হল্যান্ড থেকে

বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া | শনিবার , ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

কলম্বিয়া, ক্যারিবিয়ান সাগরঘেঁষা দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ। আয়তনে (১১.৪১.৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার) অনেক বড় হলেও দেশটির জনসংখ্যা মাত্র চার কোটি একানব্বই লক্ষ। এদেশের শতকরা ৮,% ভাগ পানি। আয়তনে বাংলাদেশের (.৪৮.৪৬০ কিলোমিটার) চাইতে প্রায় ১৩ গুণ বড়। হল্যান্ড থেকে আকাশপথে রাজধানী বোগোতা পৌঁছুতে সময় লাগে বিরতিহীন সাড়ে দশ ঘন্টা। আমার গন্তব্যস্থল সেখানেই শেষ নয়। বোগোতা থেকে আবার আকাশপথে উড়াল দেয়া। পৌনে দুই ঘন্টা উড়াল দেবার পর রিওচা‘ (Rioacha)। ছোট্ট শহর। সেখানেই অনুষ্টিত হলো ১৫তম আন্তর্জাতিক মাইগ্রেশন সামিট, যা গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এন্ড ডেভেলপমেন্টবা সংক্ষেপে জিএফএমডিহিসাবে পরিচিত। এই সম্মেলনে যোগ দেবার সম্ভাবনা প্রায় ছয় মাস আগ থেকে হলেও শতভাগ নিশ্চিত হতে পারছিলাম না যাওয়া হবে কিনা। কেননা ফান্ডিং এর ঘাটতি ছিল। ইউরোপের অর্থশালী দেশগুলি মাইগ্রেশন বা অভিবাসন ইস্যুতে আগের মত আর আগ্রহী নয়। আর সে কারণে এই বিষয়কে ঘিরে কোন আন্তর্জাতিক সামিট, আলোচনা আয়োজনে আগের মত ফান্ড দিতে তারা আগ্রহী নয়। আমেরিকা সহ গোটা ইউরোপে এখন অভিবাসনের বিরুদ্ধে সরকারি পর্যায়ে এক ধরণের অঘোষিত জিহাদচলছে। অনুন্নত দেশগুলি থেকে অভিবাসী বা শরণার্থী যাতে আমেরিকাইউরোপ প্রবেশ করতে না পারে তার তাবৎ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এর শুরু অনেক আগ থেকে। তবে তা বেড়েছে দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে। তার অনুসৃত পদক্ষেপে উৎসাহিত হয়ে ইউরোপের চরম ডান সরকারগুলি একটির পর একটি নূতন পদক্ষেপ নিচ্ছে। মাইগ্রেশন বা অভিবাসনকে অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করার তাবৎ প্রচেষ্টা চলছে। ট্রাম্প তো বলেই বেড়ান, মেক্সিকো থেকে যে সমস্ত অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে তারা সবাই ক্রিমিনাল, ধর্ষণকারী, খুনি ইত্যাদি ইত্যাদি। ঢালাও অভিযোগ। এমন নয় যে ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মাইগ্রেশনকে ঘিরে এই ধরণের নেতিবাচক ‘নেরেটিভসশুরু হয়েছে। এর শুরু অনেক আগ থেকেই। আর সে কারণে জাতিসংঘের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল কফি আনান নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দফতরে ২০০৬ সালে আয়োজন করেন এক ননফর্মাল আন্তর্জাতিক অভিবাসী সম্মেলন। লক্ষ্য অভিবাসনকে কীভাবে অর্থবহ করে তোলা যায় এবং কীভাবে তা উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে এই ব্যাপারে পরামর্শ ও রাস্তা বের করা।

জাতিসংঘের সেই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় পরবর্তী বছর থেকে অর্থাৎ ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর মাইগ্রেশন ইস্যুকে ঘিরে একএকটি দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সেই থেকে এই জিএফএমডির যাত্রা শুরু। ২০০৭ সাল থেকে গত ১৯ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি একটি বিশাল যজ্ঞ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমন্ত্রিত ও নির্বাচিত প্রায় ৩০০৪০০ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিনিধি চারদিনের এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন। এক একটি দেশ এই বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করে থাকে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ঢাকায় আয়োজন করেছিল এই সম্মেলনের। তাতে উপস্থিত প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল ৬০০র বেশি। আমার সৌভাগ্য যে এই পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিটি সম্মেলনে যোগ দেবার সুযোগ হয়েছে। তাতে সম্মেলনে অংশ নেয়া ছাড়াও নুতন নুতন দেশ দেখার সুযোগ হয়েছে। সুযোগ হয়েছে আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কিছু দেশ দেখার। নিজ খরচে হয়তো এতগুলি দেশে যাওয়া সম্ভব হতোনা। সম্মেলনে নির্বাচিত হবার পেছনে কিছু বিষয়ও রয়েছে। এই বিশাল যজ্ঞের (সম্মেলন) দুটি অংশ রয়েছেসরকারি এবং সিভিল সোসাইটি বা বেসরকারি পর্ব। সিভিল সোসাইটি কমিটি ও সরকারের কমিটি মিলে শলাপরামর্শ করে সম্মেলনের বিষয়, স্থান, সময়, বক্তা, প্রতিবেদন ইত্যাদি তৈরী করা হয়। সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন সরকার। সিভিল সোসাইটি বা বেসরকারি প্রতিনিধি নির্বাচন করার জন্যে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩৫ অভিবাসনবিশেষজ্ঞের একটি ইন্টারন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি। বাংলাদেশ থেকে এই কমিটিতে রয়েছেন একজন। তিনি হলেন ওয়ারবি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান সাইফুল হক এবং হল্যান্ডের ডায়াস্পোরা সংগঠনের প্রতিনিধি হিসাবে রয়েছি আমি। সম্মেলনে যোগ দেবার জন্যে কয়েকশত প্রতিনিধি আবেদন করেন। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত ও সীমিতঅর্থায়নের কারণে যোগ্যতা থাকা সত্বেও এই সম্মেলনে যোগ দেবার সুযোগ অনেকের হয়ে উঠেনা। তবে কেবল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হলেই যে সম্মেলনে নির্বাচিত হওয়া যাবে তেমন কোন গ্যারান্টি নেই। তার জন্যে হতে হবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনকে সক্রিয়, বিষয় সম্পর্কে থাকতে হবে যথেষ্ট জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা। ২০০৭ সালে বেলজিয়ামে প্রথম জিএফএমডিসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। চলতি বছর অনুষ্ঠিত হলো দক্ষিণ আমেরিকার দেশ, কলোম্বিয়ার রিওচা শহরে। কয়েক বছর আগেও সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধির সংখ্যা ছিল দেড়শ থেকে দুশো। আর্থিক সংকটের কারণে এই সংখ্যা কমতে কমতে এবারের কলম্বিয়া জিএফএমডিতে তা এসে দাঁড়ায় ৬০এ। সরকারি প্রতিনিধি দলে ছিলেন বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে আগত শদুয়েক। বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন তিনজন। একজন নিউ ইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ মিশনের মিনিস্টার পর্যায়ে, আর একজন জেনেভা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে এবং ঢাকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক তরুণ অফিসার। অনুষ্ঠানে তাদের সাথে দেখা হয় বার কয়েক, কথা হয় নানা বিষয়ে, কয়েকটি সেশনেও একসাথে উপস্থিত ছিলাম।

ফিরে যাই শুরুতে। ২০০৬ সালে নিউ ইয়কের্র জাতিসংঘ সদর দফতরে কফি আনানের উদ্যোগে অভিবাসননিয়ে যখন প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তখন যেপ্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান হিসাবে সাথে জড়িত ছিলাম তার বয়স তখন কেবল এক বছর। অভিবাসীদের নিয়ে কিছু কাজ (প্রজেক্ট) করেছি বটে, তবে অভিবাসন সম্পর্কে তেমন কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা তখন কোনোটাই তেমন হয়নি। সে সময় কীভাবে জানিনে আমার কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে একটি ইমেইল এলো। তাতে আমন্ত্রণ পত্র। আবেদন করার অনুরোধ সহ। সম্মেলন হবে নিউ ইয়র্ক জাতিসংঘ সদর দফতরে। হবেনা ধরে নিয়ে আবেদন করি। সপ্তাহ খানেকের মাথায় চিঠি এলো। যোগ দিতে পারবো, তবে গ্রেফ অবজারভারহিসাবে। অর্থাৎ সম্মেলনে কোন মতামত দেয়া বা কোন আলোচনায় অংশ নিতে পারবোনা। জাতিসংঘ থেকে এও জানিয়ে দেয়া হলো যাতায়াত ও হোটেল সহ যাবতীয় খরচ সব নিজ থেকে বহন করতে হবে। আমার সংগঠনের তখন তেমন কোন ফান্ড নেই। যাব কী যাবোনা এই দোটানায় যখন ভুগছি তখন গিন্নি (সুমনা) উৎসাহ দিয়ে বলে, ‘যাবেনা কেন? এই সুযোগই বা কজনের আসে। অভিজ্ঞতা তো হবে।নিজ খরচে গেলাম। ইউরোপীয় পাসপোর্ট বিধায় আমেরিকা যেতে ভিসা লাগেনা। কেএলএমএর উড়োজাহাজে উড়াল দিলাম। সেই আমার প্রথম আমেরিকা যাওয়া। নিউ ইয়র্ক থাকেন চট্টগ্রামের বন্ধুসম সহকর্মী, মঈনুদ্দিন নাসের। একসাথে ডেইলি লাইফে কাজ করেছি বছর কয়েক। নাসের এলেন এয়ারপোর্টে। তার গাড়িতেই তার বাসা। সেখানে থাকা দিন কয়েক। জাতিসংঘের সেই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হলো, পরের বছর অর্থাৎ ২০০৭ সাল থেকে প্রতি বছর অভিবাসন নিয়ে এক একটি দেশে আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে। পরের বছর অনুষ্ঠিত হলো বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসসে। এরপর যে সমস্ত দেশে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা হলো: ২০০৮ম্যানিলা, ২০০৯এথেন্স, ২০১০মেক্সিকো, ২০১১জেনেভা, ২০১২মরিশাস, ২০১৩১৪স্টকহোম, ২০১৪২০১৫ইস্তানবুল, ২০১৬ঢাকা, ২০১৭১৮বার্লিন/ মরক্কো, ২০১৯ইকুয়াডোর ২০২০সংযুক্ত আরব আমিরাত (কোভিডের কারণে অনলাইনে অনুষ্ঠিত), ২০২২২৩ফ্রান্স (অনুষ্ঠিত হয় জেনেভায়) এবং চলতি বছর ২০২৪২০২৫কলম্বিয়া।

