নগরের হকার সমস্যার স্থায়ী সমাধানে চারটি পয়েন্টে আন্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট করার পরিকল্পনা নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। পয়েন্টগুলো হচ্ছে– ইপিজেড, আগ্রাবাদ, বহদ্দারহাট ও স্টেশন রোড। এ বিষয়ে চীনের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও করেছে সংস্থাটি।
গতকাল বুধবার টাইগারপাসস্ত নগর ভবনের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘সিটি লেভেল কো–অর্ডিনেশন কমিটি’র (সিএলসিসি) সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব তথ্য জানান মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন।
তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যান্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট ব্যবস্থা শহরের যানজট ও হকার সমস্যার কার্যকর সমাধান দিয়েছে। চট্টগ্রামেও এই মডেল বাস্তবায়নের চিন্তা করা হচ্ছে। হকার সমস্যা সমাধানে নগরের গুরুত্বপূর্ণ চারটি পয়েন্টে অ্যান্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট গড়ে তোলার বিষয়ে চায়না’র একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, ফুটপাত দখল করে হকার ব্যবসা পরিচালনার ফলে নগরে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটছে। এই সমস্যা নিরসনে পরিকল্পিতভাবে অ্যান্ডারগ্রাউন্ড মার্কেট স্থাপন করা হবে। এসময় চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের পাশে খালি জায়গায় হকারদের জন্য ভূমি বরাদ্দের চেষ্টা চলছে বলেও জানান মেয়র। সভায় মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ ও ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। একইদিনে এক সাথে ৪১ ওয়ার্ডে মশক নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
সভায় এক বক্তা বলেন, নগরে মশা বাড়ছে। এজন্য নগরের ৪১টি ওয়ার্ডে একই দিনে সমন্বিতভাবে ক্রাশ প্রোগ্রাম পরিচালনা করা যেতে পারে। মেয়র এ প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে বলেন, এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ কার্যকর হলে পরিচ্ছন্নতা ও মশক নিধন কার্যক্রম আরও জোরদার হবে।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়াসহ মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ ও মশা নিয়ন্ত্রণে প্রথমবারের মতো আমেরিকান প্রযুক্তির লার্ভিসাইড বিটিআই ব্যবহার শুরু করেছি। বিটিআই ব্যবহারে মশার লার্ভা ধ্বংসে বেশ কার্যকর ফল পাওয়া যাচ্ছে বলেও জানান মেয়র। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো, নালা–নর্দমা পরিষ্কার, আবর্জনা অপসারণ এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে।
সভায় সিএলসিসি সদস্যরা সড়ক ও ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে হকার ব্যবসা পরিচালনার কারণে সৃষ্ট যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানান। তখন ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরের যানজটের অন্যতম কারণ হকার ব্যবসা। হকারদের কারণে একদিকে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে জনভোগান্তিও বাড়ছে। এ সমস্যা সমাধানে এর আগেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তবে এখন দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর সমাধানের দিকে এগোনো হচ্ছে।
চসিক পরিচালিত ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সম্পর্কে ডা. শাহাদাত বলেন, ৪১ টি ওয়ার্ডের প্রতিটি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার ফলে দৈনিক বর্জ্য সংগ্রহ ৫০০ টন বৃদ্ধি পেয়েছে। আপাতত প্রতিটি বাসা থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। তবে এই সেবাটিকে বিনামূল্যে নাগরিকদের দেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। কারো বাসা থেকে ৭০ টাকার বেশি নিলে আমাদেরকে জানাবেন, আমরা তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে দেব।
মেয়র বলেন, চসিকের দুটি বর্জ্যাগারে জমা বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস, গ্রীন ফুয়েল, জ্বালানি উৎপাদন করে বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছি। এই উৎপাদিত বর্জ্য থেকে কর্পোরেশনের আয় বাড়বে। শহর ক্লিন রাখতে হলে শতভাগ বর্জ্য সংগ্রহ করতে হবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন সিএলসিসর সদস্য প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস এম নছরুল কদির, সাবেক কাউন্সিলর নিয়াজ মো. খান, মো. তৈয়ব, সিডিএ বোর্ড মেম্বার জাহিদুল করিম কচি, বাসসের ব্যুারো প্রধান মোহাম্মদ শাহনওয়াজ, কানিজ কাউসার চৌধুরী, মেয়রের উপদেষ্টা শাহরিয়ার খালেদ ও এম আর মনজু।












