সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন (ডেথ রেফারেন্স) ও আপিলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের পেপারবুক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়। বেলা ১১টায় শুনানি শুরুর পর পেপারবুক থেকে জজ আদালতের রায়ের আদেশের অংশ পড়া শুরু করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শামীমা সুলতানা দিপ্তি। এরপর পর্যায়ক্রমে মামলার এজাহার, চার্জশিট, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও জেরা এবং রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী তুলে ধরবেন শুনানিতে। খবর বিডিনিউজের।
পেপারবুক উপস্থাপন শেষ হলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর আসামিপক্ষ তাদের আপিলের উপর যুক্তি তুলে ধরবে। এসব যুক্তিতর্কের জবাব দেবেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। এভাবেই স্পর্শকাতর এই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি এগিয়ে যাবে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির মঞ্জু। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার–টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে গুলি করে হত্যা করা হয় সিনহা মো. রাশেদ খানকে। তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত মেজর, যিনি স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ার পর কয়েকজন তরুণকে সঙ্গে নিয়ে ভ্রমণ বিষয়ক তথ্যচিত্র বানানোর জন্য কঙবাজারে গিয়েছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের দায়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর ফাঁসির রায় দেয় কক্সবাজারের বিচারিক আদালত।
সিনহাকে হত্যায় সহযোগিতা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব এবং পুলিশের তিন সোর্স মো. নুরুল আমিন, মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। মামলার ১৫ আসামির মধ্যে বাকি চার পুলিশ সদস্য এবং তিন এপিবিএন সদস্যকে বেকসুর খালাস দেয় আদালত।
আইনি বাহিনীর বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার করে সাড়ে চার বছর আগে মেজর সিনহাকে হত্যার ঘটনা সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিয়েছিল দেশজুড়ে। ওই ঘটনায় সিনহার বোন মামলা করার পর ১২ পুলিশসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন র্যাবের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম। একজন আইনের লোক হয়েও ওসি প্রদীপ কীভাবে মাদকবিরোধী অভিযানের নামে বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে খুন করে যাচ্ছিলেন টাকার জন্য, তা উঠে আসে তার তদন্তে।