হারিয়ে গেছে প্রাচীন বুড়া-বুড়িদের মুখে শোনা গ্রাম্য বচন

মারুফ শাহ চৌধুরী | বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

ষাট দশকের গ্রাম বাংলা। দাদা দাদীরা নাতিদের নিয়ে শোনাতো কত সাবধান বাণী কত গল্পকথা। একবার আমাদের বাড়িতে হাতি এসেছিল। আমরা ছেলেবেলায় এই অদ্ভুত বড় জীব দেখে আমাদের চোখ ছানাবড়া।

গ্রামে পুর মহিলারা দেখছেন হাতিটাকে অবাক বিস্ময়ে। মাহুত তারপর বসে আছে। কেমন করে গ্রামের কলাগাছ সুড় দিয়ে বেঁকিয়ে নিয়ে অনেক উপরে মুখের মধ্যে নিয়ে নিল। হাতির এত বড় লম্বা নাক। দাদীমা বলল হাতি নাকি আল্লাহকে সিজদা দেওয়ার সময় অহংকারে তার নাকটি মাটিতে লাগত না। অনেকবার বলার পরও মাটিতে না লাগার ধরুন রাগ করে তার নাকটি লম্বা করে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে ছোটকালে যখন নামাজ পড়তাম তখন আমার নাকটি মাটির মধ্যে জোরে চেপে ধরতাম যেন হাতির মত নাকটি লম্বা না হয়ে যায়। শৈশবে নানাবাড়ি যাওয়া আমাদের বাংলাদেশ একটি আনন্দময় ব্যাপার। নানা বাড়ি গিয়ে আনন্দ করেনি এমন শিশু বাংলাদেশের খুঁজে পাওয়া যাবে না। নানী আমাদের মুরগির কলিজা খেতে দিতেন না। বলতেন মুরগির কলিজা খেলে নাতিরা পুলিশ দেখলে মোরগ মুরগি যেমন ভয় পেলে এক প্রকার কাঁপানো চিৎকার দিয়ে উঠে নাতিরা নাকি সেরকম হয়ে যাবে। সেজন্য আমাদের কলিজা খেতে দিতেন না। সবচেয়ে আশ্চর্য লাগতো গ্রামের পরিষ্কার আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ যখন উঠতো। চান্দের দাগের মধ্যে দাদি আমাদের দেখাতেন একটি বুড়ি কীভাবে সুতা কাটছেন। আমরা ছোটরা সেই নীল আকাশে পূর্ণিমার চাঁদের মধ্যে বুড়িকে খোঁজার চেষ্টা করতাম। ভাই কোথায় গেল সেই সোনালী দিন। চন্দ্রগ্রহণ হলেই দাদি আমাদের কিছুই খেতে দিতেন না। কোন সময় নাকি এক পয়সা ধার করছিল চাঁদ মামা। সেই ধারে টাকা নাকি সময় মত পরিশোধ করে নাই। এজন্যই চন্দ্রগ্রহণ হয়। পূর্ণগ্রহণের সময় চাঁদ যখন চলে যেত, কিছুক্ষণের জন্য অন্ধকার হয়ে যেত গ্রাম বাংলা। তখন আফসোস শুনতাম তাদের মুখে। মাত্র একটি পয়সার জন্য এই অবস্থা। বর্ষাকালে বাংলাদেশে বৃষ্টি একটি নিত্য নৈব্যক্তিক ব্যাপার। আমাদের পোড়া ভাত খেতে দিত না বিয়ের দিন বৃষ্টি হবে। এই কখন বিয়ে হবে, শুধুমাত্র বিয়ের দিন বৃষ্টি হবে। এজন্য আমরা ছেলেবেলায় পোড়া ভাত খেতে পারেনি। ছেলে মেয়ে আমারা বাড়িতে বসতে পারতাম না, বালিশে বসলে পাছায় খোস পাঁচড়া হবে, সেজন্য বালিশে বসতাম না। এরকম কত প্রাচীন বচন আমাদের গ্রাম্য বাংলায় লুকিয়ে রয়েছে বা হারিয়ে গেছে যা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পল্লী সাহিত্য বলে বলে উল্লেখ করেছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসই
পরবর্তী নিবন্ধঅব্যক্ত অনুভূতি