আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদরাসা বা হাটহাজারী মাদরাসায় ছাত্র আন্দোলন এবং সদ্য প্রয়াত হেফাজত আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর জীবনের শেষ দুদিনের ঘটনার ‘বিচার বিভাগীয় তদন্ত’ দাবি করেছে বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষক সমিতি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানানো হয়। সংস্থাটি ৮ দফা ঘোষণাপত্রও পাঠ করে। এতে শেষ জীবনে ছাত্রদের হাতে নিজ কক্ষ ভাঙচুর হতে দেখেছেন এবং জীবন দিয়ে যে মাদরাসার উন্নয়ন করেছেন সেখান থেকেই তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে দাবি করে এর প্রতিবাদ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাঁচ দফা দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মাদরাসার সর্বোচ্চ পদ ‘মুহতামিম’ (মহাপরিচালক) থেকে গত ১৭ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। এর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ে ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন হেফাজতে ইসলামের এই আমীর। এদিকে গতকাল ছাত্র আন্দোলন ও শাহ আহমদ শফীর মৃত্যু বিষয়ে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ভক্ত ও খলিফাদের পক্ষ থেকে ৮ দফা ঘোষণাপত্র প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এতে বলা হয়, ‘আল্লামা শাহ আহমদ শফী বাংলাদেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বজুড়েই সমাদৃত ছিলেন। কিন্তু তার সঙ্গে শেষ সময়ে যে আচরণ করা হয়েছে তা ছিল অত্যন্ত দুঃখজনক। সারা জীবনের তালিম দেয়ার পরিণতিতে মৃত্যুকালে তিনি কিছু ছাত্রদের হাতে কক্ষ ভাঙচুর দেখে গেলেন। জীবন দিয়ে যে মাদরাসা গড়েছেন সেখান থেকে তাকে পদত্যাগের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমরা এ পুরো বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
২য় ঘোষণাপত্র হচ্ছে– ‘জীবনের শেষ দুই দিন আল্লামা আহমদ শফী কোন অবস্থার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত করেছেন, সেটি এখন বিভিন্নভাবে আমরা প্রকাশ হতে দেখছি। অত্যন্ত লজ্জার কথা, হাটহাজারী মাদরাসার মতো স্থানে শাইখুল ইসলাম আল্লামা আহমদ শফীর কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। যেহেতু আল্লামা শফীর রুমসহ হাটহাজারী মাদরাসার বিভিন্ন শিক্ষকদের রুমে তাণ্ডবের বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে, তাই আমরা পুরো বিষয়টির বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি।’
তৃতীয় ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘পারিবারিক ও বিভিন্ন সূত্রে আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর বিষয় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, হযরতের কক্ষে ভাঙচুরের সময় তাকেও শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে এবং এরমধ্যে বিভিন্ন সময় তিনি অঙিজেন নিতে পারেননি। এরসঙ্গে কারা জড়িত তাদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে প্রতিটি অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ হযরতের পরিবার ও ভক্তরা মনে করেন– যে পরিস্থিতিতে হযরতের ইন্তেকাল হয়েছে এটি স্বাভাবিক ছিলো না।’
ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, ‘অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র বা শিক্ষকরা প্রতিবাদ করতে পারেন। কিন্তু হাটহাজারী মাদরাসার সামপ্রতিক ছাত্র বিক্ষোভে অভ্যন্তরীণ বিষয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়েও দাবি তোলা হয়েছে। তাই এটির সঙ্গে বহিরাগত কোনো উস্কানি বা পরিকল্পনা ছিল কি না, তা তদন্তের দাবি রাখে।’
একটি মহল থেকে হাটহাজারীতে কোনো ভাঙচুর হয়নি বলে ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে দাবি করা বলা হয়, ‘বিভিন্নভাবে ভাঙচুরের আলামত বিনষ্ট করা হয়েছে। তাই সরকারিভাবে তদন্ত কমিটি করার আগে আলেমদের উদ্যোগে নিজস্বভাবে তা তদন্ত ও অপরাধীদের শনাক্ত করতে হবে। এছাড়া আল্লামা শফীর পরিবার, খাদেম ও ভক্তদের এখনই পূর্ণ নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতের দাবি করা হয়।’
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, হাটহাজারী মাদরাসার এ ঘটনার পর কিছু মানুষ সারাদেশে একটি উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছেন। দেশবরেণ্য আলেমদের ব্যাপারে সরাসরি বক্তৃতাসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্নভাবে উস্কানি দেয়া হচ্ছে। এ ধরণের হিংসাত্মক মনোভাব জাতির জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলো পরিহার করে আমরা সবাইকে ইসলামের শাশ্বত উদারতা ও শান্তির পথে আহ্বান জানাই।
সংবাদ সম্মেলন থেকে খুব শিগগিরই আল হাইয়াতুল উলয়ার উদ্যোগে আল্লামা আহমদ শফীর জীবন ও কর্ম শীর্ষক আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনের আহ্বান জানাচ্ছে। এ ছাড়া বাংলা, আরবি ও ইংরেজিতে হযরতের জীবনী ও স্মারকগ্রন্থ প্রকাশের অনুরোধ করা হয়।
এতে উপস্থিত ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি নুরুল আমিন, ইয়াহইয়া মাহমুদ, ওয়াহিদুজ্জামান, গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, মুখলেছুর রহমান।