হাতির বিরুদ্ধে থানায় শতাধিক জিডি

এম.নুরুল ইসলাম, আনোয়ারা | বৃহস্পতিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারাকর্ণফুলীর দুই উপজেলার লাখো মানুষের সামনে মৃত্যুদূত হয়ে বিচরণ করছে হাতির পাল। হিংস্র হয়ে উঠা কয়েকটি হাতি থেকে বাঁচতে থানায় শতাধিক জিডি ও অভিযোগ হয়েছে। গত ৩ দিনে হাতির আক্রমণের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন দুই ব্যবসায়ী। আক্রমণে ভেঙে গেছে তিন দোকান। তছনছ করেছে এ্যাগ্রো খামার, ফসলের ক্ষেত ও কেইপিজেড শিল্প জোনের বিভিন্ন স্থাপনা। হাতিগুলো সড়কে সড়কে মহড়া দিচ্ছে। যার কারণে কেইপিজেড শিল্প এলাকায় আতংকে কাটছে ৩০ হাজার শ্রমিকের দিন। এলাকার মানুষ হাতি তাড়াতে নিরবচ্ছিন্ন দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু কিছুতেই যেন টনক নড়ছে না প্রশাসন ও সরকারের শীর্ষ মহলের।

দেয়াং পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া হাতিগুলো লোকালয়ে এসে প্রায়শ ফসল ও বসতির ক্ষতি সাধন করে চলেছে। এক দশক ধরে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে কার্যকর পদক্ষেপের আকুতি জানালেও এখন পর্যন্ত বাস্তব কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। হাতির আক্রমণে নিহত স্বজনদের দাবি হাতি গুলো তাদের কাছে সাক্ষাৎ যমদূত মনে হয়। হাতি আতঙ্ক যেন তাদের কাটে না, রাতে ঘুমের ঘোরেও হাতির আক্রমণ দেখে তারা। গত ৩ দিনে বেপরোয়া হাতির পালের আক্রমণের শিকার হয়ে গুরুতর আহত বৈরাগ ইউনিয়নের দেওয়ান বাজার এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল আবছার (৫৮) ও মুহাম্মদপুর গ্রামের ছবেদুল হক (৬০)। আহতরা চমেক হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। গত মঙ্গলবার রাতে বৈরাগের দেওয়ান বাজারে হাতি আক্রমণ চালিয়ে ব্যবসায়ী আবু তালেব, আবদুল আজিজের মুদির দোকান, মোজাম্মেল সওদাগরের সবজির দোকান বিনষ্ট করে। একই সাথে স্থানীয় আল্লাহর দান এম এম এ্যাগ্রো খামার ও বাগানে তাণ্ডব চালায় বলে জানান খামারে মালিক মঈন উদ্দীন।

তাছাড়া গত ৩ দিন ধরে রাতে হাতির দল কেইপিজেডে তাণ্ডব চালিয়ে শিল্প কারখানা, সবুজায়ন প্রকল্প, শত শত গাছপালা ও সবজি ক্ষেত বিনষ্ট করে চলেছে। সন্ধ্যা হলে হাতিগুলো সড়কে নেমে এসে এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। এতে কেইপিজেডের ত্রিশ হাজার শ্রমিক কর্মচারীর দিন কাটে আতঙ্কে। বর্তমানে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, গুয়াপঞ্চক, মোহাম্মদপুর, ফকিরখিল, বটতলী, চাপাতলী, হাজীগাওসহ বিভিন্ন গ্রাম এবং কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান, দৌলতপুর, শাহমীরপুরসহ বিভিন্ন গ্রামে দুই উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে হাতি আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছে।

কেইপিজেডের উপ মহা ব্যবস্থাপক মো. মুশফিকুর রহমান আজাদী বলেন, গত ৭/৮ বছর ধরে একদল বন্য হাতি কেইপিজেড শিল্পজোনে অবস্থান নিয়ে ব্যাপকভাবে তাণ্ডব চালাচ্ছে। হাতিগুলো কারখানার সবুজায়ন প্রকল্পের শত শত বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান ফলজ, বনজ, ওষুধিসহ নানান প্রজাতির গাছ বিনষ্ট করে যাচ্ছে। সেই সাথে কারখানার বিভিন্ন স্থাপনারও ক্ষতি সাধন করে চলেছে। বিভিন্ন সময়ে হাতির আক্রমণে কেইপিজেডে কোরিয়ান বিনিয়োগকারীসহ শ্রমিক কর্মচারী আহত হয়েছেন। এতে করে কোরিয়ান শিল্প জোনের অগ্রগতি বিনিয়োগ হুমকিতে রয়েছে। বর্তমানে হাতির কারণে কারখানার ৩২ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারীর মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি জানান, হাতিগুলোর আক্রমণের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন বিভাগকে আমরা ২০টির বেশি চিঠি দিয়েছি।

বৈরাগ ইউনিয়নের গুয়াপঞ্চক গ্রামের বাসিন্দা ক্ষতিগ্রস্ত মঈন উদ্দিন বলেন, বিগত ১০ /১১ বছর ধরে একদল হাতি দেয়াং পাহাড়ে অবস্থান নিয়ে সন্ধ্যা হলে এলাকায় এসে হামলে পড়ে। এতে মানুষ আহত ও নিহত হচ্ছে। হাতিগুলো তাড়াতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন, প্রশাসনকে স্মারকলিপি দেওয়া হলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গত তিনদিন ধরে এলাকায় হাতিগুলো তাণ্ডব চালাচ্ছে। এলাকার মানুষ নির্ঘুম রাত কাটায়।

বৈরাগের বাসিন্দা আকতার (৫৫) বলেন, হাতির আক্রমণে আমার স্ত্রী মারা গেছেন। এলাকার নিরীহ অনেক মানুষ মারা গেছে। হাতি দেখলে আমার কাছে যমদূত মনে হয়।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, বন্য হাতিগুলো দেয়াং পাহাড়ে, কেইপিজেডে অবস্থান নিয়ে প্রতিদিনই তাণ্ডব চালাচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগ ছাড়া পুলিশের তেমন কিছু করার থাকে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বাগতিক পাকিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারাল নিউজিল্যান্ড
পরবর্তী নিবন্ধপাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র কাটছে পাহাড়