হাজার কোটি টাকার ঈদ অর্থনীতি

আয়েশা পারভীন চৌধুরী | বৃহস্পতিবার , ৫ জুন, ২০২৫ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

ঈদুল আযহার আরো একটি বড় দিক হচ্ছে পশুর হাটে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন। সংবাদ মাধ্যমে জানা যায়, পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী প্রায় হাজার হাজার কোটি টাকার ‘ঈদ অর্থনীতি’ চলবে। এই বিপুল পরিমাণের ব্যবসার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বেশ উদ্বিগ্ন। এই ব্যাপারে প্রশাসনের বার বার ব্যাপক সহায়তার আশ্বাস সত্ত্বেও ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা আশঙ্কামুক্ত নয়। প্রশাসনের নিজস্ব স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, রাস্তা কেন্দ্রিক শত শত কোটির এই বাণিজ্যে প্রশাসনকে ব্যাপক হিমশিম খেতে হয়। মাঠে ঘাটে স্থানীয় চাঁদাবাজ ও পুলিশী চাঁদাবাজির কারণে অনেক ব্যবসায়ীকে হয়রানীর শিকার হতে হয়। ঈদুল আযহার সময় বিভিন্ন বাজার ও হাটে পশু আনা নেওয়ার পথে ব্যবসায়ীদের ছিনতাইকারী ও ডাকাতদের কবলে পড়তে হয়। স্থানীয়ভাবে অনেক পশু কেনাবেচা হয়। এই বিপুল পরিমাণের পশু ক্রয়বিক্রয়ে যে পরিমাণ টাকা পয়সার লেনদেন হয় তাতে দেশের অর্থনীতিতে জোর তৎপরতা চলে। এই পুরো টাকাই হাটে, বাজারে, রাস্তাঘাটে, স্থানীয় পথপ্রান্তরে লেনদেন হয়। ফলে ব্যবসায়ীদের সাথে সাথে সাধারণ মানুষ ও প্রশাসন বেশ উদ্বিগ্ন থাকে। বিশেষ করে এই সময়ে কালোবাজারীদের দৌরাত্ম থাকাতে পুলিশ ও প্রশাসনের ব্যক্তিদেরকে এক প্রকার যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়। নতুন নতুন টাকার গন্ধে যখন ব্যবসাবাণিজ্যের রমরমা অবস্থা তখন জাল টাকার ব্যাপক চালান হয়। তাই বিভিন্ন স্থানে ও বাজারে টাকা গণনা ও জাল টাকা সনাক্তকরণের জন্য প্রশাসন কর্তৃক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কে কাকে যে কখন ও কীভাবে ধোকা ও ঠকাচ্ছে তা বোঝার কোনো উপায় নেই। যেই উদ্দেশ্যে কোরবানী দেওয়া হয় তখন সেই উদ্দেশ্যটাই গৌণ হয়ে পড়ে। হঠকারিতার ফলে কোরবানীর মাহাত্ম অনেকাংশে লোপ পায়।

প্রতি জিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখ সকাল হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় বিশ্বব্যাপী মুসলিমবাসী কোরবানী দিয়ে থাকেন। একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে মহান আল্লাহ তালার নির্দেশ ও শরিয়তের বিধান অনুসারে পশু কোরবানীর মাধ্যমে আল্লাহ তালার সন্তুষ্টি লাভ। বিধান অনুযায়ী যারা জ্ঞানসম্পন্ন ও প্রাপ্তবয়স্ক তাদের মধ্যে যাদের নিসাব পরিমাণ ধনসম্পদ আছে তাদের জন্য কোরবানী করা ওয়াজিব। সাহেবে নিসাব তথা সামর্থ্যবান ব্যক্তির হাতে নগদ অর্থ না থাকলে আপাতত ধার করে হলেও ওয়াজিব কোরবানী আদায় করতে হবে। একটি কোরবানী হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া বা একটি দুম্বা অথবা গরু, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে অর্থাৎ সাত জনের পক্ষ থেকে কোরবানী করা যায়। বিধান অনুযায়ী, ছয় () প্রকার পশু দিয়ে কোরবানী করা যায়। যেমনভেড়া, ছাগল, দুম্বা, গরু, মহিষ ও উট। এছাড়া অন্য কোন পশু দিয়ে কোরবানী করা যায় না। কোরবানীর জন্য যে সমস্ত পশু নির্বাচন করা হয় তাদের বয়সও নির্ধারণ করা হয়েছে। কোরবানীর জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স এক () বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের বয়স দুই () বছর এবং উটের বয়স পাঁচ () বছর হতে হবে। কোরবানীর নির্বাচিত পশুর কোন ধরনের খুঁত বা অপূর্ণতা থাকলে কোরবানীর আসল উদ্দেশ্যের উপযোগিতা কমে যায়। তাই পশু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্রেতা সাধারণের হালালহারামের পাশাপাশি পশুর শারীরিক গঠনের দিকে সচেতন থাকতে হবে।

হজ্জ এজেন্সীর কারসাজি ও দৌরাত্ম্যে অনেকেই হজ্জ করতে ব্যর্থ হয়। ঈদুল আযহায় হজ্জ পালন করা একটি ধর্মীয় বিধান। কিন্তু আমাদের হজ্জ এজেন্সীগুলোর দৌরাত্মপনা কোরবানী ঈদের মাহাত্মকে অনেকাংশে খর্ব করে। জিলহজ্জ মাসের শুরু থেকেই কোরবানীর আমেজ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে পত্রপত্রিকাগুলোতে সচেতনমূলক অনেক সংবাদ প্রকাশিত হয়। পশু জবাই থেকে শুরু করে কোরবানী পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে থাকে। জনসাধারণের উপকারিতা মাথায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী চামড়া সংরক্ষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কোরবানীর আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যারা কোরবানী দিয়ে থাকে তাদেরকে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হয় যাতে কোনো ধরণের দুর্গন্ধ ও আবর্জনা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয়। পরিবেশ দূষণের বিষয়টিকে বিবেচনায় এনে জায়গা নির্ধারণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়ে আগে থেকেই যথেষ্ট সচেতন থাকাও সকলের দায়িত্ব ও কর্তব্যের একটি অংশ। এই বিষয়টিও কোরবানীর মতই একটি ফরজ ইবাদত হিসাবে গণ্য হয়। তাই যত্রতত্র রাস্তাঘাটে ও পথের ধারে কোরবানীর পশু জবাই করা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া নির্দিষ্ট স্থানে পশু জবাই করার পর মলমূত্র ও রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করার জন্য বার বার আহবান করে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ছোটখাটো সমাবেশ, আলাপআলোচনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ব্যাপারটির গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। কারণ পরিবশেকে দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকের উপরও বর্তায়।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ,

ডাঃ ফজলুলহাজেরা ডিগ্রী কলেজ, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটিতে সংঘাত-সহিংসতা এড়িয়ে চলুন
পরবর্তী নিবন্ধঈদের আনন্দ ও ত্যাগের মহিমা ছড়িয়ে পড়ুক ঘরে ঘরে