হকারদের শৃঙ্খলায় পাল্টে যাচ্ছে আগ্রাবাদ

বিকালে পরিদর্শনে গেলেন মেয়র, দেখা যায়নি ভাসমান হকার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ হকারদের জন্য

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫৭ পূর্বাহ্ণ

ধীরে ধীরে পাল্টে যাচ্ছে নগরের বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদ। বিশেষ করে আগ্রাবাদের যে অংশে ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে ওই জোনটি। একসময় সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত এ বাণিজ্যিক এলাকার সড়ক ও ফুটপাত অবৈধভাবে দখলে নিয়ে ব্যবসা করত হকাররা। এতে পথচারীদের দুর্ভোগ হত। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় এখানে নিয়মিত আসেন বিদেশি ব্যবসায়ীরাও। যত্রতত্র হকার বসায় তাদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতো চট্টগ্রামের।

এ অবস্থায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় বসা হকারদের শৃঙ্খলায় আনার উদ্যোগ নেন। তাদের সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ব্যবসা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। একই সঙ্গে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চালিয়ে তাদের সতর্ক করার পাশাপাশি জরিমানাও করেন। এর প্রেক্ষিতে দিন দিন কমে আসছে আগ্রাবাদের হকারদের ‘দৌরাত্ম্য’।

সর্বশেষ গতকাল সোমবার বিকেল ৫টার দিকে আগ্রাবাদে পরিদর্শন যান মেয়র ডা. শাহাদাত। এসময় পুরো এলাকায় কোনো ভাসমান হকার দেখা যায়নি। তবে দুয়েকটি ভাসমান খাবারের দোকান ছিল। মেয়র তাদের সতর্ক করেন। একইসঙ্গে ঘোষণা দেন, খাবারের দোকান ৫টা থেকে বসতে পারবে। যাতে অফিস ফেরত লোকজন সহজে খাবার খেয়ে যেতে পারে। অন্যান্য দোকান বসবে ৬টার পর। খাবার ছাড়া অন্যান্য দোকান ৫টায় বসতে দেখেলে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যাব। আজকের অভিযানই কিন্তু শেষ নয়। আমরা যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি সেভাবেই পরিচালনা করব।

তিনি বলেন, আমরা কাউকে উচ্ছেদ করছি না। আমরা একেবারে ব্যবসা বন্ধ করে দিচ্ছি না। আমরা সুযোগ দিচ্ছি। শুধু একটা সময়সীমা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। সেই সময়সীমা মেনে মেনে সবাই ব্যবসা করুক। কিন্তু কেউ যদি সেটা অমান্য করে তাহলে তাকে শস্তি দেয়া হবে। সেটা জেল বা জরিমানাও হতে পারে।

পরিদর্শনকালে মেয়র দেখতে পান, একটি হোটেলের সামনের ফুটপাতের সঙ্গে স্ট্রাকচার তৈরি করে রাস্তায় ওঠানামার পথ করা হয়েছে। এতে রাস্তার পানি নালায় প্রবেশের মুখ কিছুটা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মেয়র। এসময় ওই হোটেলের প্রতিনিধি এসে জানান, রাস্তার পানি নালায় প্রবেশে সমস্যা হচ্ছে না।

এরপর ওই হোটেলে সামনে রাস্তার সঙ্গে নালার সংযোগ পথে ময়লা দেখে মেয়র বলেন, আজকে আমি নির্দেশনা দিচ্ছি, প্রত্যেকটা দোকানের সামনে ডাস্টবিন রাখতে হবে। যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা যাবে না। না হলে কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হবে। ট্রেড লাইসেন্স ক্যান্সেল হয়ে যেতে পারে। এসময় হোটেল প্রতিনিধিকে মেয়র বলেন, ময়লা ফেললে সেটা নালায় পড়বে। নালা বন্ধ হয়ে গেলে দোকানে তো পানি ওঠে যাবে। শহরটা সুন্দর রাখতে হবে তো। এসময় হোটেলে প্রতিনিধি মেয়রকে বলেন, আর কখনো এমন হবে না।

