হকার উচ্ছেদে ধীরে এগোতে চান রেজাউল

পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধন ও বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়ে ক্ষোভ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে তড়িঘড়ি করতে চান না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, ফুটপাত থেকে বারবার হকারদের উচ্ছেদ করার পর আবার বেদখল হয়ে যায় কেন? ধীরে-সুস্থে এই সমস্যার পরিকল্পিত সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। আমি তড়িঘড়ি করে লোক দেখানো কিছু করতে চাই না।
চসিকের সাধারণ সভায় সভাপতিত্বের বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত হয় চসিকের ষষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদ। এ পরিষদের প্রথম সাধারণ সভা গতকাল মঙ্গলবার থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক। সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. মফিদুল আলম।
সভায় মেয়র পরিচ্ছন্ন বিভাগ ও মশক নিধন কার্যক্রম এবং বিদ্যুৎ বিভাগ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সড়ক সংস্কারে ব্যবহৃত বিটুমিনের মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। প্রকৌশল বিভাগের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ধীরগতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এতে আমাদের সময় ও অর্থের অপচয় হচ্ছে। ঠিকাদাররা চুক্তির শর্ত লক্সঘন করে চলেছেন। কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। ভাষার মাসে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামফলক ইংরেজিতে থাকায় উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে তা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশনা দেন।
মেয়র বলেন, নীতি ও ন্যায্যতার প্রশ্নে কখনো মাথা নত করব না। যে সকল অবৈধ দখলদার এবং নালা-নর্দমা-খালের উপর অবৈধ স্থাপনা তৈরি করেছে তারা যতই ক্ষমতাবান হোন না কেন তাদের তিল পরিমাণ ছাড় দেয়া হবে না।
ভবন নির্মাণের সময় পাইলিংয়ের মাটি ভরা তরল বর্জ্য নালা-নর্দমা, খালে ফেলে পানিপ্রবাহের পথ ভরাট করার সমালোচনা করেন মেয়র। বলেন, যারা বিবেক বর্জিত দুষ্ট প্রকৃতির অপদার্থ, তাদের কারণেই নালা-নর্দমা, খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এদের আইনের আওতায় এনে জরিমানাসহ বিধিবদ্ধ শাস্তিভোগ করতে হবে। কর্পোরেশনের জায়গায় কেউ হাত দিতে পারবে না। এসব জায়গা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও আমানত। যারা এর কোনো অংশ অন্যায়ভাবে হস্তগত করেছেন সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হবে।
মেয়র বলেন, পরিচ্ছন্ন বিভাগের অনেকেই আছেন যারা হাজিরা দেন কিন্তু কাজে নেই। কোন স্তরে কত জনবল আছে তা জানতে হবে এবং কারা কী কাজ করছে, কর্মঘন্টা কতক্ষণ তা যাচাই-বাছাই করে এই বিভাগকে ঢেলে সাজানো হবে। কর্পোরেশনের একটি টাকাও অপচয় করা যাবে না।
তিনি আরো বলেন, মশক নিধনের যে ওষুধ ছিটানো হয় তাতে কাজ হচ্ছে না বলে অভিমত রয়েছে। এই ওষুধের কার্যকারিতা, মান নির্ণয় ও কেমিক্যাল টেস্ট আছে কিনা তিনি তার তথ্য চান। তিনি বলেন, মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য যে স্প্রে মেশিনগুলো কেনা হয়েছে সেগুলো নিম্নমানের। অনেকগুলো অচল হয়ে গুদামজাত হয়েছে। একইভাবে বিদ্যুৎ বিভাগ যে সড়কবাতিগুলো কিনেছে ওগুলোর বেশিরভাগই ২/১ মাস পর নষ্ট হয়ে যায়। তাই সড়ক আলোকায়ন সুচারুভাবে সম্পাদন হচ্ছে না। ফলে বড় এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকায় নাগরিক অস্বস্তি আছে।
তিনি বলেন, নগরীর বেহাল সড়কগুলো মেরামত করতে যে পরিমাণ বিটুমিন দরকার সে পরিমাণ মজুদ নেই। যা আছে তা-ও নিম্নমানের। তিনি বলেন, ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে মানসম্পন্ন সরঞ্জাম, সামগ্রী ক্রয় ও সংগ্রহ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের প্রমাণ করতে হবে নানা সীমাবদ্ধতাও থাকলে কাজ করতে আমরা আন্তরিক। শতভাগ সচল না হলেও সিংহভাগ সচল হতে চাই।
মেয়র বলেন, অতীত নিয়ে কিছু বলতে চাই না। এখন যা আছে তা নিয়েই যাত্রা শুরু করে দিয়েছি। প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে অগ্রাধিকারভিত্তিক জরুরি কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রতিটি ওয়ার্ডে পরপর দুদিন মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতাসহ জরুরি সেবামূলক কার্যক্রম চলবে। এই কাজে যারা নিয়োজিত তাদের তদারক ও নির্দেশনা দেবেন কাউন্সিলররা। নিয়োজিত জনবলের প্রতিদিনের নির্ধারিত কর্মঘণ্টাকে তারাই কাজে লাগাবেন। সুযোগ পেলেই সকলে ফাঁকি দেয়। কেউ যাতে ফাঁকি দিতে না পারে সে ব্যাপারে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের নজরদারি করতে হবে। তিনি আশা করেন, কাউন্সিলররা যথাযথ তদারকি ও নজরদারি সঠিকভাবে করলে ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনার সুফল নগরবাসী অবশ্যই পাবে।
চসিকের স্বাস্থ্যখাত নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে মেয়র বলেন, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী থাকতে স্বাস্থ্য বিভাগের জৌলুস ছিল। মেমন হাসপাতালের প্রসূতি ভর্তির জন্য তদবির করতে হত। এখন এখানে রোগী নেই। স্বাস্থ্যবিভাগে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম নেই। বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবনগুলো জীর্ণ দশায়। কোনো কোনো আরবান হেলথ কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যের বাইরে অন্য অফিসে চলছে। এই আরবান হেলথ এডিপি প্রকল্পের অধীন এবং তাদের অনুদান নির্ভর। অনুদানের শর্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যের বাইরে আরবান হেলথ কমপ্লেক্সের স্থাপনা ব্যবহৃত হলে অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের খালের যে অংশে বাঁধ দেয়া হয়েছে সেখানে পানি চলাচলের জন্য বিকল্প পথ তৈরি করে দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন চলে নগরবাসীর কর দিয়ে। তাই তাদের পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের দায়বদ্ধতা আছে। নগরীর সামগ্রিক উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল সেবা সংস্থার মাঝে সিটি কর্পোরেশনের সমন্বয় টিম আছে। আশা করব চট্টগ্রামে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে যে সংস্থাগুলো দায়িত্বপ্রাপ্ত তারা এই সমন্বয় টিমকে সহায়তা দেবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক সমস্যার মাঝে নানাবিধ প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে যদি ১২ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বে টেকসই উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করতে পারেন, তাহলে আমরা কেন আমাদের মেয়াদকালীন চট্টগ্রামকে পরিকল্পিত অত্যাধুনিক বিশ্বমানের নগরীতে পরিণত করতে পারব না?
মেয়র বলেন, কর্পোরেশনের ৬ষ্ঠ নির্বাচিত পরিষদ একটি যৌথ পরিবার। একই ছাতার নিচে আমরা থাকি। একে অপরকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ ভাগাভাগি করে সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করতে হবে। সমস্যা আছে এবং থাকবেই। মেধা, দক্ষতা, সৃজনশীলতার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। নগরবাসী আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করে আমাদেরকে নির্বাচিত করেছেন। তাদের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতিদান দিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে করোনায় মৃত্যু হঠাৎ বেড়ে দ্বিগুণ
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশেই যুদ্ধ বিমান তৈরি করতে চাই : প্রধানমন্ত্রী