রবির ‘নোবেল’ প্রাইজ, মেডেল
চুরি এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়
বেশ কিছুদিন ধরে করোনার এই সময়েও কাজের প্রচণ্ড চাপ। সেই চাপ কমানোর জন্যে দেখছিলাম ২০১১ সালে রিলিজ হওয়া বাংলা ছবি, ‘নোবেল চোর’। শান্তিনিকেতনের ‘উত্তরায়ণ’ থেকে ২০০৪ সালে উধাও হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কার বাবদ পাওয়া সোনার ‘মেডেল’। এই চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিঠুন চক্রবর্তী ও সদ্য প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ‘মেডেল’ চুরির ঘটনাটি সত্য হলেও ছবির পুরো গল্পটা কল্পনাপ্রসূত। পরিচালক সুমন ঘোষ সোয়া দুই ঘন্টার এই ছবিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কীভাবে বাঙালির হৃদয়ে শ্রদ্ধার আসনে বসে আছেন, বাঙালির সত্ত্বায়, প্রতিদিনের চিন্তা-চেতনায় কবির অবস্থান তা তুলে ধরতে চেয়েছেন। শান্তিনিকেতন-লাগোয়া বোলপুর সাঁওতাল গ্রামের ভানু নামক এক গরিব চাষীর চরিত্রের মধ্য দিয়ে গল্পটি এগিয়েছে। ভালো লাগলো, কষ্টও লাগলো এই কারণে যে এই অমূল্য সম্পদটি চিরতরে হারিয়ে গেল। মেডেলটি আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যদি সুইডিশ নোবেল কর্তৃপক্ষ পরে এর একটি ‘রেপ্লিকা’ দিয়েছিল। ছবিটি যেদিন দেখেছি সেদিন ছিল বাঙালির জীবনে একটি বিশেষ দিন। বিশেষ দিন এই কারণে, এই দিনে (১৩ নভেম্বর) আজ থেকে ১০৭ বছর আগে ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে তার অসামান্য সৃষ্টির জন্যে ‘নোবেল পুরস্কার’ পান। তিনিই প্রথম এশীয় কিংবা বলা চলে প্রথম নন-ইউরোপীয় যিনি এই আন্তর্জাতিক সম্মান ‘নোবেল পুরস্কার’ ছিনিয়ে এনে বাংলা সাহিত্য, সংগীত, কৃষ্টিকে বিশ্বসভায় উপস্থিত করলেন। ছবি শেষে ভাবি, লন্ডনের পাতাল রেলে ১৯১২ সালে তার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগটি যদি আর ফিরে পাওয়া না যেত তাহলে কী হতো? সেই ব্যাগে ছিল ‘গীতাঞ্জলীর’ ইংরেজি অনুবাদ। কবির নিজের করা ইংরেজি অনুবাদ তার ইংরেজ বন্ধু, শিল্পী ও আর্ট সমালোচক, উইলিয়াম রোদেনস্টাইনকে দেখাবেন, এই চিন্তা থেকে যাতে রোদেনস্টাইন কবি ইয়েট্সকে (ডব্লিউ বি ইয়েটস) বলে তার এই বইয়ের জন্যে একটি ভূমিকা লিখিয়ে নেন। পাতালরেল ভ্রমণের সময় ব্যাগটি ছিল তার সফর সঙ্গী পুত্র, রথীন্দ্রনাথের কাছে। একই সফরে ত্রিপুরা রাজপরিবারের সৌমেন্দ্র দেব বর্মন ও কবির মেয়ের জামাইও কবির সঙ্গী ছিলেন। সেটি ছিল কবির দ্বিতীয় বারের মত বিলেত ভ্রমণ। প্রথম গিয়েছিলেন ১৮৭৮ সালে। যাই হোক, হোটেল পৌছে টের পাওয়া গেল যে ব্যাগটি পাতাল ট্রেনে ফেলে আসা হয়েছে। মাথায় বাজ পড়ার মত। ইংরেজি অনুবাদের আর কোন কপি নেই। দৌড় পাতাল স্টেশনে। ভাগ্য সুপ্রসন্ন। আন্ডারগ্রাউন্ড স্টেশনের ‘লস্ট এন্ড ফাউন্ড’ বিভাগে গিয়ে পাওয়া গেল হারিয়ে-যাওয়া বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য রত্ন ভাণ্ডার, ‘গীতাঞ্জলীর’ ইংরেজি অনুবাদের পাণ্ডুলিপি। হারাতো যদি ব্যাগটি কলকাতার কোন রেলস্টেশনে, তাহলে যে নির্ঘাত চিরদিনের তরে হারিয়ে যেত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তারপরের ইতিহাস তো সবার জানা।
