হাটহাজারী আল জামেয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলামের মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এবং আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়ার সভাপতি ও চেয়ারম্যান পদ শূন্য হয়। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে হেফাজতের আমির কে হচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা, আছে গুঞ্জন। এদিকে, কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলছেন, আমির হাটহাজারীকেন্দ্রিক হলে ভালো হবে।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আহমদ শফী এ সংগঠনের আমির হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। সংগঠনের সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লা বাবুনগরী। নায়েবে আমির নুর হোসেন কাসেমী ও মুফতি ওয়াক্কাস। মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী। হেফাজতের পরবর্তী আমির হিসেবে শোনা যাচ্ছে সিনিয়র নায়েবে আমির মহিবুল্লা বাবুনগরী, ঢাকার নুর হোসেন কাসেমী ও বর্তমান মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম। এ বিষয়ে কথা বলতে মহিবুল্লা বাবুনগরী, কাসেমী ও জুনায়েদ বাবুনগরীর মোবাইলে ফোন করা হয়। কিন্তু তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জানা গেছে, তাদের একজন ঢাকায় আছেন। গতকাল মাদরাসায় গিয়েও বাকি দুজনের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আহমদ শফীর পুত্র আনাস মাদানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাকেও ফোনে পাওয়া যায়নি। হেফাজতের মজলিসে শূরা কমিটির সদস্য এবং হাটহাজারী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাছির উদ্দিন মুনির বলেন, মাদরাসার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর হেফাজতের কাউন্সিল ডেকে আমির নির্বাচন করা হবে। এ পদের জন্য কারা চেষ্টা করছেন জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলানিউজ জানায়, আল্লামা শফীর অবর্তমানে হেফাজতের মূল নেতৃত্ব কার হাতে যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে হেফাজতের কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য মুফতি জুনায়েদ গোলজার বলেন, সেটা আগ বাড়িয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। হেফাজতের মজলিসে শূরায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হবে। তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো, হেফাজত যেহেতু চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা থেকে সৃষ্টি, তাই ভবিষ্যৎ ইমারতের দায়িত্ব (আমির) হাটহাজারীকেন্দ্রিক হওয়ায়ই মঙ্গলজনক। জুনায়েদ বাবুনগরী হোক অথবা হাটহাজারী মাদরাসা থেকে অন্য যে কাউকে নির্বাচন করা হলে তাকেই সবাই মেনে নেবে।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হেফাজতে ইসলামের সুনির্দিষ্ট সাংগঠনিক কাঠামো আছে। শূরা কমিটি বসে পরামর্শ করে কাউন্সিলের মাধ্যমে আমির নির্বাচন করা হবে।
নেতৃত্বে আসার মতো সম্ভাব্য কে কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সম্ভাব্য অনেকেই আছেন। তাদের মধ্যে যারা যোগ্য, বিজ্ঞ, ক্লিন ইমেজের আছেন, দেশবাসী মেনে নেবে এমন লোক বাছাই করা হবে। শিগগিরই শূরার বৈঠক বসবে এবং সিদ্ধান্ত আসবে।
একটি সূত্র জানায়, হেফাজতে ইসলামের আমির ও মহাসচিব পদে নিয়োগ নিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর সিনিয়র নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তারা আলোচনা করেছেন, আমির যদি সিনিয়র কেউ হন, মহাসচিব হবেন তরুণদের মধ্য থেকে একজন।
অন্য একটি সূত্র জানায়, হেফাজতের একটি অংশ চাচ্ছে জুনায়েদ বাবুনগরীকে মহাসচিব পদ থেকে আমিরের পদে দিতে। একই সঙ্গে মরহুম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের ছেলে মাওলানা মামুনুল হককে মহাসচিব বানাতে। তিনি বর্তমানে ঢাকা মহানগর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম সম্পাদক পদে আছেন। হেফাজতের গুরুত্বপূর্ণ পদ দুটিতে কে আসবেন তা শিগগিরই জানা যাবে বলে জানান ঢাকা মহানগর হেফাজতের প্রচার সেলের কো-অর্ডিনেটর ওয়ালী উল্লাহ আরমান।