হাতত কাঁচি কোঁরত দা, ভাত খাইলে রইন্যা যা

রাঙ্গুনিয়ায় কৃষি শ্রমিকের হাট জমজমাট

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | বুধবার , ২৩ নভেম্বর, ২০২২ at ৯:২৭ পূর্বাহ্ণ

হাতত কাঁচি কোঁরত দা, ভাত খাইলে রইন্যা যা। অর্থাৎ হাতে কাঁচি কোমরে দা, ভাত খেলে রাঙ্গুনিয়া যা। রাঙ্গুনিয়ায় শ্রম বেচাকেনার হাট জমজমাট। উপরের প্রবাদের কথা প্রমাণ করতেই যেন ওরা এখানে এসেছে। এখন পুরোদমে চলছে আমন ধান ঘরে তোলার কাজ। তাই ধান কাটা শ্রমিকদের চাহিদা বেশি। উপজেলার বিভিন্ন বাজারে বসছে শ্রম বেচাকেনার হাট। তিনবেলা ভাত, দুইবার নাস্তাসহ চড়া দামে শ্রমিকদের সঙ্গে গৃহস্থের চুক্তি করতে হচ্ছে।

রাঙ্গুনিয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে শত শত কৃষক পরিবার আছে। প্রতি মৌসুমে ধান রোপণ ও কাটার সময় উপজেলার বিভিন্ন বাজারে শ্রম বেচাকেনার হাট বসে। উত্তরবঙ্গ, নোয়াখালী, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত শ্রমিক এখানে আসে।

দুই যুগের বেশি সময় ধরে রাঙ্গুনিয়ায় শ্রম বিক্রির হাট বসছে বলে জানান স্থানীয়রা। রোয়াজারহাটে সোম ও শুক্রবার, শান্তিরহাটে শনিবার ও মঙ্গলবার শ্রমিকের হাট বসে। রাণীরহাট, মালিরহাট, ধামাইরহাট ও রাজারহাটেও হাট বসে। মৌখিক চুক্তিতে দরদাম করে শ্রমিকদের নিয়ে যায় গৃহস্থরা। এসব বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে মানুষের আনাগোনা।

গতকাল রাণীরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে বসেছে জমজমাট কৃষি শ্রমিকের হাট। এখানে উত্তরবঙ্গ থেকে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে একদল শ্রমিক এসেছে। স্থানীয় গৃহস্থরা এসেছে তাদের টাকার বিনিময়ে শ্রম কিনতে। অনেকে দরদাম করে শ্রমিকদের নিয়ে যাচ্ছেন।

রাণীরহাট বাজারে শ্রম বিক্রি করতে এসেছেন ফেনী জেলার আহমদ মিয়া (৬০)। তিনি জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে ধান কাটা ও রোপণের সময় রাঙ্গুনিয়ায় আসছেন তিনি। তার সাথে এই প্রথম এসেছেন আরও ৬-৭ জন দিনমজুর।

তাদের দলের রহিম মিয়া জানান, এখানে অন্য জেলার চেয়ে মজুরি বেশি। ধান রোপণের মৌসুমে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাওয়া গেছে। সঙ্গে পাওয়া যায় তিনবেলা খাবার। অনেক বাড়ির লোকেরা নিজে যা খায় তাই দেয়। অনেকে আবার মজুরদের জন্য আলাদা রান্না করে।

রহিম মিয়ার সঙ্গে থাকা আবদুল মালেক বলেন, আমরা গরিব মানুষ। দিনে এনে দিনে খাই। এই সময়টা আমাদের গ্রামে কাজ থাকে না। তাই বাড়িতে অলস বসে না থেকে সংসার চালাতে পরিবার-পরিজন ছেড়ে এখানে চলে আসি। কাজ শেষে মজুরি যা পাই বিকাশের মাধ্যমে পরিবারের কাছে পাঠিয়ে দিই। নিজের কাছে গাড়িভাড়া ছাড়া কিছুই রাখি না।

হাটে শ্রমিক নিতে আসা বগাবিলি গ্রামের আবদুল গফুর জানান, আমন চাষাবাদে জমি তৈরি থেকে শুরু করে চারা রোপণ ও নিড়ানির জন্য শ্রমিক লাগে। ধান কাটার মৌসুমেও তিনি এখান থেকে শ্রমিক নিতে এসেছেন।

গুমাই বিলে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা শত শত শ্রমিক ধান কেটে গৃহস্থের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছেন। নেত্রকোনা থেকে আসা আজগর আলী জানান, তাদের ৫ জনকে একজন গৃহস্থ রোয়াজারহাট বাজার থেকে নিয়ে এসেছেন। দুদিন ধরে কাজ করছেন তারা।

রেজাউল করিম নামে একজন কৃষক জানান, তিনি এবার ১২ কানি জমিতে আমন চাষ করেছেন। সবার ধান একসাথে পাকায় বাজারে শ্রমিকের দাম বেশি। ১০০০-১২০০ টাকা বেতন দেয়ার পর তাদের তিন বেলা খাবার, নাস্তা ও বিড়ি-সিগারেট দিতে হয়। সব মিলিয়ে একজন শ্রমিকের পেছনে দেড় হাজার টাকার বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান স্বজন কুমার তালুকদার জানান, দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলা-উপজেলা থেকে মানুষ রাঙ্গুনিয়ায় শ্রম বিক্রি করতে আসেন। এটি যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। অনেকে এখানে শ্রম বিক্রি করতে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন-এমন নজিরও রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপুলিশ ফাঁড়িতে হামলা : সেই হানিফ ও তার ভাই সীতাকুণ্ডে গ্রেফতার
পরবর্তী নিবন্ধজামায়াতের নায়েবে আমির শামসুলকে ডিভিশন দেওয়ার নির্দেশ