ফিরে যাই নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি সংবাদ যেদিন এলো সেদিনের শান্তিনিকেতনে। খুব সম্ভবত নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদটি শান্তিনিকেতনে পৌঁছায় পরদিন, ১৪ সেপ্টেম্বর। পার্থসারথি চট্টপাধ্যায়ের বর্ণনায়, ‘‘সেদিন ছিল রাসপূর্ণিমা। দিনেন্দ্রনাথ, রথীন্দ্রনাথ, নেপালচন্দ্র রায় ও কয়েকজন শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে রবীন্দ্রনাথ জোৎসনালোকিত রাতে বেড়াতে যাবেন রেললাইনের পূর্বধারে। পারুলডাঙার শালবনের দিকে। আশ্রম থেকে যাওয়ার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এক ডাককর্মী কবিকে দেন একটি টেলিগ্রাম। পাছে দেরি হয়ে যায় ভেবে কবি টেলিগ্রামটি পকেটে রেখে এগোতে থাকেন গন্তব্যপথে। কিন্তু সঙ্গীদের কৌতূহলে সন্ধ্যা-ঘনিয়ে আসা অস্পষ্ট আলোয় তিনি খুলে পড়লেন টেলিগ্রামটি। কবির তিন অনুরাগী, মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ও চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে প্রেরিত বার্তায় জানান, ‘ঘড়নবষ ঢ়ৎরুব পড়হভবৎৎবফ ড়হ ুড়ঁ. ঙঁৎ পড়হমৎধঃঁষধঃরড়হং’ অর্থাৎ ‘আপনাকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে, আমাদের অভিনন্দন’। প্রথমে কবি মনে করেছিলেন কোথাও একটা ভুল রয়ে গেছে। বার কয়েক পড়লেন তিনি, তারপর অনেকটা নিরাসক্তভাবে সঙ্গী অধ্যাপক নেপালচন্দ্র রায়ের হাতে দিয়ে বলেন, ‘নিন নেপালবাবু, আপনার ড্রেন তৈরি করবার টাকা’। সে সময় আশ্রমে টাকার সংকট চলছিল। একটি পাকা নালা অর্ধেক তৈরি হয়ে কাজটি অর্থাভাবে আর এগোয়নি। এদিকে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদে গোটা শান্তিনিকেতনে আনন্দ উৎসবের বন্যা বইতে শুরু করে। বড় দাদা, দার্শনিক দ্বিজেন্দ্রনাথ ছুঁটে এসে ছোট ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘রবি, তুই নোবেল পুরস্কার পেয়েছিস’। সোমেন্দ্রনাথ, কবির দেড়-দু’বছরের পিঠোপিঠি বড় ভাই। তিনি ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী। তার ছিল চমৎকার গানের গলা, কিন্তু তখন মানসিকবিকারগ্রস্ত। ছোট ভাইয়ের নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তিতে খুশিতে টগবগ সৌমেন্দ্রনাথ পুরো বাড়ি জুড়ে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকেন, ‘রবি প্রাইজ পেয়েছে, রবি প্রাইজ পেয়েছে। সাথে এক দল নাতি-নাতনি। তাদের উদ্দেশ্যে নিচু গলায় বলেন, ‘জানিস, গীতাঞ্জলীর সব কটা কবিতা কিন্তু আমার লেখা। রবি আমার কাছ থেকেই তো নিয়েছে’। নাতি-নাতনিরা বলে উঠেন, ‘তাহলে তুমি কেন এতো আনন্দ করছো’? রেগে সোমেন্দ্রনাথ বলেন, ‘তোদের এত হিংসে কেন রে, আমার ছোট ভাই নোবেল প্রাইজ পেয়েছে, আমি আনন্দ করব না তো কে করবে? কার লেখা তাতে কী’? শান্তিনিকেতনের ছাত্রাবাসের রান্না ঘরে ঢুকে অজিতকুমার চক্রবর্তী চিৎকার করে বলেন, ‘গুরুদেব নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন’। নোবেল প্রাইজকে নিয়ে মজার মজার ঘটনাও ঘটে আশ্রমে। আশ্রমের কিশোর শিক্ষার্থী, প্রমনাথ বিশী তার স্মৃতিতে লেখেন, ‘ডান পাশে যে ছেলেটি বসিয়াছিল সে বলিল, ‘ওটা ঘড়নষব প্রাইজ, গুরুদেব মহৎ লোক বলিয়া তাঁহাকে দেওয়া হইয়াছে’। বাম পার্শ্বের ছেলেটি বলিল, ‘ওটা ঘড়াবষ প্রাইজ, গুরুদেব একখানা নভেল লিখিয়া পাইয়াছেন’। কিন্তু নোবল না নোভেল যেরকম প্রাইজই হোক-না কেন, আগামী চার দিনের মধ্যে কেহ আর হোম-টাস্ক দাবি করিবে না- সে চার দিনের মধ্যে কত কী ঘটিয়া যাইতে পারে’।
বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র ছিলেন কবি গুরুর অতি ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি ১৯১৩ সালের ১৯ নভেম্বর লেখেন, ‘বন্ধু, পৃথিবীতে তোমাকে এতদিন জয়মাল্য ভূষিত না দেখিয়া বেদনা অনুভব করিয়াছি। আজ সেই দুঃখ দূর হইল। দেবতার এই করুনার জন্য কি করিয়া আমার কৃতজ্ঞতা জানাইব? চিরকাল শাক্তিশালী হও, চিরকাল জয়যুক্ত হও। ধর্ম তোমার চির সহায় হউন’। এখানে উল্লেখ্য, বিজ্ঞানের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন ভারতের ভাবি গৌরব। বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু তখন প্রবাসে। গবেষণার জন্যে তার চাই প্রচুর টাকা। সে কথা জেনে রবি ঠাকুর ত্রিপুরার মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্যের নিকট বিষয়টি তুলে ধরলেন। কবির প্রতি ছিল রাজার অশেষ শ্রদ্ধা। তার সম্মানে রাজা দিলেন দশ হাজার টাকা। সে সময় এই পরিমাণ টাকা আজকের তুলনায় বিশাল অংকের। এই টাকা পেয়ে জগদীশচন্দ্র যে অত্যন্ত উপকৃত ও খুশি হয়েছিলেন তা বলা বাহুল্য। বিজ্ঞানের প্রতি যে বিশ্বকবির আগ্রহ প্রগাঢ় ছিল তা টের পাই বিজ্ঞানীকে লেখা কবির এই চিঠির অংশে, ‘তোমার কাছে জ্ঞানের পন্থা ভিক্ষা করিতেছি- আর কোনো পথ ভারতবর্ষের নহে- তপস্যার পথ, সাধনার পথ আমাদের’। কবির নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির সংবাদটি রোদেনস্টাইনকে পান ১৯১৩ সালের ১৫ নভেম্বর। আনন্দিত হয়ে রবীন্দ্রনাথকে লেখেন, ‘আজ আমরা সবাই ছুটি নিলাম, ইউরোপ আপনাকে যে সম্মানের রাজবেশ পরালো তারই আনন্দে। প্রিয় বন্ধু আপনাকে জানাই হৃদয় উৎসারিত অভিনন্দন’।
নোবেল পুরস্কার পাবার পর কলকাতার সুধীজনেরা কবির প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেন। অথচ এর কিছুদিন আগ পর্যন্তও তার লেখালেখি নিয়ে তারা সমালোচনায় মেতে উঠেছিলেন, তার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে অনেক লেখক, পাঠক তার লেখাকে ঘিরে কটূক্তি করেছিলেন। অন্যের লেখা চুরি করে লিখেছেন তেমন অসত্য অভিযোগও আনেন কেউ কেউ। অভিযোগ এলো ‘চোখের বালির’ বিধবা বিনোদিনী, পাঁচকড়ি বন্দোপাধ্যায়ের লেখা ‘উমা’র প্রধান নারী চরিত্রটিও বিধবা। কবি সেটি অনুকরণ করেছেন। এমনকি নোবেল পুরস্কার পাবার পরও অনেকে এটিকে খাটো করে দেখানোর জন্যে বলতে থাকেন, পুরস্কার যাতে পান সে কারণে তিনি ‘সার্টিফিকেটের’ জন্যে এলিয়টের কাছে ধর্ণা দিয়েছেন বন্ধু রোটেনস্টাইনের মাধ্যমে। কবি সব জানতেন। সব সহ্য করেছেন। কোন মন্তব্য করেননি। তবে তার মনের মধ্যে আপনাতে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখি শান্তি নিকেতনে ২৩ নভেম্বর তাকে দেয়া এক সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে, যখন তিনি আয়োজকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আজ আমাকে সমস্ত দেশের নামে আপনারা যে সম্মান দিতে এখানে উপস্থিত হয়েছেন তা অসংকোচে সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করি এমন