বাংলাদেশের ফুটবলে যেন নতুন হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সে হাওয়ার নাম অবশ্যই হামজা দেওয়ান চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের লেস্টার সিটির এই খেলোয়াড় খেলবে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। যা নিয়ে রীতিমত আলোচনার ঝড় বইছে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলে।
তারকা ফুটবলার হামজা চৌধুরীকে নিয়ে আজ নতুন এক মিশন শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। যে মিশনে প্রতিপক্ষ ভারত। এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডের ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে আজ শিলংয়ে। এই ম্যাচে বাংলাদেশ অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় শক্তিশালী দল হয়ে মাঠে নামবে একজন হামজা চৌধুরীর কল্যাণে।
যদিও এই ম্যাচটি নিয়ে কতটা সিরিয়াস ভারত সেটা প্রমাণ করে যখন তারা অবসর ভাঙ্গিয়ে সুনিল ছেত্রিকে আবার মাঠে ফেরায়। যদিও এই ম্যাচের আগে ভারতের সাথে নিজেদের ‘বড় পার্থক্য’ দেখছেন না বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুইয়া। বরং তিনি সবসময়ই আত্মবিশ্বাসী। ভারত ম্যাচ সামনে রেখে এবার যেন আরও বেশি আত্মবিশ্বাস ঝরল তার কণ্ঠে। দল নিয়ে, ভারত ম্যাচের লক্ষ্য জানাতে গিয়ে দৃঢ় কণ্ঠে বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ভারতের সাথে নিজেদের ‘বড় পার্থক্য’ দেখেন না তিনি। তবে পরিসংখ্যান বলে ভিন্ন কথা, সে সাথে র্যাংকিংও। কারণ ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে ভারত। ভারতের র্যাঙ্কিং ১২৬, বাংলাদেশ আছে ১৮৫তম স্থানে। হেড টু হেডেও ভারতের চেয়ে অনেক পিছিয়ে জামাল–তপুরা। দুই দলের ৩১ বারের সাক্ষাতে ১৬ ম্যাচেই জিতেছে সুনীল ছেত্রীরা। বাংলাদেশের জয় মাত্র তিনটিতে। ড্র হয়েছে ১২টি। ভারত বাংলাদেশের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এশিয়ান গেমসে। সেই ম্যাচে ৩–০ জিতেছিল ভারত। বাংলাদেশ তাদের প্রথম জয় পায় ১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর, দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে। সেবার লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জেতে ২–১ গোলে। সর্বশেষ ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমিফাইনালে ভারতকে হারানেরা কীর্তি দেখাতে পেরেছিল। তাছাড়া শেষ পাঁচ লড়াইয়ে ভারতের জয় মাত্র এক ম্যাচে। বাকি চারটি ড্র হয়েছে। এমন পরিসংখ্যান দেখলে যে কেউ হয়তো চিন্তা করবেন দুই দলের ম্যাচে এমন উত্তেজনা কিংবা সমানে সমানে লড়াইয়ের আভাস কেন। নানান কারণে এমনটি হয়ে আসছে। ভারত বেশি ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ সবসময় তাদের বিপক্ষে লড়াই করে আসছে। অনেক সময় অল্পের জন্য ড্র হয়েছে ম্যাচ।
তবে আজকের ম্যাচে কোন ড্র নয় জয়ই চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অধিনায়ক জামাল ভুইয়া বলেন, তিনি ভারতীয়দের হৃদয় ভাঙতে চান। সল্টলেকে সবশেষ দেখায় ১–১ ড্র করে কথা রেখেছিলেন জামাল। এবার আরো ভাল করতে চান তিনি। যার অর্থ পরিষ্কার। তা হলো জয় এবং কেবলই জয়।
যদিও শিলংয়ে পা রাখার পর থেকে নানা অসহযোগিতার মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে। তবে সবকিছু মাড়িয়ে কেবলই ম্যাচটির দিকে চোখ লাল–সবুজ জার্সিধারীদের। আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কেবল ভারত নয়, স্থানীয় দর্শকরাও। গ্যালারিতে সরব উপস্থিতি থাকবে তাদের। তবে এসব নিয়ে কোনো চাপ অনুভব করছেন না জামাল। তার ভাবনায় কেবলই একটি ম্যাচ এবং ৯০ মিনিটের খেলা। হামজা চৌধুরীর যোগ দেওয়াতে বাংলাদেশের শক্তি এবং বাকি ফুটবলারদের মনোবল সবই বেড়েছে সেটা একেবারেই সত্যি। আর হামজার মত এতবড় ফুটবলারের সাথে একসাথে খেরতে পারাটাকে স্মরণীয় করে রাখতেও যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ দলের অন্য ফুটবলাররা। এখন দেখার বিষয়–সে মনোবলকে কতটা কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ দল।