রাজধানীর হাজারীবাগে একটি বেসরকারি ছাত্রী হোস্টেল থেকে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনপিপি) কর্মী জান্নাতারা রুমীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের খবর দিয়েছে পুলিশ। হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদাত হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার সকালে জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার রোড এলাকায় ওই হোস্টেল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠান। ৩০ বছর বয়সী রুমী নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার মো. জাকির হোসেনের মেয়ে। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করা রুমী মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিনি এনসিপির ধানমন্ডি থানা শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন বলে দলের যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত জানান। খবর বিডিনিউজের।
পুলিশ কর্মকর্তা শাহাদাত বলেন, ৯৯৯ এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তাকে সিলিং ফ্যানের এর সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। তিনি জানান, হোস্টেলের ঘরগুলো হার্ডবোর্ড দিয়ে পার্টিশন করা, ফলে পাশের রুম থেকে কিছুটা দেখা যায়। সকালে গৃহকর্মী পাশের রুমের পার্টিশন বোর্ডের ফাঁক দিয়ে দেখেন রুমি সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলছেন। পরে চেঁচামেচি করলে আশপাশে লোকজন ছুটে আসে এবং পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। রুমির ঘরে ডিপ্রেশনের ওষুধ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, পারিবারিক কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে ক্রমাগত হুমকি ও বুলিংয়ের শিকার হয়ে এনসিপি নেত্রী জান্নাতারা রুমী পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুরাহা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন তার দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। তিনি বলেছেন, তথ্য প্রমাণসহ অভিযুক্তদের ফেসবুক আইডি, ফোন নম্বর পুলিশের কাছে দেওয়া হলেও তারা একজনের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়নি।
সহযোদ্ধা রুমীর মরদেহ দেখতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এসে সাংবাদিকদের সামনে এ বিষয়ে কথা বলেন সামান্তা। বাংলাদেশে সকল জুলাই যোদ্ধার জীবন হুমকির মুখে মন্তব্য করে– এমন পরিস্থিতিতে কী করে নির্বাচন হবে সেই প্রশ্ন তোলেন।
সামান্তা বলেন, ওসমান হাদির মস্তিষ্ক ভেদ করে যাওয়া বুলেট যেমন আমাদেরকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলেছে, রুমির ঝুলন্ত মরদেহ আমাদেরকে এই বাংলাদেশের সকল মানুষকে এবং আমরা যারা এনসিপিসহ জুলাইয়ের সম্মুখসারীর যোদ্ধা… সকলকে এই ঝুলন্ত অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি। আমরা দেখেছি জুলাই ঘোষণাপত্রে জুলাইয়ের যারা সম্মুখসারীর যোদ্ধা, শহীদ পরিবার এবং যারা আহত হয়েছেন, যারা এই পুরো অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করা হয় নাই।
রুমির ঘরে ডিপ্রেশনের ওষুধ পাওয়ার কথা জানিয়ে হাজারীবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদাত হোসেন বলেছেন, তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন বলে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। এক্ষেত্রে দুটি বিষয় আসছে তদন্তকারীদের সামনে। রুমীর চাচাতো ভাই মেহেদী হাসান সাংবাদিকদের বলেছেন, দুবার বিয়ে হয়েছিল তার বোনের। দুই সংসারই ভেঙে গেছে। দুই সংসারে দুটি সন্তানও রয়েছে রুমীর। তারা বাবার কাছে থাকে। এসব নিয়েও তার মধ্যে হতাশা ছিল। আবার গত ১৪ নভেম্বর আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ চলাকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মধ্য বয়সী এক নারী মারধরের ঘটনায় আলোচনায় আসেন রুমী। লাঠি হাতে রুমির পেটানোর দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার ঠিকানা, পারিবারিক পরিচয় ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তাকে হত্যা ও ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি তার পরিবারকেও হুমকি–ধামকি দেওয়া হচ্ছিল বলে এনসিপি নেতাদের অভিযোগ। তারা বলছেন, এসব কারণে গত কিছুদিন ধরে ট্রমার মধ্যে ছিলেন রুমী। দলের কর্মসূচিতেও তাকে বিমর্ষ দেখা যেত।
সেই প্রসঙ্গ ধরে সামান্তা শারমিন বলেন, রুমির প্রত্যেকটা অ্যাকাউন্টে, প্রত্যেকটা কমেন্টে এবং তার যে লাস্ট পোস্ট ছিল হাদির সুস্থতা কামনায় সেখানে পর্যন্ত তাকে বুলিং করা হয়েছে। গত ১৩ নভেম্বর রুমি ধানমন্ডি থানায় একটি জিডি দায়ের করে। সেখানে অ্যাকাউন্ট এবং ফোন নাম্বারসহ হুমকিদাতাদের লিস্ট সে উপস্থিত করে। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে তদন্ত করে যে তথ্য–উপাত্ত তাদের কাছে দায়ের করছি, প্রমাণ যেগুলা হাজির করছি, সেই মোতাবেক আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না।
এনসিপির এই নেত্রী বলেন, সবগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি আমাদের জুলাইযোদ্ধা যারা ছিলেন, যারা শহীদ পরিবার, তাদের ওপর ক্রমাগত হুমকি আসছে। এনসিপির একাধিক নেতাকর্মীর উপরে হামলা এবং হুমকি উভয়ই চলমান। এটা শুধু এনসিপির ব্যাপার নয়। স্পষ্ট করে বলতে চাই, এটা বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়। এখানে দিল্লি, পিন্ডি এবং নিউ ইয়র্কের আধিপত্যবাদবিরোধী যত সংগ্রামী যোদ্ধা আছে, সকলের প্রতি, সকলের জীবনের প্রতি হুমকি আছে।
সামান্ত বলেন, রুমির মৃত্যু আমাদেরকে ভয় দেয় না। আমরা বরং সাহসে বলিয়ান হচ্ছি। রুমি এবং হাদি আমাদের হিরো। আমরা মনে করি যে আমরা শাহাদাতকে ভয় পাই না। কিন্তু তার মানে এই নয় রাষ্ট্রের যে দুর্বলতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে দুর্বলতা একই সাথে… এই ময়নাতদন্ত এবং পুলিশি তদন্ত কীভাবে হবে সেটার প্রতি আমরা কিন্তু সজাগ দৃষ্টি রাখব। এখানে কোনোভাবেই যাতে তথ্য গোপন কর