সাংবাদিকদের যা বললেন মেয়র : পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের ডা. শাহাদাত বলেন, শহরকে গ্রিন, ক্লিন ও হেলদি সিটি করতে চাই। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০০৪ সালে এটাকে কমার্শিয়াল সিটি হিসেবে ঘোষণা দেন। বাণিজ্যিক নগরীর অংশ হিসেবে আগ্রাবাদে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড সেন্টার স্থাপন করা হয়। এরপর এখানে বিভিন্ন ব্যাংক ও বীমার হেড অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা করেন। দুভার্গ্যবশত এরপর মইনুদ্দিনফখরুদ্দিন সরকার আসে, তারা সেগুলো বাস্তবায়ন করেনি। তারা কমপ্লিটলি এখানে ট্রেড এরিয়ার যে ঐতিহ্য ছিল সেটা ধ্বংস করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, এই এলাকার সাথে আমাদের ভাবর্মূর্তির বিষয় জড়িত। যেহেতু এখানে বাইরে থেকে লোকজন আসে, তারা এটা দেখে মনে করে বাংলাদেশের অবস্থা ও চট্টগ্রামের অবস্থা খুব খারাপ। এই ধারণা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করছি। একইসঙ্গে এখানে নাইট মার্কেট করে তাদের পুর্নবাসন করে দিচ্ছি।

মেয়র বলেন, এখানে যখন দিনের পরিবর্তে রাতে হকাররা ব্যবসা করলে তা আস্তে আস্তে জানাজানি হলে সবাই এখানে রাতেই আসবে। লোকজন যখন জেনে যাবে এটা নাইট মার্কেট, তখন সেভাবেই এটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। এখানে অনেক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে সন্ধ্যার পরও অনেকে খেতে আসে। কাজেই ব্যবসায়ীদের চিন্তার কিছু নেই। আমাদের শুধু ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে হবে।

ডা. শাহাদাত বলেন, এখানে স্থায়ী কোনো স্ট্রাকচার করা যাবে না। চাইলে চাকাযুক্ত বা চাকা সম্বলিত গাড়ি নিয়ে এসে সন্ধ্যা ৬টার পর ব্যবসা করা যাবে। কিন্তু অবৈধভাবে রাস্তাফুটপাত দখল করে স্থায়ী অবকাঠামো বা অস্থায়ী কংক্রিট ঘর নির্মাণ করা যাবে না। যদি কেউ করে তাকে অবশ্যই পানিশমেন্টের আওতায় আনা হবে। স্থায়ী স্ট্রাকচার ছাড়া চাকা সম্বলিত দোকান, যেগুলো আবার নিয়ে যাওয়া যাবে সেগুলো দিয়ে কীভাবে সাজানো যায় সে বিষয়ে আমরা কোনো সংস্থার সাথে কথা বলব। এখানে কীভাবে সুন্দর করে সাজানো যায় সে চিন্তাভাবনাও আমাদের মধ্যে আছে। প্রয়োজনে আমরা সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে বসে ব্যবসার জায়গাগুলো নানাভাবে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সাজানোর উদ্যোগ নেব। আমি সবসময় বলি, আমি এই শহরটাকে সত্যিকার অর্থে সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব করতে চাই।

এসময় মেয়র চসিকের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে বলেন, তারা নিয়মিতভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবেন। পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরাও নিয়মিত তদারকি করবেন। আমাদের অভিযান আজকের জন্য নয়। এটি চলমান থাকবে এবং আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা বাস্তবায়ন করব।

এসময় স্থানীয় লোকজনের উদ্দেশ্যে মেয়র বলেন, আপনাদের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। আপনারা তাদের (হকার) বলবেন, তাদের উচ্ছেদ করা হয় নি, পুর্নবাসন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৯ আগস্ট প্রথম আগ্রাবাদ পরিদর্শনে গিয়ে হকারদের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেধে দেন মেয়র। এরপর বিভিন্ন সময়েও পরিদর্শন করে সতর্ক করেন তিনি। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন চসিকের স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সোয়েব উদ্দিন খান, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী, অভিষেক দাশ, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী (মারুফ), বিএনপি নেতা শেখ ইয়াসিন নওশাদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাইভেট কারের চাকায় ইয়াবা
পরবর্তী নিবন্ধতিন দিনের কর্মসূচি জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের