হরিজন সমপ্রদায়ের প্রথম আইনজীবী কৃষ্ণ দাশকে সংবর্ধনা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ মার্চ, ২০২৪ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

হরিজন সমপ্রদায়ের সন্তান কৃষ্ণ দাশ বাংলাদেশের প্রথম আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। নগরীর বান্ডেল রোডের সেবক কলোনিতে বেড়া উঠা কৃষ্ণ দাশের এই সফলতায় কয়েকদিন ধরেই আনন্দে ভাসছে তার সমপ্রদায়ের মানুষেরা। গতকাল জেলা জজ আজিজ আহমেদ ভূঞা তাকে গাউন পরিয়ে দিয়েছেন। জেলা পিপি কার্যালয়ের উদ্যোগে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় জেলা জজ তাকে এ গাউন পরিয়ে দেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, ১ম যুগ্ম জেলা জজ খায়রুল আমিন, সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফ হোসেন চৌধুরী রাজ্জাক, জেলা লিগ্যাল এইড অফিসার ইব্রাহিম খলিল। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি আজাহারুল হক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞা বলেন, মানুষের মধ্যে কোনো প্রকার ভেদাভেদ বা উচু জাত নিচু জাত বলতে বিভাজন করা মনুষত্যের কাজ নয়। প্রত্যেকটি মানুষ সৃষ্টি কর্তার নির্দেশে এই পৃথিবীতে আসেন, তিনি যাকে যে পরিবার, গোষ্ঠী, সমপ্রদায়ে প্রেরণ করেন সেইখানেই সেই পরিবেশে ও ধর্মে লালিত হয়ে বড় হন। আমরা জন্মসূত্রে মুসলমান অন্য জন জন্ম সূত্রে হরিজন। পার্থক্য এইটুকু, সমাজের অবহেলিত শ্রেণীর সন্তান হয়ে কৃষ্ণ দাশ যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন তার জন্য নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার রাখে। তার এই একাগ্রতা চিন্তা শক্তি এবং কঠোর পরিশ্রম তার জীবনে সফলতা এনে দিয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় রেখে প্রতিষ্ঠা করা যায় কৃষ্ণ তার দৃষ্টান্ত। আজিজ আহমেদ ভূঁঞা বলেন, দেশের মানুষের বিচার বিভাগের উপর এখনো আস্থাশীল, এই আস্থা ধরে রাখতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে আইনজীবীদের। আইনজীবী ছাড়া ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা কোনো ভাবেই সম্ভব নয়।

সভাপতির বক্তব্যে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, আইনজীবী হিসেবে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের সন্তান কৃষ্ণকে গ্রহণ করে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। আশা করবো সে তার কর্মকালে নিজেকে একজন প্রকৃত আইনের সেবক হয়ে বিচারপ্রার্থী জনগোষ্ঠীকে ন্যায় বিচার দিতে কঠোর পরিশ্রম করবে। তার একাগ্রতার মধ্য দিয়ে সমপ্রদায় কে সমৃদ্ধ এবং সমপ্রদায়ের প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে। এই সফলতার জন্য তাকে অভিনন্দন।

আদালত সূত্র জানায়, কৃষ্ণ দাশ হরিজন সমপ্রদায়ে জন্মগ্রহণ করে এবং চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ২৩তম ব্যাচ থেকে আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর অর্জন করে এবং চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি শিক্ষানবিশ হিসেবে জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর সাথে যোগদান করে। দীর্ঘ ৫ বছর শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মরত থেকে আইনজীবী হিসেবে গত ৯ মার্চ বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। কৃষ্ণ দাশ আজাদীকে বলেন, আইনজীবী হব এটাই ছিল আমার সপ্ন। স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। আমার সমপ্রদায়ের মানুষেরা এতে অনেক খুশি। বান্ডেল রোড ছাড়াও নগরীর মাদারবাড়িসহ আরো তিনটি এলাকায় আমার সমপ্রদায়ের মানুষেরা বসবাস করেন। আমি তাদের পাশে থেকে তাদের জন্য কাজ করতে চাই।

সমপ্রদায়ের মানুষেরাও এখন স্বপ্ন দেখছেন। ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। যারা পড়াশোনা করছেন আমি তাদেরও পাশে থাকতে চাই। তাদের জন্য কাজ করতে চাই। আমাকে সবসময় অনুপ্রেরণা দিয়েছেন আমার সিনিয়র জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী। আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউপহারের ঘর ভাড়া ও বিক্রি করার অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত