হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুর নেওয়া হচ্ছে

আজ দুপুরে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর

আজাদী ডেস্ক | সোমবার , ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৮ পূর্বাহ্ণ

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আজ সোমবার দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার কথা গতকাল রোববার রাতে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর। তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের অ্যাক্সিডেন্ট ইমার্জেন্সি বিভাগে নেওয়ার সব ধরনের ব্যবস্থা হয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নির্দেশে ওসমান হাদির ভাই ওমর বিন হাদিসহ উপদেষ্টা ও চিকিৎসকদের মধ্যে জরুরি কনফারেন্স কলের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেইসবুক পোস্টে জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে শুক্রবার থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদি। তার অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হয়নি বলে গতকাল মেডিকেল বোর্ডের তরফে জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, দুদিন ধরে হাদির উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার কয়েকটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেছে। গতকাল এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দলের পরামর্শে ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টাকে তা অবহিত করা হয়।

পরে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. জাফর এবং হাদির ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনার পর সিঙ্গাপুরে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে প্রধান উপদষ্টোর দপ্তরের ফেসবুকে পোস্টে জানানো হয়েছে।

এদিকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের সাংবাদিকদের বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের ভাইবোনেরা এবং তার পরিবার ধার করে আধা কোটি টাকায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছে। এক্ষেত্রে তারা সরকারের কোনো সহায়তা এখনো নেয়নি।

রাত ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ওসমান হাদির চিকিৎসা সংক্রান্ত সকল ব্যয় রাষ্ট্রীয়ভাবে বহন করা হবে। তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া সার্বক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

কনফারেন্স কলে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে হাদির সবশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, তিনি স্থিতিশীল এবং অপরিবর্তিত রয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, এ লক্ষ্যে (সিঙ্গাপুরে পাঠানোর) প্রয়োজনীয় মেডিকেল এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসক দল এবং ভ্রমণসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

অবস্থা এখনো সংকটময় : বিবিসি বাংলা জানায়, হাদির শারীরিক অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তবে কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যাওয়া তার দুই কিডনি আবার সচল হয়েছে। ফুসফুসের কার্যক্রমও অপরিবর্তিত রয়েছে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজের আবাসিক চিকিৎসক আবদুল আহাদ। তিনি জানান, ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আশঙ্কাজনক ও তার মস্তিষ্কের বিভিন্ন জায়গায় রক্ত জমাট বেধে আছে। ওসমান হাদির ব্রেনের ভেতরে এখনো বুলেটের একটি অংশ থেকে গেছে। এই অংশের অবস্থান ব্রেনের স্পর্শকাতর রক্তনালীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, একটা অংশ বের হয়ে গেছে। অপারেশনের সময় বুলেটের একটি শেল (কাভার) অংশ ডাক্তাররা বের করেছেন। তবে আরো একটি ছোট অংশ এখনো ব্রেইনের ভেতরে থেকে গেছে। ঝুঁকি বিবেচনা করে ডাক্তাররা যদি প্রয়োজন মনে করেন, এই অংশ বের করা সম্ভব তাহলে সেটা করবেন।

বাংলানিউজ জানায়, হাসপাতালের মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিকেল বোর্ডের দ্বিতীয় দিনের আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রয়োজন হলে রোগীকে দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মেডিকেল বোর্ড সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

১২ ডিসেম্বর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাদির জরুরি সার্জিক্যাল অপারেশন সম্পন্ন হয়। পরবর্তী জটিলতা ও নিবিড় পর্যবেক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কারণে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে স্থানান্তর করা হয়।

মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে তার মস্তিষ্কের ফোলা আরো বেড়েছে, যা চিকিৎসকদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ। যদিও ফুসফুস ও কিডনির কিছু কার্যকারিতা আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে ব্রেন স্টেমে আঘাতজনিত জটিলতার কারণে সার্বিক অবস্থা এখনো সংকটময়।

জুলাই আন্দোলনের সোচ্চার নেতাদের একজন হাদি ঢাকা৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন। শুক্রবার জুমার নামাজে একটি মসজিদে প্রচারণার পর রিকশায় করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাওয়ার পথে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে তার মাথায় একটি গুলি করা হয়। দ্রুত তাকে সহকর্মীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে গুরুতর অবস্থায় সেখান থেকে রাতে তাকে বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশ্রদ্ধার ফুল, মোমের আলোয় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ
পরবর্তী নিবন্ধনির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই, নির্বাচন সময়মত হবে