নগরীর কাজীর দেউড়ির জেলা স্টেডিয়ামে জুলাই পুনর্জাগরণ উপলক্ষে জুলাইয়ের গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও হাজারো ড্রোন শো প্রদর্শিত হবে। আজ বুধবার বিকালে এ অনুষ্ঠানে লাখো মানুষের সমাগম ঘটবে। গতকাল মঙ্গলবার নগরীর সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বিষয়টি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদ পতনের লক্ষ্যে গত বছরের জুলাইয়ে যে অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, আগামীকালের (আজকের) অনুষ্ঠানে সেটি আবারও ফুটে উঠবে। এ অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামকে যেমন খুঁজে পাওয়া যাবে, সেই সাথে বাংলাদেশকেও খুঁজে পাওয়া যাবে। চট্টগ্রামবাসীকে স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাই শহীদ দিবস উপলক্ষে সারা দেশে অনুষ্ঠান হচ্ছে। আগামীকাল (আজ) বড় অনুষ্ঠান হবে শুধু চট্টগ্রাম ও রংপুরে। ২০২৪–এর ১৬ জুলাই রংপুরে প্রথম শহীদ হয় আবু সাঈদ। চট্টগ্রামে ওয়াসিম, শান্তসহ আরও কয়েকজন। উপদেষ্টা বলেন, ড্রোন শোতে চট্টগ্রামের জুলাই আন্দোলনের স্মৃতিময় দিনগুলো ফুটিয়ে তোলা হবে। যেগুলো শুধু চট্টগ্রাম নয়, সারা বাংলাদেশকে নাড়া দিয়েছে। ড্রোন ডিসপ্লেতে এগুলো ফুটিয়ে তোলা হবে। এতে চট্টগ্রামকে খুঁজে পাওয়া যাবে। বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যাবে।
এদিকে ব্রিফিংয়ের সময় নগরীর পাঁচলাইশের জুলাই উদ্যানে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ নিয়ে আপত্তি করে গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা। ছাত্রনেতা আরিফ মঈনুদ্দিন বলেন, একটি আবাসিক এলাকায় জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ চট্টগ্রামে জুলাই আন্দোলনের মূল স্থান ছিল ষোলশহর ও ২ নং গেট। ছাত্রনেতাদের এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ মির্নাণের স্থান পুনর্বিবেচনার অনুরাধ জানান সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে এই দিকর্নিশেনা দেন তিনি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নগর পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, অনুষ্ঠান ঘিরে তিন স্তরের নিরাপত্তা জোরদার থাকবে। এর আগে দুপুরে পৃথক একটি প্রেস ব্রিফিং করেন জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। সেখানে তিনি জানান, জুলাই পনর্জাগরণ উপলক্ষে জুলাইজুড়ে অনুষ্ঠানমালা রয়েছে। এর মধ্যে জুলাই স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আগামীকাল (আজকে) জুলাইয়ের গানসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। সবচেয়ে বড় কর্মসূচি ড্রোন শো। জেলা স্টেডিয়ামে ড্রোনের মাধ্যমে জুলাইয়ে চট্টগ্রামে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এটি সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত থাকবে।
এছাড়া জুলাই মাসজুড়ে প্রতীকী ম্যারাথন, বৃক্ষরোপণ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ২৪ এর গ্রাফিতি অঙ্কন ও প্রতিযোগিতা, শিশু শহীদদের স্মরণে বিদ্যালয়গুলোতে গান, কবিতা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, স্কুলগুলোতে জুলাই নিয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, জুলাইয়ের সামনের সারির যোদ্ধাদের সমাগম, প্রধান উপদেষ্টার ভিডিও বার্তা, সম্মাননা, মাদারস অব জুলাই সমাবেশ, স্পট লাইট অব জুলাই হিরোসসহ নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা প্রশাসক জানান, আগামীকাল (আজকে) বিকেল ৫টায় ‘কথা ক’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বে অব বেঙ্গল, ব্যান্ডদল চিম্বুক, শিল্পী হান্নান ও মাশা সংগীত পরিবেশন করবেন। পরে জুলাই অভ্যুত্থানকে নিয়ে নির্মিত জুলাই বিষাদ সিন্ধু’, দীপক কুমার গোস্বামী স্পিকিং ও ‘জুলাই বীরগাথাঁ’ প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যায় কণ্ঠশিল্পী পারসা মাহজাবীন ও ব্যান্ড দল শিরোনামহীন সংগীত পরিবেশন করবেন। রাত ৯টায় বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে শুরু হবে মিউজিক্যাল ড্রোন শো। বাংলাদেশ সরকার এবং চীন সরকার যৌথভাবে এই ড্রোন শো’তে ১ হাজার ড্রোন উড্ডয়নের মাধ্যমে জুলাইয়ের গল্প তুলে ধরা হবে। ড্রোন শো’র প্রথম ধাপে দেখানো হবে কীভাবে বাংলাদেশ জুলাই এসে পৌঁছালো। দ্বিতীয় ধাপে দেখানো হবে কেমন করে ১৪ তারিখে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে জুলাইয়ের সূচনা হলো।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আরো উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্যসচিব জাহিদুল করিম কচি। এছাড়া রাজনৈতিক ব্যক্তি, সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।