হংকংয়ের সাথে সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচ

শেষ সেকেন্ডে হামজাদের স্বপ্নভঙ্গ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১০ অক্টোবর, ২০২৫ at ৬:২৭ পূর্বাহ্ণ

একটি ফুটবল ম্যাচ কতটা স্নায়ূ ক্ষয়ী হতে পারে, কতটা উত্তেজনা আর থ্রিলারে ভরা হতে পারে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ বাংলাদেশ হংকং ম্যাচ। গতকালের আগের দুই দেখাতে হংকং এর জালে বল পাঠাতে পারেনি কখনোই। কিন্তু এই ম্যাচেই কিনা তিনটি গোল করল বাংলাদেশ। কিন্তু এমন দুর্দান্ত খেলার পরও শেষ পর্যন্ত স্বপ্নভঙ্গ হামজাদের। একেবারে শেষ সেকেন্ডের গোলে বাংলাদেশকে ৪৩ গোলে হারিয়েছে হংকং। আর এ জয়ের ফলে এশিয়া কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচে গ্রুপের শীর্ষে উঠে গেল হংকং। শক্তি, সামর্থ, র‌্যাংকিং আর পরিসংখ্যান সবদিক থেকেই এগিয়েছিল হংকং। কিন্তু বাংলাদেশ যে, ক্রমশ নিজেরে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে তার আরেকটি প্রমাণ যেন দিতে চেয়েছিল গতকালের ম্যাচে। কিন্তু বরাবরের মতো একেবারে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে আরো একবার স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। গতি, আক্রমণ, প্রতিরোধ সবদিক থেকে বাংলাদেশ যেন দুর্দান্তই ছিল গতকালের ম্যাচে।

মাত্র ১৩ মিনিটে এগিয়েও গিয়েছিল স্বাগতিকরা। হামজা, সমিত, মোরসালিনরা যেন নিজেদের উজাড় করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দিন শেষে হাসিটা হাসতে পারল না হামজারা। আরো একবার হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো বাংলাদেশকে। সাত গোলের রোমাঞ্চকর ম্যাচে বাংলাদেশ আরো একবার পয়েন্ট হারাল।

ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের আভাস। যদিও প্রথম সুযোগটা পেয়েছিল হংকং। খেলার ষষ্ঠ মিনিটেই ভালো সুযোগ পায় হংকং। বাম দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে ম্যাট অরের শট অল্পের জন্য পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে এগিয়ে যাওয়া হয়নি হংকং এর। তিন মিনিট পর বক্সের বাইরে থেকে শট নিয়েছিলেন রাকিব। কিন্তু থাকেনি লক্ষ্যে। তবে গোল পেতে বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ১৩ মিনিটে স্বাগতিক গ্যালারিতে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। বঙের বাম দিকে ফ্রিকিক লাভ করে বাংলাদেশ। হামজার চোখধাঁধানো বাঁকানো ফ্রি কিক এক ডিফেন্ডারের মাথা ছুঁয়ে চোখের পলকে জালে জড়ায়। এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জার্সিতে এটি দ্বিতীয় গোল হামজার। গত জুনে ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম গোল করেছিলেন হামজা। শুরুতেই এগিয়ে গিয়ে আত্মবিশ্বাসী হয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণে চাপ দিতে থাকে স্বাগতিকরা। ২১ মিনিটে সোহেল রানা জুনিয়রের শট ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে চলে গেলে ব্যবধান বাড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ৩৯ মিনিটে সমতা ফেরাতে পারতো হংকং। এভারতন কামারগোর শট আটকাতে ঝাঁপিয়েও নাগাল পাননি মিতুল। তবে বল বেরিয়ে যায় দূরের পোস্টের বাইরে দিয়ে। একটু পর হামজার ব্যাক পাসে সোহেল রানা জুনিয়রের শট হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। ৪২ মিনিটে বাংলাদেশের জালে বল পাঠিয়েছিল হংকং। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা গোল হয়নি। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার অপেক্ষায় যখন সবাই ঠিক তখনই কপাল পুড়ে বাংলাদেশের। কর্ণার থেকে উড়ে আসা বল ক্লিয়ার করতে একের পর হেডে চেষ্টা করতে থাকেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। এক পর্যায়ে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের হেডে বল চলে যায় ফাঁকায় থাকা এভারতনের পায়ে। সহজ টোকায় বল জালে পাঠিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান বংশোদ্ভূত এই ফরোয়ার্ড। খেলায় ফিরে সমতা। আর সে সাথে বাজে বিরতির বাঁশি।

বিরতি থেকে ফিরেই এগিয়ে যায় হংকং। ৫০ মিনিটে মেরকিয়েসের গোলে এগিয়ে যায় হংকং। এরপর গোল শোধে মরিয়া হয়ে খেললেও ৭৫ মিনিটে আরো পিছিয়ে পড়ে স্বাগতিকরা। এবারে হংকংকে আরো এগিয়ে দিলেন সেই মেরকিয়েস। ৩১ গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ তখন খেলায় ফিরতে মরিয়া। একের পর এক আক্রমণ শানাতে থাকে বাংলাদেশ। কিন্তু গোল যেন ধরা দিচ্ছিল না। বিশেষ করে জামাল ভূইয়া নামার পর খেলায় যেন গতি ফিরে আসে। বারবার ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণ শানানোর চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। অবশেষে খেলার ৮৪ মিনিটে গোলে দেখা পায় বাংলাদেশ। মোরসালিন দারুণ এক শটে গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৩২। বাংলাদেশ যেন গর্জে উঠে। গ্যালারি এবং মাঠ সমান তালে গর্জাতে থাকে। নির্ধারিত ৯০ মিনিটের পর অতিরিক্ত ৯ মিনিটের খেলা চলছিল তখন। বামপ্রান্তে কর্ণার লাভ করে বাংলাদেশ। মোরসালিনের নেওয়া কর্ণার কিক থেকে উড়ে আসা বলে দুর্দান্ত এক হেড করেন সমিত সোম। বল ঠিকানা খুঁজে নেয় জালে। খেলায় ফিরে আসে ৩৩ গোলে সমতা। অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ার প্রস্তুতি তখন সর্বত্র। কিন্তু কে জানতো চোখের পলকে সব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। বল কিক অফ হতেই ছুটতে থাকে বাংলাদেশ সীমানায়। একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে সেই মেরকিয়েস গোল করে বাংলাদেশকে হারিয়ে দেয় ৪৩ গোলে। সে সাথে নিজের হ্যাটট্রিকও তুলে নেন এই স্ট্রাইকার। এমন পরাজয়ে মাঠে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হামজাসমিতরা। কি সর্বনাশটাই না হলো। এখন হংকং মাঠে গিয়ে এই পরাজয়ের শোধ নিতে পারে কিনা সেটাই দেখার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমার কারাদণ্ড
পরবর্তী নিবন্ধটাইফয়েডের টিকা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই