হাতি শাবকের মৃত্যু আমাদের গাফিলতিতেই জয়া

| বৃহস্পতিবার , ২৫ মে, ২০২৩ at ৬:৪৩ পূর্বাহ্ণ

এক সপ্তাহ পরও ঢাকার উত্তরায় ট্রেনের ধাক্কায় হাতি শাবকের মৃত্যুর ঘটনা ভুলতে পারছেন না অভিনেত্রী জয়া আহসান। হাতির মৃত্যুর ঘটনায় মানুষকে দায়ী করে মঙ্গলবার এক ফেইসবুক পোস্টে ‘আক্ষেপ প্রকাশ’ করেছেন তিনি। জয়া আহসান লিখেছেন, এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, কিন্তু উত্তরায় বেঘোরে মারা পড়া হাতির বাচ্চাটার কথা মন থেকে কোনোভাবেই সরিয়ে দিতে পারছি না। সেই কিশোরীবেলা থেকে হাতি আমার মনোরম কল্পনার প্রাণী। রূপকথায়, মেঘের আকারে, অ্যানিমেশনে বন্ধু হিসেবে হাতিকে মনের রঙিন কল্পনার মধ্যে জায়গা দিতে দিতে আমরা বড় হয়েছি। খবর বিডিনিউজের।

তিনি লিখেন, এমন একটি আদুরে হাতির ছানা কী মর্মান্তিকভাবেই না মারা পড়ল গত ১৭ মে। উত্তরায় রেললাইনের পাশে মা হাতির সঙ্গে ছানাটিও কলাগাছ খাচ্ছিল। এমন সময় ট্রেন এসে পড়ে। ট্রেনের চালক কাওছার হোসেন বলেছেন, একশ মিটার দূরে থাকতে হাতিটি তাদের নজরে আসে। তখন তারা হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন থামানোর চেষ্টা করেন। ট্রেন থামতে দুইশ থেকে তিনশ মিটার জায়গা লাগে। ফলে দুর্ঘটনাটি এড়ানো যায়নি।

হুইসেলের শব্দে হাতির শাবকটি ভয় পেয়ে দৌড় দিতে শুরু করে। কিন্তু যন্ত্রসভ্যতার আইনকানুন বেচারা জানবে কোত্থেকে সে। দৌড়াতে শুরু করে রেললাইনেরই ওপর দিয়ে। ট্রেন ওর ওপরে এসে পড়ে। ওকে হিঁচড়ে নিয়ে যায় বহুদূর পর্যন্ত। শহরে অচেনা এই আগন্তুক লাশ হয়ে যায়।

১৭ মে দুপুরে উত্তরার আবদুল্লাহপুরের কোটবাড়ি রেলগেইট এলাকায় হাতিটিকে ধাক্কা দেয় ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস ট্রেন।

বন্যপ্রাণী রেললাইনে কেন? এমন প্রশ্ন তুলে জয়া লিখেছেন, যার ঘুরে বেড়ানোর কথা অরণ্যের সবুজে, ওর আপন পৃথিবীতে, সে কেন ওর অচেনা লোকালয়ে আসবে। আইইউসিএন (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার) বলছে, এশিয়ান হাতি তাদের লাল তালিকায় থাকা মহাবিপদাপন্ন প্রাণী। যত্ন না নিলে ম্যামথের মতো একদিন হারিয়ে যাবে তারা। হাতি টিকে থাকবে শুধু গল্পগাঁথার অস্পষ্ট স্মৃতির ভেতরে। তেমন পৃথিবীই কি আমরা চাই?

সনদের সাপেক্ষে হাতি লালনপালনের নিয়ম থাকলেও কর্তৃপক্ষের তদারকি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জয়া। দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের কি মোটেই চোখে পড়ছে না, তারা কি ঠিকমতো সনদ দিচ্ছেন, সনদ দেওয়ার পর কি আদৌ খোঁজ করে দেখছেন, নিয়ম পালিত হচ্ছে কিনা; হচ্ছে যে না, পথে পথে আমাদের নিজ চোখে দেখা অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। আমাদের গাফিলতিই অবশেষে এই হাতির মৃত্যুর কারণ হলো। দুর্ঘটনা একটা ছুতো মাত্র।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে হাতি লালনপালনের ধারা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, মহাবিপদাপন্ন একটি প্রাণীকে কোনোভাবেই আমরা তাদের নিজস্ব পরিবেশের বাইরে এনে আটকে রাখতে পারি না। তাই এই আইনটি সংশোধন করতে হবে। এ ব্যাপারে আওয়াজ তোলার জন্য আমি দেশের প্রাণীবিদদের, প্রাণী অধিকারকর্মী আর সব সংবেদনশীল মানুষকে অনুরোধ করছি।

হাতির আবাস্থল ধ্বংসের মূলে মানুষই দায়ী বলে মনে করেন জয়া আহসান। তার ভাষ্য, মাঝেমধ্যেই আমরা হাতি আর মানুষের সংঘর্ষের কথা শুনছি। এর জের পড়ছে দুই দিকেই। মানুষও ক্ষতির শিকার হচ্ছে, মারা পড়ছে হাতিও। অথচ এর মূল দায় তো আমাদেরই। আমরা বন উজাড় করছি। হাতির বুনো চলাচলের পথ বন্ধ করে আবাস করছি। হাতির বেঁচে থাকার কোনো জায়গাই অবশিষ্ট রাখছি না। পৃথিবীর বিচিত্র প্রাণসত্তার রঙিন সৌন্দর্য টিকে থাকবে কিনা, সেটা নির্ভর করছে আমাদের দয়ার ওপর। আমাদের দয়ামায়া কি সব কর্পুরের মতো উড়ে গেল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ে করলেন গায়ক ইমরান
পরবর্তী নিবন্ধজঁ-লুক গদার রেট্রোসপেকটিভ