যখন চূড়ান্ত নির্বাচিত প্রতিনিধির তালিকা এলো তখন মনের মধ্যে এক ধরনের দ্বিধা এলো। এতো দূরের দেশ। সেই কোন সাত সমুদ্দুর তো নয়, যেন চৌদ্দ সমুদ্দর পাড়ের একটি দেশ। সব মিলিয়ে ১৬ ঘণ্টার প্লেনজার্নি। কলম্বিয়া না গেলেও এর আগে দক্ষিণ আমেরিকায় চার বার যাওয়া হয়েছে। দুবার একুয়াডোর, মরিশাস, মেক্সিকো একবার করে । আবারো এই দীর্ঘ আকাশভ্রমণ ভাবতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। এদিকে সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য হিসাবে দায়িত্ব, সম্মান, অন্যদিকে নুতন দেশ দেখার ইচ্ছে। শেষে ইচ্ছেরই জয় হলো। গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কোজের দেশ ঘুরে আসার লোভও হাতছানি দিয়ে ডাকছিল। পাঠকদের অনেকেই বিশেষ করে বিশ্ব সাহিত্যের একটুআধটু খবরাখবর যারা রাখেন তারা হয়তো এই নামের সাথে পরিচিত আছেন। আদর করে কেবল কলম্বিয়ায় নয়, গোটা ল্যাটিন আমেরিকায় লোকজন তাকে ডাকে গাবোবা গাবিতো। আসল নাম গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কোজ। পেশায় সাংবাদিক ও লেখক। বিংশ শতাব্দীর বিশেষ করে স্প্যানিশ ভাষায় তিনি লেখকদের মধ্যে কেবল উল্লেখযোগ্য নন, অন্যতম। তার উপন্যাস ও ছোট গল্পের জন্যে তিনি ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। সেই থেকে তার নামের সাথে পরিচিত, যদিও বা তার লেখার সাথে তখনও কোন পরিচয় ঘটেনি। তিনি অনেকটা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত, এই কারণে একটা পর্যায়ে তিনি আইন স্কুল ছেড়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। তার লেখায় তিনি কলম্বিয়ান ও বিদেশী রাজনীতির সমালোচনা করতে ভুলেননি। চিলির কবি গাব্রিয়েল মিস্ত্রাল (১৯৪৫), পাবলো নেরুদা (১৯৭১) ও গুয়েতেমালার ঔপন্যাসিক মিগুয়েল এঞ্জেল আস্তুরিয়াস (১৯৬৭)-এর পর তিনি হলে চতুর্থ ল্যাটিন আমেরিকান যিনি এই পুরস্কার (নোবেল) লাভ করেন। কলম্বিয়ার রিওচা (Rioacha) শহরের কয়েকটি স্থানে ঘোরাঘুরি করার সময় এবং হল্যান্ড ফেরার পথে কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রানজিটের সময় ট্যাক্সফ্রি শপে ঢুকতেই চোখে পড়ে গার্সিয়া মার্কোজের বড় আকারের ছবি। দোকানের কাঁচের শোকেইজে তার লেখা বেশ কটি বিখ্যাত বই টাঙানো। সব স্প্যানিশ ভাষায়। ইংরেজি ভাষায় অনূদিত একটি বইও সেখানে শোভা পাচ্ছেনা। নাম ও লেখকের ছবি দেখে বুঝলাম। তবে তার লেখা যে বইগুলি বিখ্যাত হয়েছে তার মধ্যে অনেকগুলি ইংরেজি সহ নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ‘One Hundred Years of Solitude.’ Love in the Time of Cholers Chronicle of a Death Foretold। গার্সিয়া মার্কোজের লেখায় রিওচা শহরের বেশ উল্লেখ আছে বলে জেনেছি। সেটি জেনে ছোটখাট, অগোছাল শহরটিকে ছয় দিনের অবস্থানে ভালো লাগলো, আপন মনে না হলেও। কেননা সব সময় একটা অজানা আশংকায় ছিলাম। ড্রাগস, ক্রাইম, ভায়োলেন্সের কারণে বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলির মধ্যে কলম্বিয়া অন্যতম। আর সে কারণে সব সময় আমাদের মাঝে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা কাজ করেছিল। (চলবে) – ১৭২০২৫।

লেখক : সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশের বাঁশি : ‘ও বাঁশি কেন গায় আমারে কাঁদায়’
পরবর্তী নিবন্ধবদরুদ্দীন উমর : সনিষ্ঠ গবেষক ও ‘বিশুদ্ধবাদী’ বিভ্রান্তির মূর্ত প্রতীক