পাঞ্জাবের ওয়াজিরাবাদে লংমার্চে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গতকাল শুক্রবার প্রথম ভাষণে পাকিস্তানের তেহরিক-ই ইনসাফ (পিটিআই) দলের চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেছেন, তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা তিনি আগে থেকেই জানতেন। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, আগের দিনই জেনেছিলাম তারা আমাকে হয় ওয়াজিরাবাদ নয়তো গুজরাটে হত্যার পরিকল্পনা করছে। চার ব্যক্তি তাকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত বলেও অভিযোগ করেন ইমরান। এর আগে ইমরান তাকে হত্যাচেষ্টায় তিনজনকে দায়ী করেন বলে পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই তিনজন হলেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ এবং প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর শীর্ষ কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ফয়সাল। শুক্রবার ইমরান নিজমুখে এই তিনজনের নাম নিয়ে বলেন, তারা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনজনের পদত্যাগও দাবি করেন তিনি। ইমরান বলেন, যতক্ষণ বিচার না পাবে, ততক্ষণ দেশ মুক্ত হতে পারবে না। হামলা পরিকল্পনায় যে তিনজন জড়িত, তাদের পদত্যাগ করতে হবে। না হলে, তদন্ত হতে পারে না। তবে তিনি তার দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ দেননি। হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত চতুর্থ আরেকজনের নাম বলেননি ইমরান। তিনি কেবল বলেন, চারজন আমাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। আমি একটি ভিডিও বানিয়ে সেখানে তাদের নামগুলো বলেছি এবং সেটি বিদেশে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিছু ঘটে গেলে সেই ভিডিওটি প্রকাশ করা হবে।
ক্ষমতায় থাকার সময় তার সঙ্গে অনেকের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, ওই সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে তিনি হত্যার ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেছেন বলেও ইঙ্গিত দেন ইমরান। পরিকল্পনা ছিল সালমান তাসিরকে মারার মতো ঘটনা ঘটানোর, বলেছেন তিনি।
এই ঘটনায় অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও পিটিআইয়ের নেতাকর্মীরা ভীত, কারণ ‘অনেক প্রতিষ্ঠানই আইনের ঊর্ধ্বে’, বলেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, ‘দুই হিরো’ না থাকলে তিনি হয়তো মারাই যেতেন। পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান তার ভাষণে চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে সামরিক বাহিনীর ‘কুলাঙ্গারদের’ জবাবদিহিতার আওতায় আনারও পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান জেগে উঠেছে, তার সামনে এখন দুটি পথ খোলা। একটি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর, আরেকটি হল- রক্তাক্ত বিপ্লব। তৃতীয় কোনো পথ নেই। আমি দেখছি, পাকিস্তান জেগে উঠেছে। এই জিনকে অর বোতলের ভেতর ঢোকানো যাবে না। সুস্থ হলে ফের বিক্ষোভে নামবেন বলেও জানান ইমরান।
পাকিস্তানজুড়ে সহিংস বিক্ষোভ : এদিকে ইমরান খানের ওপর হামলার পর তার দলের ডাক দেওয়া বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানজুড়ে ব্যাপক সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। বড় বড় শহরগুলোতে তেহরিক-ই ইনসাফের কর্মীরা রাস্তা আটকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। কোথাও কোথাও তারা পুলিশের দিকে ইট পাথর ছুড়লে পাল্টা পুলিশও তাদের লক্ষ্য করে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে; কোথাও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও হয়েছে বলে জানিয়েছে ডন। ইমরানের বিরুদ্ধে হামলার প্রতিবাদে গতকাল বেলুচিস্তানজুড়ে ধর্মঘট পালিত হয়েছে। কিলা আব্দুল্লা, নুশকি, পাশিন, সানজাউয়ি ও অন্যান্য জেলায় দোকানপাট, মার্কেট বন্ধ ছিল বলে সুরি জানিয়েছেন। দেশটির রাজধানী ইসলামাবাদেও পিটিআইয়ের কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ করেছে। করাচিতে ইমরানের সমর্থকরা রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। পরে তারা ইনসাফ হাউসের সামনে অবস্থান ধর্মঘটও করে। তাছাড়া পাকিস্তানজুড়ে পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের ওপর সহিংসতা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই।