হজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের রক্ষার ফরিয়াদ

| রবিবার , ১৬ জুন, ২০২৪ at ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখর আরাফাতের ময়দানে আল্লাহর কাছে পাপ মোচনের দোয়া, জীবন আর ভবিষ্যতের শান্তি কামনার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মানুষের দুর্দশা কাটাতে দুহাত তুলে কাঁদলেন লাখো মুসল্লি। গতকাল শনিবার আরাফাতের ময়দানে সমবেত হজযাত্রীদের উদ্দেশে খুতবায় ফিলিস্তিনের দুর্দশার চিত্র এবং তাদের ভূখণ্ড রক্ষায় প্রার্থনা জানানো হয়। খবর বিডিনিউজের।

আরাফার নামিরা মসজিদ থেকে শেইখ মাহের বিন হামাদ আল মুয়াইকলি হজের খুতবা পাঠ করেন। বিশ্বের ২১টি ভাষায় খুতবার অনুবাদ প্রকাশ করা হয় সৌদি আরবের মানারাত আল হারামাইন ওয়েবসাইটে। খুতবায় বলা হয়, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের জন্য দোয়া করুন। দুঃখদুর্দশায় তারা নিপতিত। শত্রুদের আঘাতে তাদের রক্ত ঝরছে। তাদের ঘরবাড়ি ও ভূখণ্ড শত্রুদের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওষুধপথ্য, খাবার পানি ও বস্ত্র থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। আমাদের দোয়া পাওয়ার ব্যাপারে তারা বেশি হকদার।

হে আল্লাহ, মুসলিমদের ভূখণ্ডকে নিরাপদে রাখুন। অভাব থেকে তাদের মুক্ত করুন। তাদের সকল বিষয়ে দায়িত্বগ্রহণ করুন। মুমিনদের তাদের দেশে নিরাপদ রাখুন। তাদের রিজিক ও সমস্ত বিষয়গুলোর দায়িত্বগ্রহণ করুন।’

এর আগে শনিবার ফজরের পর মুসলমানরা তালবিয়া (লাব্বাইক) পড়তে পড়তে মিনা থেকে আরাফাতের দিকে রওনা হন বলে সৌদি গেজেট জানিয়েছে। হজের আনুষ্ঠানিকতা অনুযায়ী, জোহরের আগেই আরাফাতের ময়দানে গিয়ে উপস্থিত হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। সেখানে সমবেত হয়ে প্রার্থনা ও খুৎবা শোনাকেই হজ ধরা হয়।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। মানুষের ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে স্কুল, হাসপাতাল কিছুই ইসরায়েলের বোমা বর্ষণ থেকে রক্ষা পায়নি। কয়েক মাস ধরে চলমান যুদ্ধে গাজার নারী ও শিশুসহ ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ গেছে। খাবার থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাবে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে।

খুতবায় যুদ্ধ ও রক্তপাতের বিষয়ে বলা হয়, আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রাণ রক্ষাকে অপরিহার্য করেছেন এবং রক্তপাতের বিষয়ে সীমালঙ্ঘন নিষিদ্ধ করে বলেছেন, তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করো না। অন্যত্র তিনি বলেছেন, তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু। আল্লাহ মানুষের জীবনকে রক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন। একইভাবে সম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রে কোরআনে বলেছেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না। তবে পারস্পরিক সম্মতিতে যে ব্যবসা করা হয়, তা বৈধ।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মুসল্লিরা আরফাতের ময়দানে হাজির হয়ে নিজেদের পাপ মোচনে আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে অশ্রু ঝরান। শয়তানের প্ররোচনা থেকে দূরে থাকতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন। খুতবায় আরাফাতের ময়দানের মহাত্ম তুলে ধরে বলা হয়, নিশ্চয়ই আপনারা আরাফায় এমন এক সম্মানজনক অবস্থানে রয়েছেন, যার জন্য ফেরেশতারা আপনাদের নিয়ে আল্লাহর কাছে গর্ব করেন। একটি মহিমান্বিত স্থান ও বরকতময় সময়ে আপনারা একত্র হয়েছেন। এখানে ভালো কাজের প্রতিদান বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পাপ কাজগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং মর্যাদা বাড়ানো হয়। কাজেই রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে সোপর্দ করুন। সেই নবীর অনুসরণ করুন, যিনি এ সম্মানজনক স্থানে সাহাবীদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। আরাফাতের সময়টুকু অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ, আল্লাহর জিকির ও তার কাছে চাওয়ার মাধ্যমে অতিবাহিত করেছেন। সুতরাং আপনারা রাসুলকে (সা.) অনুসরণ করুন। নিজেদের জন্য, নিজেদের পিতামাতা এবং যাদের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে, তাদের সবার জন্য দোয়া করুন। কারণ কারও অনুপস্থিতিতে তার জন্য দোয়া করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতারা বলেন আমিন, তোমার জন্যও একই পুরস্কার।

খুতবায় হাজীদের উদ্দেশে বলা হয়, হে আল্লাহ তাদের হজকে কবুল করুন। তাদের কাজগুলোকে সহজ করে দিন। কল্যাণ অর্জনের মধ্য দিয়ে গুনামুক্ত হয়ে কবুলকৃত তওবার সৌভাগ্য লাভ করে যাবতীয় প্রয়োজন মিটিয়ে যেন তারা নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে, সেই তৌফিক দিন। সকল মুসলিম নরনারীকে ক্ষমা করুন। সকল অনিষ্ট থেকে তাদের রক্ষা করুন। তাদের দ্বীন ও নিরাপত্তাকে তাদের রক্ত ও সম্পদকে, তাদের বিবেক বুদ্ধি ও মান সম্মানকে হেফাজত করুন। তাদের জন্য কল্যাণের ফয়সালা করুন। যাবতীয় অনিষ্টতা ও মন্দ বিষয় থেকে দূরে রাখুন। তাদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ চট্টগ্রামের ৬০ গ্রামে ঈদুল আজহা আজ
পরবর্তী নিবন্ধবাজারে প্রচুর গরু, দামও কমতির দিকে