সাধ্য আমার নেই। এতকাল আমার রচনা আপনাদের তৃপ্তি দিতে পারলো না। আর এখন বিদেশের কাছে রচনার জন্য সম্মানলাভ করবামাত্র আপনারা আমার স্তুতি করতে এলেন। —-আমি সমুদ্রের পূর্বতীরে বসে যাঁকে পূজার অঞ্জলি দিয়েছিলাম তিনিই সমুদ্রের পশ্চিম তীরে সেই অর্ঘ্য গ্রহণ করবার জন্য যে তার দক্ষিণ হস্ত প্রসারিত করেছিলেন সে-কথা আমি জানতুম না। তাঁর সেই প্রসাদ আমি লাভ করেছি এই আমার সত্য লাভ। যাই হোক, যে কারণেই হোক, আজ য়ুরোপ আমাকে সম্মানের বরমাল্য দান করেছেন। তার যদি কোন মূল্য থাকে তবে সে কেবল সেখানকার গুণীজনের রসবোধের মধ্যেই আছে, আমাদের দেশের সঙ্গে তার কোনো আন্তরিক সম্বন্ধ নেই। নোবেল প্রাইজের দ্বারা কোন রচনার গুণ বা রস বৃদ্ধি করতে পারে না’। তার এমনতর বক্তব্যে উপস্থিত অনেকেই আঘাত পেয়েছিলেন, অপমানিত বোধ করেছিলেন। অনেকেই কবির এমন বক্তব্যের আকস্মিতায় স্তব্ধ, ক্ষুদ্ধ কেউ বা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেন। সেই সম্বর্ধনার আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, এ কে ফজলুল হক, হীরেন্দ্রনাথ দত্ত, সি এফ এন্ড্রুজ ও অন্যান্য। সে অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। তাকে মালাও পরিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী। এই ব্যাপারে সৌরীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘এখানকার পাঠক সমাজ যদি তখনকার যুগের এসব সমালোচনায় পড়েন বুঝবেন রবীন্দ্রনাথকে কী ভীষণ অনল সাগরের তরঙ্গ বয়ে লিখতে হয়েছিল নোবেল প্রাইজ পাবার পূর্ব দিন পর্যন্ত। তিনি সত্য কথাই বলে গিয়েছিলেন- এত বিদ্বেষ, এত অপযশ কোন দেশের কোন কবিকে বোধ হয় সহ্য করতে হয়নি’। এই প্রসঙ্গে সীতা দেবী ‘পুণ্যস্মৃতি’তে লিখেছেন, ‘আগে শুনিয়াছিলাম তিনি বক্তৃতা করিবেন না, অভিনন্দনের উত্তরস্বরূপ কিছুকাল পূর্বে রচিত ‘এ মনিহার আমায় নাহি সাজে’ গানটি গাহিবেন। কিন্তু তাকে প্রিয়তমের মত ভালোবাসিয়াছে এমন বাঙালির যেমন অভাব নেই, এবং ছিলও না, তেমনি চিরকাল তাহাকে বিদ্বেষ করিয়াছে এবং লোকচক্ষে হীন করিতে চেষ্টা করিয়াছে এমন বাঙালিরও অভাব তখন ছিল না। এইরকম কয়েকটি ব্যক্তি সভাস্থলে খুব সামনে আসিয়া বসিয়াছিলেন। ইহাদের দেখিয়াই বোধ হয় রবীন্দ্রনাথের মত পরিবর্তন হইয়া গেল। কপটতা ও অসত্যের প্রতি তাঁহার যে মর্মান্তিক ঘৃণা ছিল তাহা অনলবর্ষী ভাষায় রূপ ধরিয়া বাহির হইয়া আসিল’।
পরে অবশ্য রবীন্দ্রনাথ এর জন্যে সুর নরম করে বলেছিলেন, ‘আমি আপনাদের সম্মান প্রত্যাখান করেছিলুম শুধু এইটুকু মনে রাখলে আমার উপর অবিচার করা হবে। আমি আপনাদের কাছে প্রার্থনা করছি, আপনারা আমার দিক থেকে ঐ ঘটনাটি বুঝতে চেষ্টা করুন। কবি যখন আপনার হৃদয়ের আনন্দের গান গেয়ে উঠে, তখন তার সবচেয়ে দুঃখ হয় যদি সে তার দেশের, তার ঘরের ভায়েদের সহানুভূতি না পায় এবং তার সবচেয়ে বড় সুখ, সবচেয়ে বড় পুরস্কার সে পায় তাদের হৃদয়ের উচ্ছ্বসিত প্রীতিতে। …. আমি জগতের হাত থেকে সম্মান নিতে পারি কিন্তু আমার মার হাত থেকে, আমার ভায়ের হাত থেকে, প্রাণের প্রীতি ছাড়া কিছু গ্রহণ করতে পারি না। ঐ প্রীতি আমি প্রাণ ভরে চাই- আপনারা আমায় তাই দিন’।
লেখক : প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট