রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে এক নারী সাংবাদিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. মাসুদ মিয়া জানিয়েছেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে কয়েকজন মিলে সাংবাদিক রাহনুমা সারাহকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন। সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা–নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর বিডিনিউজের।
৩২ বছর বয়সী রাহনুমা সারাহ জিটিভির নিউজ রুম এডিটর ছিলেন। স্বামী সায়েদ শুভ্রর সঙ্গে ঢাকার কল্যাণপুরের একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুরে, বাবার নাম বখতিয়ার শিকদার।
তার স্বামী শুভ্র বলেছেন, সারাহ ‘ঝিলের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন’ বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে তিনি জানতে পেরেছেন।
এ ঘটনার আগে ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে সারাহ লিখেছিলেন, ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’ বন্ধু ও পরিচিতজনদের ভাষ্য, সারাহ ডিপ্রেশনে (মানসিক অবসাদ) ভুগছিলেন।
শুভ্র বলেন, প্রেমের সম্পর্ক থেকে সাত বছর আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করেন। গত মঙ্গলবার সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় ফেরেননি। এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। পরে আমি তাকে ফোন করলে সে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। রাত ৩টার দিকে খবর পাই, সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে।
খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে স্ত্রীকে ‘মৃত অবস্থায়’ পান জানিয়ে শুভ্র বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি, তবে বেশ কিছুদিন আগ থেকে আমার স্ত্রী আলাদা হতে চাইছিলেন। আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব বলে সিদ্ধান্ত হয়। তবে দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।
সারাহর বন্ধু সৈয়দ নাজমুস সাকিব ফেসবুকে লিখেছেন, সারাহ অনেকদিন থেকে ডিপ্রেশনে ভুগছিলেন, চিকিৎসাও নিয়েছিলেন। সবাই তাকে আশ্বস্ত করেছিল যে তিনি ঠিক হয়ে যাবেন। সারাহর মৃত্যুতে শোকাস্তব্ধ তার বন্ধু চিকিৎসক মেজবাহ উল আজিজ লিখেছেন, যে ডিপ্রেশনের জন্য আমরা লড়াই করতে চেয়েছিলাম, সেই ডিপ্রেশনের কাছেই আজ আমরা আবার হারলাম। সুইসাইড প্রজেক্টে কাজ করতে চাওয়া, ডিপ্রেশন এর রাস্তা থেকে ফিরিয়ে আনতে চাওয়ার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হাতিরঝিলের পানিতে নিথর ভেসে আছে আমাদের অপরাজিতা হসন্ত।