চট্টগ্রাম কলেজ মাঠ বা প্যারেড মাঠের ওয়াকওয়েতে হাঁটাহাঁটি সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ মাঠটি বন্ধ রেখেছে। দৈনিক ৫শ থেকে ৬শ মানুষ এখানে হাঁটাহাঁটি করতেন। বিশেষ করে বয়স্ক যারা ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত তারা এখানে সকাল-সন্ধা হাঁটতেন। তবে কিশোর ও তরুণদের খেলাধুলা বন্ধ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, মাঠ জুড়ে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত ক্রিকেট ও ফুটবল খেলছে কিশোর-তরুণরা। গেটে তালা থাকায় দেয়াল টপকে তারা ভেতরে ঢোকে। স্থানীয়রা বলছেন, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই মাঠে হাঁটাহাঁটি করা লোকজন বলছেন, হাঁটাহাঁটি করলে শরীর-মন ভালো থাকে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় নেওয়া দরকার। অন্তত দিনের কিছুটা সময় এটা চালু করা হোক। তারা চাইলে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ওয়াকওয়েতে নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করেন এমন অনেকেই হাঁটাহাঁটি বন্ধের বিষয়টি মানতে পারছেন না। তাদের একজন মো. হাসান (৫৫)। বাকলিয়ার সৈয়দ শাহ রোডের বাসা থেকে প্যারেড মাঠে নিয়মিত আসতেন তিনি। ডায়াবেটিসের কারণে মূলত তার প্রাতঃভ্রমণ। গতকাল ভোরে মাঠের পাশে সড়কের ফুটপাত ধরে তিনি হাঁটছিলেন। তিনি আজাদীকে বলেন, ফজরের নামাজের পরপর আমি মাঠে ঢুকতাম। বাসায় ফিরতাম সাড়ে ৬টায়। মাঠের চারপাশের ওয়াকওয়েতে ১০ বার রাউন্ড দিতাম। এছাড়া হালকা ব্যায়াম করতাম। মাঠ বন্ধ থাকায় এখন ফুটপাত ধরে হাঁটছি। লিটন নামের একজন বলেন, কর্তৃপক্ষ চাইলে সকাল-সন্ধা কিছু সময়ের জন্য মাঠ খোলা রাখতে পারেন। শরীর-মন ঠিক রাখতে আমরা হাঁটাহাঁটি করি। হাঁটাহাঁটি করা ভালো। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটা গুরুত্বপূর্ণ। সেটি না করে কর্তৃপক্ষ গেটে তালা ঝুলিয়ে রাখছেন। তিনি আরও বলেন, গেটে থাকা দারোয়ানকে গেট খুলতে বললে খুলেন না। পারলে তরুণদের মতো দেয়াল টপকে মাঠে ঢুকতে বলেন। এটা কেমন কথা!
মাঠে খেলতে আসা তরুণ রাকিব আজাদীকে বলেন, ঘরে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই কিছুদিন ধরে নিয়মিত মাঠে চলে আসছি। বন্ধুদের সাথে ক্রিকেট খেলি। তবে গেট বন্ধ থাকায় দেয়াল টপকে মাঠে ঢুকতে হয়। গেট খুলে দিলে সুবিধা হবে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে মাঠে হাঁটাহাঁটিসহ সবকিছু সচল ছিল। ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রায় ৩শ থেকে ৪শ মানুষ ওয়াকওয়েতে হাঁটতেন ও নানারকম ব্যায়াম করতেন। আবার সন্ধার আগে থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রায় ২শ থেকে ৩শ মানুষ হাঁটতেন। চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ মুজিবুল হক আজাদীকে বলেন, আমি নিজেও মাঠে অন্যদের সাথে নিয়মিত হাঁটতাম। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য হাঁটাহাঁটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখন তো মহামারি চলছে। বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। তাই সাময়িক সময়ের জন্য মাঠে হাঁটাহাঁটিসহ সবকিছু বন্ধ রাখা হয়েছে। তরুণদের প্রসঙ্গে বলেন, ওরা কথা শুনছে না। দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ছে।
তিনি বলেন, কলেজের ভেতরে থাকা মসজিদে বাইরের লোকজন নিয়মিত নামাজ আদায় করতেন। কিন্তু এখন বন্ধ করে দিয়েছি। শুধু জুমার নামাজের জন্য গেট খুলে দেওয়া হয়। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ একটু কমে এলে সবকিছু খুলে দেব। কিছুদিন ধৈর্য ধরতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে মাঠটিকে ঘিরে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তখন থেকে হাঁটাহাঁটির জন্য প্যারেড মাঠ জনপ্রিয় হয়।