হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সুন্নি সমর্থকদের সংঘর্ষের পরদিন গতকাল রোববার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, শনিবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন প্রায় ২৬৫ জন। সংঘর্ষের সময় সড়কের দুই পাশে অনেক যানবাহন আটকে ছিল। উভয় পক্ষ সড়ক ছেড়ে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। গতকাল সকাল থেকে সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট। প্রত্যাহার করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। ভবিষ্যতে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি না হয় সেজন্য বিকালে দুই পক্ষকে নিয়ে প্রশাসনের সমঝোতা বৈঠক হয়। গত শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারার জারি করে। রাত ১২টার দিকে সেনাবাহিনীসহ আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ও সুন্নী সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত ২৬৫ জন আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। এর ফলে শনিবার সন্ধ্যা থেকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় চট্টগ্রাম–রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম–খাগড়াছড়ি সড়কে রাত প্রায় ২টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা উভয় পক্ষকে বুঝিয়ে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
হাটহাজারী পৌর সদরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জারি করা ১৪৪ ধারা পৌর সদরের ১১ বিদ্যুৎ অফিস থেকে পৌরসভার মীরেরহাট এবং উপজেলা গেট থেকে আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকা পর্যন্ত গতকাল বিকাল তিনটা পর্যন্ত বলবত ছিল। এরপর প্রত্যাহার করা হয়।
হাটহাজারী বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, শনিবার রাতে হাটহাজারী বাস স্টেশন ও বাজারের মাদ্রাসা রোডে বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। ব্যবসায়ীরা উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানান।
গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টায় হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. আবদুল্লাহ আল মুমিনের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহাবুবুল হক, মেজর শাহরিয়ার, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী মো. তারেক আজিজ ও সহকারী কমিশনার ভূমি শাহেদ আরমান। বৈঠক শেষে সিদ্ধান্তগুলো জানানো হয়।
ইউএনও জানান, বিবাদমান দুই পক্ষ, আইন–শৃঙ্খলা বাহিনী এবং এলাকাবাসীর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ঘটনার শান্তিপূর্ণ সমাধানের লক্ষ্যে একটি সভা হয়। সভায় ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে সকলের মতামতের ভিত্তিতে নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয় : ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শব্দ দূষণসহ যে–কোনো গণ উপদ্রব নিরসনকল্পে সকল পক্ষ থেকে প্রতিনিধি নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা শেষে কোলাকুলি করা হয়। ভবিষ্যতে সকলে মিলেমিশে থাকার সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে বিকাল ৩টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার আয়োজনে মাদ্রাসা মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাসিক মঈনুল ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা মুনির আহমদ। গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মুফতি জসিম উদ্দিন ও আশরাফ আলী নিজামপুরি।
সংবাদ সম্মেলনে আহত শিক্ষার্থীদের সুচিকিৎসা, ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের ক্ষতিপূরণ এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। মাদ্রাসার অন্তত ১৭৫ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে উল্লেখ করে তাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে বলে জানান। এছাড়া মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আল্লামা খলিল আহমদ কাসেমী, মুফতি কিফায়াতুল্লাহ, মাওলানা ফোরকান আহমদ, মাওলানা মীর ইদরীস নদভী, আহসান উল্লাহ, মাওলানা মাহমুদুল হোসাইন, মাওলানা আনোয়ার শাহ আযহারী, মাওলানা মইন উদ্দিন চৌধুরী, জাহেদ হোসাইন, মাওলানা নিজাম সাইয়্যিদ, নূর মুহাম্মদ, মাওলানা এমরান সিকদার, মাওলানা আবুল হাশেম ও মাওলানা হাফেজ আব্দুল মাবুদ।
এদিকে বিকালে সুন্নীপন্থীরা ইমাম শেরে বাংলা (র.) মাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোখতার আহমদ সিদ্দিকী, মুহাম্মদ এনামুল হক ছিদ্দিক, মুহাম্মদ সেকান্দর মিয়া, মাওলানা হাফেজ আহমদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন রুবেল, মুহাম্মদ রুকন উদ্দীন চৌধুরী ও মুহাম্মদ সাহেদুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে তারা আটক আরিয়ানের নিঃশর্ত মুক্তি, কোনো নেতাকর্মীকে হয়রানি না করা ও ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার দাবি জানানো হয়।