নগরের কালুরঘাট বিএফআইডিসি রোড সংলগ্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) এক দশমিক ৭১ একর জায়গায় নির্মাণ করা হচ্ছে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আইসিটি (তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি) খাতে দক্ষ জনশক্তি ও ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ‘বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ’। আজ শনিবার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ ফলক নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন। সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, পুরো সেন্টার ভবন হবে ৬ তলা বিশিষ্ট। প্রতি ফ্লোরের আয়তন ৬ হাজার বর্গফুট। নির্মাণের পর সেন্টারটিতে আইসিটি খাতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। মূলত, এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের আইটিতে দক্ষ জনশক্তি হিসাবে গড়ে তোলার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা করা, একাডেমিয়া বা আইটি ইন্ড্রাস্ট্রির মধ্যে সেতুবন্ধন এবং আইটি/আইটিইএস সম্পর্কিত খাতে দেশের যুব সমাজের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সেন্টারটি গড়ে তোলা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ নির্মাণ প্রকল্পের উপ-পরিচালক আবু রাফা মো. আরিফ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ভিত্তি প্রস্তরের মাধ্যমে মূল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হবে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেন্টারটি কীভাবে ভূমিকা রাখবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের যে ইয়ং জেনারেশন রয়েছে তারা যেন আইসিটি খাতে দক্ষতা অর্জন করে এবং বিশ্বব্যাপি ফ্রিল্যান্সিং এর যে ক্ষেত্র সেখানে যেন তারা আগ্রহ প্রকাশ করে সে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে এ সেন্টার করা হচ্ছে।
চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন আজাদীকে বলেন, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ আমাদের জন্য বিরাট পাওয়া। দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে এ সেন্টার। চট্টগ্রামবাসী এর সুফল পাবে। ‘চসিকের জায়গায় গড়ে ওঠা পার্ক থেকে সিটি কর্পোরেশন কিভাবে লাভবান হবে?’ জানতে চাইলে প্রশাসক বলেন, ১৫ বছর পর সেন্টারটি আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বিএফআইডিসি রোডে সিটি কর্পোরেশনের ১১ দশমিক ৫৫১ জায়গা রয়েছে। পুরো জায়গায় ২০২১ সালের জুনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ১১ মার্চ সিটি কর্পোরেশন এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। চুক্তির আওতাভুক্ত জায়গার মধ্যেই শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। গত আগস্ট মাসে এ সেন্টার নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন থেকে এক দশমিক ৭১ একর জায়গা বুঝে নেয় হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। চুক্তির খসড়া থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, হাইটেক পার্ক নির্মাণে সম্পূর্ণ অর্থ ব্যয় করবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। তিন বছরের মধ্যে শেষ হবে নির্মাণ কাজ। লভ্যাংশ চসিক ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ৫০ শতাংশ করে পাবে।
হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। ৫২২ কোটি ৫৪ লাখ ৯২ হাজার টাকায় অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ৮টি জেলা তথা চট্টগ্রাম, সিলেট, কুমিল্লাহ, নাটোর, বরিশাল, মাগুরা, নেত্রকোণা ও রংপুর জেলায় পৃথক সেন্টারটি নির্মাণ করার কথা।
এদিকে অনুমোদিত প্রকল্পটির আওতায় ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় দরপত্র আহ্বান করে। একইবছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। ৪৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় চট্টগ্রামে ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ নির্মাণে ‘হোসেন কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড’কে নির্মাণে চূড়ান্ত করা হয়। প্রকল্পের মেয়াদ আছে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে প্রকল্প অনুমোদন হলেও জায়গার অভাবে চট্টগ্রামে আইটি ট্রেনিং ও কিউবেশন সেন্টার নির্মাণ শুরু করা যাচ্ছিল না। যদিও ইতোমেধ্যে রাজশাহী ও নাটোরে আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক মার্কেটে ‘সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক’ নির্মাণে সিটি কর্পোরেশন ও হাইটেক পার্ক কর্র্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তৎকালীন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন কালুরঘাটে চসিকের ভূমিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব দেন। অনুষ্ঠান শেষে মেয়র ও হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগমকে জায়গাটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন। পরদিন দাপ্তরিক চিঠি দিয়ে চসিকের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গা চান হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারি তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার কালুরঘাটের জায়গাটি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সীতাকুন্ডস্থ জঙ্গল সলিমপুরে তিনটি জায়গা পরিদর্শন করেন। পরে তিনি চসিকের জায়গাটি বাছাই করেন এবং একইবছরের ১১ মার্চ উভয় সংস্থার মধ্যে সমাঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়।