হাটহাজারীতে স্থাপিত ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধনের দীর্ঘদিন পরও চালু হয়নি। আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ না দেওয়া বিপুল অর্থ ব্যয়ে নির্মিত এই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চালু হয়নি। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।
জানা যায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এইচইডি) বাস্তবায়নে ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে জনগণের স্বাস্থ্য সেবার সুবিধার্থে চারতলা বিশিষ্ট এ ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করা হয়। ট্রমা সেন্টারটি দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে উদ্বোধন হলেও ভবন ছাড়া কোন আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম, জনবল কিছুই নেই সেখানে। দৃষ্টিনন্দন ট্রমা সেন্টারটি উদ্বোধনের পর হাটহাজারীতে অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। এতে হতাহত হয় শতাধিক। ঘটনার পর পর চিকিৎসা নিতে ট্রমা সেন্টারে আহতসহ অনেকেই উপস্থিত হলেও হতাশ হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে যেতে হয় তাদের।
ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেকেই বলেন, সাধারণত কোন কিছু উদ্বোধন হলে সবাই সেবা শুরু হয়েছে এটাই মনে করে। কিন্তু এখানে তার উল্টো। চিকিৎসা সেবার জন্য উদ্বোধন করা হয়েছে, কিন্তু চিকিৎসা সেবার কোন সরঞ্জাম নেই, কোন চিকিৎসক নেই। শুধু দৃষ্টিনন্দন কয়েকটি ভবনই যেন দাঁড়িয়ে আছে।
ট্রমা সেন্টার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর চার জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আধুনিক এই চিকিৎসা সেবা কেন্দ্রটি চালু করতে একাধিক বার সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিত চিটি পত্র দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন বদলি হওয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উদ্বোধনের পর পর লিখিতভাবে জানানো হয়েছে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য। প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়ার পর ফের লিখতে হবে জনবলের জন্য। তবে কবে নাগাদ জনগণ ট্রমা সেন্টার থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে পারবে এ ব্যাপারে কিছুই জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছরেও ট্রমা সেন্টারের কার্যক্রম শুরু হবে কিনা সন্দেহ আছে। কারণ ভবন উদ্বোধনের পর সরকারি অনেক নিয়মনীতি রয়েছে। প্রথমে প্রশাসনের অনুমোদন, তারপর আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম, তারপর জনবল। নিয়ম অনুযায়ী চিঠিপত্র আদান প্রদানেই দীর্ঘ সময় তথা বছরের পর বছর কেটে যায়। ট্রমা সেন্টার কিংবা চিকিৎসা সেবার যে কোন ভবন উদ্বোধনের আগেই যাবতীয় সব কাজ সেরে সব কিছু প্রস্তুত করা উচিত বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ।
হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তাপস কান্তি মজুমদার জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যোগদানের পর ট্রমা সেন্টারটি চালু করতে তিনি পাঁচ বার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি প্রদান করেছেন। কিন্তু দাপ্তরিক নানা নিয়ম কানুনের কারণে ট্রমা সেন্টার চালুর বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বেশ কিছু বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জনবল নিয়োগ করা সাপেক্ষে ট্রামা সেন্টারটি চালু করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এছাড়া হাটহাজারী ট্রমা সেন্টারের চিকিৎসা সেবা দ্রুত চালু করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন সচেতন মহল।