ওরশ বিরিয়ানি খেয়ে হাটহাজারীর একই পরিবারের শিশুসহ মোট আটজন অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে হাটহাজারীর হালদা নদীর পাড়ে রাউজানের প্রবেশদ্বার ছত্তারঘাট এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ‘মায়াবী হালদা’ পিকনিক স্পটে পরিচালিত ‘আশিক ওরশ বিরিয়ানি’ নামের একটি খাবার প্রতিষ্ঠানে।
ভুক্তভোগী হাটহাজারী উপজেলার মেখল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম মেখলের সিকদার পাড়ার বাসিন্দা নওশেদ হক গণমাধ্যমকে জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি পরিবারের ও স্বজনদের নিয়ে মোট ১২ জন উল্লেখিত পিকনিক স্পটে যান এবং ‘আশিক ওরশ বিরিয়ানি’ নামক প্রতিষ্ঠানে খাবার খান।
এ সময় বিরিয়ানির স্বাদ অস্বাভাবিক (মিষ্টি) মনে হলেও বিষয়টি তিনি তখন তেমন গুরুত্ব দেননি। তবে পরদিন সকাল থেকেই তিনি, তার স্ত্রী, ছেলে, ভাইয়ের স্ত্রী, বোন, বোনের স্বামী, সমন্ধী ও সমন্ধীর স্ত্রীসহ পরিবারের আটজনই একসাথে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এসময় তারা তীব্র ডায়রিয়া, বমি ও শারীরিক দুর্বলতায় আক্রান্ত হন। তার ছেলে এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি বলেও জানান তিনি। স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে হয়েছে এবং অতিরিক্ত ডায়রিয়ায় নিজের ওজন কমে গেছে বলেও অভিযোগ করেন নওশেদ হক।
তিনি আরও জানান, দোকানদার তার পরিচিত হওয়ায় মৌখিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করায় প্রশাসনের কাছে আর লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।
এদিকে একই প্রতিষ্ঠানের খাবার নিয়ে আরও অভিযোগ সামনে এসেছে। ইশতিয়াক ইভান নামে এক ভোক্তা জানান, তিন দিন আগে তারা ওই দোকানের বিরিয়ানি খেয়েছিলেন। তিনি বলেন, মাংসটি মহিষ না গরুর তা বোঝার উপায় ছিল না। মাংসে এমন দুর্গন্ধ ছিল যে খাওয়াই কষ্টকর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিষয়টি নতুন নয়। রাউজান পৌরসভার বাসিন্দা নুরুল হাকিম বলেন, অনেক সময় ফ্রিজে রাখা বাসি মাংস দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করা হয়। স্বাদ ঢাকতে অতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট, কেওড়া জলসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নানা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এতে নিয়মিতই মানুষ অসুস্থ হচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতিরিক্ত টেস্টিং সল্ট গ্রহণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। এতে মাথাব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ, হজমজনিত সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতা, হাড় ক্ষয়সহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে পারকিনসন্স, আলঝেইমারস ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। শিশুদের ক্ষেত্রে এটি মনোযোগ ও আচরণগত সমস্যার কারণ হতে পারে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, হাটহাজারী পৌরসদরসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থান ও আশেপাশের এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব অবৈধ খাবারের দোকানগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত তদারকি না থাকায় জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত অভিযান ও নজরদারি জোরদারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে আশিক ওরশ বিরিয়ানির মালিক আশিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ মানুষ ওরশ বিরিয়ানি খায়। সেখানে আটজন অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ অবান্তর। তারা হয়ত অন্যকিছু খেয়ে অসুস্থ হতে পারে। তবে তিনি স্বীকার করেন, খাবারের স্বাদ বাড়াতে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, সব দোকানেই এটি ব্যবহার করা হয়। আমরাও ব্যবহার করি।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মু. আবদুল্লাহ আল মুমিন রবিবার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে। টেস্টিং সল্ট মানবদেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর। চাইলেই ক্ষতিগ্রস্তরা অভিযোগ বা মামলা করতে পারবেন। আর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি সর্বোচ্ছ গুরুত্ব দিয়ে যাচাই বাছাইয়ে শীঘ্রই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলেও জানান তিনি।










