেড়ে দিয়েছিল যে তাদের সন্তানকে হয়ত তারা আর ফিরে পাবেন না।
সাইফার ভাই হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেন, গাউছিয়া কমিটির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের হারিয়ে যাওয়া বোনকে চিকিৎসার পাশাপাশি আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। মানবিক এ সংগঠনের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল মামুন বলেন, গাউছিয়া কমিটির এমন মানবিক কাজের জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। মানবিক কাজে এ সংগঠন অতীতের ন্যায় আরো বেশি কাজ করবে আশা করি।