হাছান-হাস বৈঠক : আরো কাছে আসতে আগ্রহী দুই দেশ

| বৃহস্পতিবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘একমত’ হওয়ার কথা জানিয়েছেন নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস।

গতকাল বুধবার নিজ মন্ত্রণালয়ে হাসের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, আমরা উভয়ে আমাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে একমত হয়েছি এবং সেই লক্ষ্যে কাজ করব বলে আমরা আলোচনা করেছি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতও নতুন সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক উন্নয়ন করার জন্য, সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে, বাণিজ্যের ঝুড়ি আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে, আমেরিকান সরাসরি বিনিয়োগ আরও বাড়ানোর লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করবে বলে আলোচনা করেছেন।

পরে পিটার হাস সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের পারস্পরিক স্বার্থকে এগিয়ে নিতে আগামী মাসগুলোতে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার প্রতীক্ষায় আছি। তিনি বলেন, আপনাদের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ আজ পেয়েছি, যাকে আমি আগের দায়িত্ব থেকেই চিনি। আজ আমাদের প্রাথমিক সৌজন্য সাক্ষাৎ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রবাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে, জলবায়ু এবং ব্যবসার সুযোগ সম্প্রসারণের মতো বিষয় নিয়ে এবং রোহিঙ্গা সংকটের মতো পারস্পরিক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে কীভাবে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। খবর বিডিনিউজের।

গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্পর্কে ছিল নানা টানাপড়েন। সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চেয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভিসা নীতিও ঘোষণা করে তারা। জানানো হয়, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তারা ও তাদের স্বজনরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবে না। তফসিল ঘোষণার দুই দিন আগে সমঝোতার ‘শেষ চেষ্টা’ চালায় যুক্তরাষ্ট্র। আলোচনায় বসতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর চিঠি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির কাছে পৌঁছে দেয় ঢাকায় দেশটির দূতাবাস। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের কাছে নিজে চিঠি নিয়ে যান পিটার হাস। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আলোচনায় বসতে রাজি হয়নি। টানা হরতাল ও অবরোধের মধ্যেও ভোট হয় একতরফা। বিএনপিজামায়াতের বর্জনের এই নির্বাচনে ৭০টির মতো আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। তাদের মধ্যে জিতেও আসেন ৫৯ জন। সব মিলিয়ে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় পেয়েছে রেকর্ড ৬২ আসনে। বাকিগুলোর মধ্যে ছাড় দেওয়া ১১ আসনে জয় পেয়েছে জাতীয় পার্টি। দুটি পেয়েছে আওয়ামী লীগের শরিক জাসদ ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। একটি পেয়েছে বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে আসা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, তবে সেই আসনে দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের পাশে ছিল আওয়ামী লীগ।

যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যায়নে, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।’ তবে ১১ জানুয়ারি বঙ্গভবনে নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পিটার হাস। শপথ অনুষ্ঠান শেষে নতুন সরকারকে অভিনন্দনও জানান তিনি। গত মঙ্গলবার ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে দেখা করেন হাস, পরের দিনই (আজ) তিনি গেলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে।

বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নানা বিষয়ে সম্পর্ক থাকার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা জঙ্গি দমনে, উগ্রবাদ দমন মোকাবিলা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। সেটাকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে ভবিষ্যতে কাজ করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এই আলোচনায় নির্বাচনের কথাও উঠে এসেছে। তিনি বলেন, গত নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেকে বাংলাদেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে এসেছে, সে বিষয়টাও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে একটি ভালো নির্বাচন হয়েছে, প্রায় ৪২ শতাংশ উপস্থিতি; নির্বাচনের দিন অনেক কুয়াশা না হলে ভোটার উপস্থিতি আরও ১০ শতাংশ বেশি হত, এ সব বিষয় আলোচনা হয়েছে।

ভোটের আলোচনা কোন প্রসঙ্গে এসেছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিজে থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্নের অবতারণা করেননি। বরং আমি তাদের দেশ থেকে যে পর্যবেক্ষক এসেছে, সেজন্য ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমি বলেছি, ভালো একটা নির্বাচন হয়েছে।

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে হাছান বলেন, নির্বাচন নিয়ে নানা দেশের নানা মত ছিল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করছে, আমরা একযোগে আমাদের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি এবং অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা বা পশ্চিমা অস্বস্তি কাটল কিনাএমন প্রশ্নে মন্ত্রী আবার বলেন, আমরা উভয় দেশ আমাদের সম্পর্কটাকে আরও ঘনিষ্ঠ করার লক্ষ্যে এবং আমাদের সরকার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে আরও একযোগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রে তেলগ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের সমুদ্রে প্রচুর তেল আছে সেটা আমেরিকান একটি কোম্পানির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এটি উত্তোলন করতে পারলে আমাদের দেশ অর্থতৈকভাবে উপকৃত হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আমাদের মধ্যে আছে কিছুটা। সেটা নিয়েও আলোচনা করেছি। র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কী কথা হয়েছেএই প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।

হাছান মাহমুদ বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আমরা সব সময় তাদের সহযোগিতা চেয়ে এসেছি। আজকে সেটি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছি। সেই লক্ষ্যে আমরা একযোগে কাজ করব বলে একমত হয়েছি। রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে ফেরত পাঠানো, এর বিকল্প কিছু নেই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে শুরুতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মনযোগ আকর্ষণ করলেও রাশিয়াইউক্রেন যুদ্ধ, গাজা ইস্যুর কারণে রোহিঙ্গা থেকে অনেকটা সরে গেছে। সেজন্য তার সঙ্গে যেটা আলোচনা করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসম্পর্কের ধাপ পরিবর্তন হবে পাঁচ বছরে
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জরুরি ছিল : এডিবি