হামজা-সোহেলের গোলে ভুটানকে হারালো বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৫:৩৩ পূর্বাহ্ণ

৫৫ মাস পর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে প্রথম ম্যাচ। হামজা চৌধুরীর দেশের মাটিতে প্রথম ম্যাচ। আরেক প্রবাসী ফাহমিদুলের অভিষেক। সব মিলিয়ে আনন্দ আর উৎসবে যেন একেকার ভুটানের বিপক্ষে ফিফা ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি। হামজা চৌধুরীর প্রথম গোল আর সোহেল রানার দৃষ্টিনন্দন এক গোলে ভুটানকে ২০ গোলে হারিয়ে আগামী ১০ জুন এশিয়া কাপের বাছাই পর্বের সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ম্যাচের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করল বাংলাদেশ।

নিজেদের মাঠে হামজাফাহমিদুলদের ম্যাচ দেখতে রীতিমত উৎসবে পরিণত হয়েছিল ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম। গ্যালারি ভর্তি দর্শকদের হতাশ হতে হয়নি। হামজাসোহেল রানার দ্যুতিতে বাংলাদেশ পেল স্বস্তির এক জয়। যদিও ভুটানের বিপক্ষে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে কোন হার নেই। নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে আরো উঁচুতে নিয়ে গেল বাংলাদেশ। তবে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের চাইতেও হামজাফাহমিদুলদের নিয়ে বাংলাদেশ দল কেমন হয় সেটা পরখ করাই ছিল স্বাগদিকদের লক্ষ্য। একই সাথে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একাধিক ফুটবলারকে খেলিয়ে বাংলাদেশ দলের কোচ যেন একই সাথে নিজের সেরা কম্বিনেশনটা তৈরি করে নিলেন।

৯০ মিনিটের খেলায় পুরোটা সময় বাংলাদেশের দখলেই ছিল বল। হামজা চৌধুরী আগেই নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু সেবার দলে জায়গা না পাওয়া ফাহমিদুলকে পরখ করাটাও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। গতকালের ম্যাচে ফাহমিদুল গোল পাননি বটে। তবে গতি আর ক্ষিপ্রতায় দিয়েছেন সামর্থ্যের ইঙ্গিত। প্রবাসীদের পাশাপাশি দেশের ফুটবলাররাও যেন নিজেদের মেলে ধরলেন দারুণভাবে। যার ফল সহজ জয়।

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলতে থাকে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মাঝমাঠ থেকে হামজা যেন নিয়ন্ত্রণ করছিলেন পুরো ম্যাচ। এগিয়ে যেতে সময়ও নেয়নি বাংলাদেশ। তাও আবার সেই হামজা চৌধুরীর গোলে। ম্যাচের মাত্র ছয় মিনিট। ডানপ্রান্ত থেকে জামাল ভূঁইয়ার কর্নার। উড়ে আসা বলে দারুণ হেড হামজার। বল ঠিকানা খুঁজে নেয় জালে। দেশের মাটিতে অভিষেকেই দেশের প্রথম গোল হামজার। অবশ্য ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই সুযোগ তৈরি হয়েছিল। ডান প্রান্ত থেকে রাকিব হোসেন ডিবঙে ঢুকে বল বাড়ান কাজেম শাহ কিরমানির উদ্দেশ্যে। কিন্তু বাড়ানো বলে জামাল ঠিকঠাক শট নিতে পারেননি। দুই মিনিট পর বাঁ দিক থেকে ফাহমিদুল ইসলামের পাসে বল পান জামাল। এবার তিনি কাটব্যাক করেন হামজার দিকে। তবে তার শট ব্লক করেন ভুটানি ডিফেন্ডার। গোলের পর কিছুটা গতি হারায় ম্যাচ। প্রায় ২৫ মিনিট দুই দলের কারও উল্লেখযোগ্য সুযোগ তৈরি হয়নি। তবে ৩০ মিনিটে ফের জেগে ওঠে স্বাগতিকরা। বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে ওঠেন ফাহামিদুল। তবে তার শট ফিরিয়ে দেন ভুটানের গোলরক্ষক গেলস্টেন জাংপো। ফিরতি বলে জামালের শটও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরের মিনিটেই ফাহমিদুলের আরেকটি শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকায় ভুটান। ৩৩ মিনিটে রাকিব হোসেন গোলরক্ষককে কাটিয়ে পাস দিতে গিয়ে সুযোগ হাতছাড়া করেন। তিন মিনিট পর তাজউদ্দিনের ক্রসে গোলের সামনে জামাল শট নিতে ব্যর্থ হন। এরপর রাকিব ও ফাহমিদুলের আরও দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে কাজেমের ক্রসে ফাহমিদুলের হেড বারের বাইরে চলে গেলে ১০ গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে হামজা চৌধুরী এবং অধিনায়ক জামাল ভুইয়াকে বিশ্রাম দেন কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তিনজনকে পরিবর্তন করে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে চার মিনিটের মধ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করে বাংলাদেশ। হামজা, জামাল ও কাজেম শাহকে বসিয়ে ক্যাবরেরা মাঠে নামিয়েছেন মোরসালিন, রিদয় ও ইব্রাহিমকে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় গোল করেছেন সোহেল রানা। অভিজ্ঞ এই মিডফিল্ডার প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত শটে গোল করে দলকে ২০ গোলে এগিয়ে দেন। এর পর ব্যবধান ৩০ করার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। অনেকটা ফাঁকায় বল পেয়ে গিয়েছিলেন রাকিব হোসেন। তবে তিনি বলপায়ে সংযোগ ঘটাতে পারেননি। ফলে আরো একবার হতাশায় পুড়তে হয় স্বাগতিকদের। ৫৯ মিনিটে আরও দুটি পরিবর্তন আনেন কাবরেরা। ফাহামিদুল ও রাকিবকে তুলে ফয়সাল আহমেদ ফাহিম ও আল আমিনকে নামান তিনি। এ ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষা ফুরালো আল আমিনের। গত মার্চে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের দলে থাকলেও খেলার সুযোগ পাননি এই ফরোয়ার্ড। ৭২ মিনিটে ব্যবধান কমানোর সুযোগ পেয়েছিল ভুটান। ফ্রি কিক আটকে দেন বাংলাদেশ গোল রক্ষক। ৮৬ মিনিটে আল আমিনের ক্রস হেডে ক্লিয়ার করতে চেয়েছিলেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার। কিন্তু বল তার সামনে থাকা মোরসালিনের গায়ে লেগে বাইরে চলে গেলে ব্যবধান বাড়ানোর আরো একটি সুযোগ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের। শেষ দিকে ব্যবধান বাড়ানোর আরো একটি ভালো সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু পর্যাপ্ত সময়ে পেলেও ইব্রাহিম পারেননি ভুটান গোলকিপারকে পরাস্ত করতে। দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই দারুণ সেভে বাংলাদেশকে গোল হজম করা থেকে রক্ষা করেন গোল রক্ষক মিতুল। সতীর্থের ক্রসে জিগমে নামগায়েলের কাছের পোস্টে নেওয়া শট দারুণ ক্ষিপ্রতায় সেভ করেন এই গোলরক্ষক। জিগমের ফিরতি শটও যায় বাইরে। এরপর শেষের বাঁশি বাজতেই জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে গ্যালারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ মিছিলে হামলা, আহত ৩
পরবর্তী নিবন্ধট্রেন ও বাস স্ট্যান্ডে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, সড়কে যানজট