হঠাৎ এক আবিষ্কারে খুলে গেছে ম্যালেরিয়া নির্মূলের সম্ভাবনা

| রবিবার , ৬ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:১৬ পূর্বাহ্ণ

বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়ার এমন একটি স্ট্রেইন বা ধরন খুঁজে পেয়েছেনযেটি মশা থেকে মানুষের শরীরে ম্যালেরিয়া জীবাণুর সংক্রমণ ঠেকাতে সক্ষম। হঠাৎ করেই ব্যাকটেরিয়ার এই স্ট্রেইনটি তারা আবিষ্কার করেছেন।

ল্যাবরেটরিতে সংরক্ষিত এক ঝাঁক মশার ভেতর ম্যালেরিয়ার জীবাণু তৈরি কেন বন্ধ হয়ে গেলতার কারণ খুঁজতে গিয়ে ব্যাকটেরিয়ার এই ধরনটির সন্ধান পান বিজ্ঞানীদের একটি দল। ঐ গবেষকরা এখন বলছেন, খুঁজে পাওয়া নতুন ধরণের এই ব্যাকটেরিয়াযেটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরাজ করে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এই প্রাণঘাতী রোগের মোকাবেলায় নতুন একটি অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এখনও বিশ্বে প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় ছয় লাখ লোক মারা যায়। নতুন আবিষ্কৃত এই ব্যাকটেরিয়ার প্রয়োগে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধের ট্রায়াল বা পরীক্ষা এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। খবর বিবিসি বাংলার।

স্পেনে ওষুধ কোম্পানি জিএসকের পরিচালিত একটি গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা হঠাৎ করে আবিষ্কার করেন যে একটি ওষুধ তৈরির গবেষণার প্রয়োজনে আটকে রাখা এক ঝাঁক মশার শরীরে ম্যালেরিয়ার জীবাণু তৈরি হচ্ছে না। জিএসকের ঐ ওষুধ তৈরির গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ড. জ্যানেট রডরিগস্‌। তিনি বলেন, আমরা দেখলাম মশার ঐ কলোনিতে সংক্রমণ (ম্যালেরিয়া জীবাণুর) কমতে শুরু করেছে, এবং বছরের শেষ নাগাদ দেখা গেল তাদের মধ্যে ম্যালেরিয়া জীবাণুর সংক্রমণ একদম শূন্যে পৌঁছে গেছে।

বিজ্ঞানীদের ঐ দলটি ২০১৪ সালের তাদের পরীক্ষানিরীক্ষার স্যাম্পল বা নমুনা ডিপফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখেন। এর দুবছর পর সেই নমুনায় কী ঘটলো তা খুঁটিয়ে দেখেন। এরপর আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষায় বিজ্ঞানীরা দেখনে নতুন খুঁজে পাওয়া ঐ ব্যাকটেরিয়াযেটিতে তারা নাম দিয়েছেন টিসিওয়ান এবং যেটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশেই অবস্থান করছে, মশার অন্ত্রনালীতে ম্যালেরিয়ার জীবাণু তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

. রডরিগস্‌ বলেন, এটি (টিসিওয়ান ব্যাকটেরিয়া) কোনো মশার শরীরে ঢুকলে মশার জীবনচক্রের পুরোটা সময় ধরেই সক্রিয় থাকছে। আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে ঐ ব্যাকটেরিয়াই ঐ মশাগুলোর দেহে সংক্রমণ কমানোর পেছনে কাজ করেছে।

বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্সে প্রকাশিত নতুন তথ্যে দেখা যাচ্ছে নতুন আবিষ্কৃত এই ব্যাকটেরিয়াটি মশার দেহে ম্যালেরিয়া জীবাণুর পরিমাণ ৭৩ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম। এই ব্যাকটেরিয়াটি হারমেন নামের একটি মলিকিউল বা ক্ষুদ্র একটি অণু নিঃসৃত করে যেটি মশার অন্ত্রনালিতে ম্যালেরিয়ার জীবাণু তৈরির প্রক্রিয়া আটকে দেয়।

জিএসকের এই বিজ্ঞানী দল এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের যৌথ গবেষণায় দেখেছেন ব্যাকটেরিয়ার নিঃসৃত হারমেন মুখের সাহায্যেযদি এর সাথে চিনি মেশানো যায়, অথবা ত্বকের ভেতর দিয়ে মশার শরীরে ঢোকানো সম্ভব। মশা যেখানে বসে সেখানে এই হারমেন ছড়িয়ে রেখে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব।

গবেষণাগারের বাইরে বাস্তব জগতে হারমেন প্রয়োগে নিরাপদে এবং কার্যকরভাবে ম্যালেরিয়া দমন কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে এখন আফ্রিকার বুর্কিনা ফাসোতে ব্যাপক একটি ট্রায়াল বা পরীক্ষা চলছে। আশা করা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়াভিত্তিক নতুন একটি ওষুধ তৈরি করে খুব দ্রুত হয়তো বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রাণঘাতী এই রোগের মোকাবেলায় নতুন একটি অস্ত্র হাজির করতে সক্ষম হবেন।

এখনও বিশ্বে বছরে ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যায়, যাদের বিশাল একটি অংশ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু। ম্যালেরিয়ার টিকা এখন বাজারে এসেছে, কিন্তু ম্যালেরিয়াউপদ্রুত আফ্রিকায় গণহারে তার প্রয়োগ এখনও একেবারেই প্রাথমিক স্তরে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতিন পাহাড়ি এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তিনশ পরিবার
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাই হ্রদে নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা