‘হল্যান্ড থেকে’ গ্রন্থ সমৃদ্ধ করবে পাঠককে

প্রকাশনা উৎসবে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ।। সহজ ও সরস ভাষা এ বইয়ের প্রধান বৈশিষ্ট্য : আজাদী সম্পাদক

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৪ পূর্বাহ্ণ

ভ্রমণ থেকেই হয় ভ্রমণ কাহিনী। কিন্তু ভ্রমণকারীদের সকলের হাত দিয়ে নয়।’ অন্নদাশঙ্করের এই কথার সূত্র ধরে বলা যায় ভ্রমণ সাহিত্য সবাই হাজির করতে পারে না। সাহিত্য যেমন নানা অর্থ প্রকাশক; ভ্রমণ রচনাও নানা ধাঁচের। বলতে পারি, যে ভ্রমণ রচনা আকর্ষণীয় পাঠ যোগ্যতায়, জীবন পর্যবেক্ষণে, প্রকৃতি অবলোকনে এবং বারংবার পড়ার কৌতূহল জাগিয়ে তোলে সেটিকেই বলা চলে ভ্রমণসাহিত্য। বেড়ানোর প্রসঙ্গকথা হলেই চলবে না, সাহিত্যের স্বাদ চাই, তবেই আসে বেড়ানোর মতো, সাহিত্য পাঠে হাওয়া বদলের স্বাদ। সেদিক থেকে বিচার করলে বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া একজন ভ্রমণ সাহিত্যিক এবং তাকে সাহিত্যিক হিসেবে গড়ে তোলার নেপথ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে গতকাল বিকেলে আয়োজিত প্রবাসী বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়ার ভ্রমণসাহিত্য ‘হল্যান্ড থেকে’ গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে অতিথিবৃন্দ এ অভিমত ব্যক্ত করেন। কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেস থেকে ‘হল্যান্ড থেকে’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে।

একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বরেণ্য বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, শিশু সাহিত্যিক ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, লেখিকা অধ্যক্ষ ড. আনোয়ারা আলম এবং খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী এম এ তাহের। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কৃতী সাংবাদিক এম নাসিরুল হক। উপস্থিত ছিলেন একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব সুফী মিজানুর রহমান, ইউএসটিসির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. প্রভাত রঞ্জন বড়ুয়া প্রমুখ। মিলনায়তন জুড়ে উপচে পড়া ভিড়; কখন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ মাইক্রোফোন হাতে নেবেন। উপস্থাপিকা দিলরুবা খানম ছুটি তার নাম ঘোষণার সাথে সাথেই মিলনায়তন গমগম করে উঠেলো মুহুর্মুহু করতালিতে। মুখে হাসি নিয়ে চিরচেনা ভঙ্গিতে দাঁড়ালেন ডায়াসের সামনে আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর। হাস্যরসের ছলে তিনি দর্শক শ্রোতাদের নিয়ে গেলেন জীবনের মূল মন্ত্রের দিকে, ঘুরে বেড়ালেন দেশবিদেশের বিভিন্ন স্থানে। সাথে কখনো ছিলেন কলম্বাস, ইবনে বতুতা, কখনো রবীন্দ্রনাথ থেকে চলে আসেন বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়ার কাছে; যার প্রকাশনা নিয়ে গতকালের আয়োজন। তিনি বলেন, মানুষ যৌবনের তারিফ করে, কিন্তু কোনো সভা হলে প্রবীণদের অতিথি করে নিয়ে যায়। এর কারণ সেই প্রবীণদের মাঝে এমন কিছু আছে, যা তরুণরা এখনও ধারণ করে উঠতে পারেনি। তার হাতে গড়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের কর্মযজ্ঞ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আর দুমাস পর মোবাইল লাইব্রেরি বাদে দেশে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাকি থাকবে না, ৫০ লাখ শিক্ষার্থীকে পড়ানোর মাইল ফলক স্পর্শ করবে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র। বর্তমানে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সংগ্রহে তিন হাজার জন লেখকের ভ্রমণ কাহিনী আছে। কে জানে, সেখানে একদিন বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়ার ভ্রমণ কাহিনীও ঠাঁই পাবে। আগে প্রচণ্ড তৃষ্ণা, ক্ষুধা ছাড়া এসব হতো না। এখন যুগের প্রয়োজনে ভ্রমণ কাহিনী লেখা হচ্ছে। তিনি ‘হল্যান্ড থেকে’ গ্রন্থ প্রসঙ্গে বলেন, এই বই অমর কাব্যের মতো কিছু নয়, কিন্তু অনেক ইনফরমেশন আছে। বইটি পড়ে মনে হয়েছে বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া সহজ একজন মানুষ। আশা করছি তার এ বইটি সমৃদ্ধ করবে, ঋদ্ধ করবে, মুগ্ধ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, অনুষ্ঠানে আমার নামের আগে একুশে পদক প্রাপ্তির কথা বলা হচ্ছে। একুশ আমার অহংকার, একুশ মানে মাথা নত না করা। ১৯৫২ সালে যখন ভাষা আন্দোলন হলো, এ নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন কবি মাহবুবুল আলম। তার সেই বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি।’ একুশের প্রথম কবিতা এটি। এই কবিতা সেই রাতেই আমার বাবার তত্ত্বাবধানে আমাদের প্রেস থেকেই ছাপা হয়েছিল। এটা আরেকটা ঐতিহাসিক ঘটনা। আমাদের গৌরবের বিষয়। এই কাজের জন্য মূল্য দিতে হয় তাদের। গ্রেপ্তার করা হয় প্রেসের ম্যানেজার আমাদের আত্মীয় দবির সাহেবকে। ছয় বছরের সাজা হয় তার। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তি পান তিনি। তিনি বলেন, বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া একাধারে প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, ভ্রমণ পিপাসু। তার লেখা আমাদের সমৃদ্ধ করে। সরস ও সহজ ভাষায় তিনি লিখেন। এই বইয়ের মূল বৈশিষ্ট্যও তাই। বিকাশ চৌধুরী একজন সজ্জন মানুষ। ব্যক্তিগতভাবে আমি যেমন ভালোবাসা ও মানবতা ফেরি করে বেড়াই, তিনিও তাই করে থাকেন। তার উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করি।

হল্যান্ড থেকেগ্রন্থের রচয়িতা বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমার সামান্য যা পরিচিতি, তার জন্য দৈনিক আজাদীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। ৩৩ বছর ধরে আমি হল্যান্ড থাকি। দেশবিদেশে যেখানেই ঘুরে বেড়াই; আজাদীর কল্যাণে তা পাঠকের সামনে উঠে আসে। হল্যান্ড থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে এ দেশে; আরও স্পষ্ট করে বললে এই চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের জন্য প্রতিটি ক্ষণে মন কাঁদে।

আবুল মোমেন বলেন, বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া মূলত সাংবাদিক। সাংবাদিকতাকে দ্রুততম সাহিত্য বলে অভিহিত করা হয়। বিকাশ চৌধুরীর লেখায় অনেক মানুষের কথা উঠে এসেছে; যা সংবেদনশীলতার জায়গায় আঘাত করে। বিদেশে থেকেও তার দেশের প্রতি টান লক্ষণীয়। দেশ ভ্রমণ শিক্ষার বড় অঙ্গ। বিকাশ চৌধুরীর বইটি অবসরে পড়ার জন্য ভালো উপকরণ।

অধ্যক্ষ আনোয়ারা আলম বলেন, বিকাশ চৌধুরীর বইটি পড়ে মনে হয়েছে, লেখককে ভ্রমণের নেশায় ধরেছে। যেখানেই যাচ্ছেন, তার অন্তঃদৃষ্টি আলো ফেলছে কিছু চরিত্রকে। মনের ভেতর থেকে আন্তরিকতা দিয়ে তুলে ধরেছেন তাদের। ছোট ছোট পর্বে কাব্যিক শিরোনামে তিনি বর্ণনা করেছেন। সমাজ ও মানুষের জীবনের ভাঙচুর উঠে এসেছে তার লেখায়।

সাংবাদিক রাশেদ রউফ বলেন, সাড়ে তিন দশক ধরে আজাদী বিকাশ চৌধুরীর পাশে আছে। আজাদী সবসময় নবীন লেখকদের উৎসাহিত করে চলেছে। এ ধারা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করি।

চিত্রশিল্পী এম এ তাহের বলেন, ভ্রমণসাহিত্যে উদ্ভাসিত হয় বহুমাত্রিক বিন্যাসের দোলা। দৃশ্যমান হয় অনিন্দ্য জগৎ, মানুষ, সংস্কৃতি, রুচি, আহার্য। ভ্রমণসাহিত্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি, স্মৃতিকথা, ইতিহাসবোধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গুতে চট্টগ্রামে নারীর মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধশৈশবে যিনি রোপণ করেন ভালোবাসার বীজ