খেলার মাঠে কেবলই খেলা হবে। অন্য কিছুৃ হবে না। এটাই সরকারের নীতি। শুধু তাই নয়, কোন স্কুলের মাঠে কোন মেলা হবেনা। এটা সরকারের আইন। কিন্তু সে সব আইনকে অমান্য করে হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আয়োজিত হচ্ছে মাসব্যাপী দেশীয় পণ্য জামদানী মেলা। গত ১০ জুলাই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ জামদানী ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোটার্স এসোসিয়েশনকে এই মেলার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। আগামী ১২ আগস্ট এই মেলার উদ্বোধন করা হবে। এরই মধ্যে মাঠে বাঁশ পোতা শুরু হয়েছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে খেলাধুলা। দুই লক্ষ চল্লিশ হাজার টাকা ভাড়ায় মাঠটি পেয়েছে মেলার আয়োজকরা। যদিও যে অনুমতি পত্র দেওয়া হয়েছে সেখানে একটি চালাকি করা হয়েছে। সেখানে মাঠটিকে স্কুলের মাঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। উল্লেখ করা হয়েছে হাটহাজারী উপজেলা সংলগ্ন খালি মাঠ। চট্টগ্রাম শহরের বাইরে যে কয়টি ঐতিহ্যবাহি মাঠ রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয়ের এই মাঠ। আর চট্টগ্রামের উপজেলা সমুহের মধ্যে যে উপজেলাটি সবচাইতে বেশি খেলাধুলার আয়োজন করে সেটি হচ্ছে হাটহাজারী। মাত্র কিছুদিন আগেও তাদের সুন্দর একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট শেষ হয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট থেকে শুরু করে অনেকগুলো ইভেন্ট এই মাঠে আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাছাড়া স্কুল এবং কলেজের ছেলেরা এই মাঠে খেলাধুলা করে থাকে। কিন্তু এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মাঠকে জামদানী মেলার জন্য বরাদ্দ দেওয়ায় একদিকে যেমন সরকারি আইনের লঙ্ঘন করা হয়েছে অন্যদিকে খেলাধুলাকে ব্যাহত করা হয়েছে। মাসব্যাপি এই মেলা হলেও মেলার জন্য স্টল তৈরি থেকে শুরু করে যাবতীয় প্রস্তুতি এবং মেলা শেষে সে সব স্থাপনা খুলে নেওয়া সহ প্রায় দুই মাসের সময় লেগে যাবে বলে মনে করছেন ক্রীড়াবিদ এবং ক্রীড়া সংগঠকরা। তার মানে এই দুই মাস খেলাধুলা বন্ধ। শুধু তাই নয়, মেলার স্টল বানাতে গিয়ে যে পরিমাণ খুঁটি পোতা হবে এই মাঠে তা ঠিক হতেও লাগবে অনেক সময়। তাই মেলা শেষ হওয়ার পরও এই মাঠ খেলার উপযোগী হতে লাগবে অনেক সময়। মাঠটির একপাশে হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় এবং কলেজ। অপর পাশে বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এবং পাশে প্রাইমারী স্কুল। সাথে লাগোয়া উপজেলা পরিষদ ভবন। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর জায়গায় বাণিজ্য মেলা হলে এলাকার পরিবেশও দূষণ হবে বলে মনে করছেন এলাকার মানুষ। একদিকে চলবে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত। আর অপরদিকে চলবে মেলা। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়া লেখার ক্ষতি হবে বলেও মনে করছেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। তাই এই মেলাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে এলাকাবাসি, ছাত্র/ছাত্রী, শিক্ষক, ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক এবং সর্বোপরী সাধারণ মানুষের মধ্যে। মেলা করার জন্য অনেক খালি জায়গা থাকলেও সেখানে না করে একটি স্কুলের মাঠে মেলা আয়োজন কেন সে প্রশ্ন এলাকাবাসির। চট্টগ্রামের ক্রীড়াঙ্গনে হাটহাজারী উপজেলার অনেক অবদান। অনেক ক্রীড়াবিদ উঠে এসেছে এই উপজেলা থেকে। আর সে সব ক্রীড়াবিদ উঠে আসার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় মঞ্চ এই মাঠ। অতীতে এমন ঘটনা না ঘটলেও প্রথমবারের মত এই মাঠে মেলা আয়োজনের জন্য বরাদ্দ দিয়ে খেলাধুলার পথকে রুদ্ধ করা হচ্ছে। মেলার আয়োজক কমিটির কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম খান পিন্টু দৈনিক আজাদীকে বলেন তারা দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে একমাসের জন্য মাঠটি ভাড়া নিয়েছে। কিন্তু স্কুলের মাঠে মেলা কেন তেমন প্রশ্নের জবাবে পিন্টু বলেন ঢাকায়ও একটি স্কুলের মাঠে মেলা হচ্ছে। কিন্তু চট্টগ্রামে কোথায় হচ্ছে তেমন প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি তিনি। হাটহাজারী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন তারাও জানতোনা এই মাঠে মেলা আয়োজনের ব্যাপারে। যখন মাঠে বাঁশ ফেলা হচ্ছিল তখন তারা বুঝতে পারেন। এদিকে পার্বতী স্কুলের মাঠে মেলার আয়োজনের প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে উত্তর চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহি ক্রীড়া সংগঠন জাগৃতি সহ বিভিন্ন ক্লাব এবং ক্রীড়া সংগঠন। তারা জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান খেলাধুলার স্বার্থে এবং ছেলেদের খেলাধুলার পথ সুগম রাখতে যেন এই মেলা বাতিল করা হয়। গতকাল ২৮ জুলাই সোমবার সন্ধ্যায় জাগৃতি কার্যালয়ে স্থানীয় খেলোয়াড় এবং হাটহাজারী বাজার ব্যবসায়ীদের এক যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাটহাজারী পৌরসভা ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক আব্দুর শুক্কুরের সভাপতিত্বে এবং হাটহাজারী ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আছলাম মোর্শেদের পরিচালনায় মতবিনিময় সভায় আজ আড়াইটায় নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাগৃতির সভাপতি মো. ওসমান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, খেলোয়াড় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল সিদ্দিকী, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক খোরশেদ আলম শিমুল, অধ্যাপক আবু তালেব, ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য সচিব জসীমউদ্দীন বাবুল, ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সেক্রেটারি আলী আজম, ক্রীড়া সংস্থার এডহক কমিটির সদস্য আব্দুর মান্নান দৌলত, আলী আকবর জিন্নাহ, কামালপাড়া যুব সংঘের সভাপতি মো. ওসমান, সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন সুজন, রাজনীতিবিদ সাইফুল ইসলাম তালুকদার, জিয়াউদ্দিন মিজান, মোহাম্মদ রায়হান এবং হাটহাজারীর বিভিন্ন মার্কেটের শতাধিক ব্যবসায়ীবৃন্দ।