সয়াবিন : সাধারণ মানুষের কথা

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ মে, ২০২২ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

সয়াবিনের দাম বৃদ্ধিতে রেকর্ড। বোতলজাত তেলে প্রতি লিটারে ৩৮ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৯৮ টাকায়। সমস্যায় সাধারণ মানুষ। তেল নিয়ে কী ভাবছেন তারা?

রিকশা চালক আজম
রমজানের সময় কেনা তেলেই এখনো চলছে

সয়াবিন তেলের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে রিকশা চালক মো. আজম বলেন, তেল প্রয়োজনীয় দ্রব্য। এটা ছাড়া তো চলে না। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে টিসিবির ট্রাক থেকে দুই কেজি কিনেছি। তা দিয়ে এখনো চলছে। হিসেব করেই তরিতরকারিতে এই তেল ব্যবহার করা হচ্ছে।
সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধিকে অমানবিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে এসব কী হচ্ছে। একেক সময় একেক জিনিষের দাম বেড়ে যাচ্ছে। রমজানের আগে তো তেলের দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন বেড়ে ২০০ টাকা হয়েছে। ২০০ টাকা তেলের দাম কীভাবে হয় তা আমার মাথায় ঢুকে না। সরকারের উচিত আমাদের দিকে তাকানো। আমরা তো গরিব মানুষ। বড়লোকদের কোনো সমস্যা নেই। ৫০০ টাকা হলেও তারা কিনতে পারবে।

সংসারের অভাবের কথা উল্লেখ করে আজম বলেন, চকরিয়ায় ৬ জন সদস্য নিয়ে আমার সংসার। ঈদে ঠিকমতো কেনাকাটা করা হয়নি। বাচ্চাদের জন্য কাপড়চোপড়ও কেনা হয়নি। কীভাবে কিনব? সবকিছুতে চড়া দাম।

তরমুজ বিক্রেতা নুরুল ইসলাম
প্রয়োজনে তেল ব্যবহার বন্ধ করে দেব

তরমুজ বিক্রি করে সংসার চালান নুরুল ইসলাম। দেড় মাস ধরে চকবাজার থানার চারপাশের রাস্তায় ভ্যানে করে তিনি সুস্বাদু এই ফল বিক্রি করছেন। পরিবারে আছে মা-বাবা, স্ত্রী আর তিন ছেলেমেয়ে। দুই ছেলে স্কুলে পড়ে। ছোট মেয়ের বয়স তিন বছর। সংসারে তার অনেক খরচ। এর মধ্যে সয়াবিন তেলসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বেসামাল অবস্থা।

তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তরমুজ বিক্রি করে সামান্য টাকা পাই। ঠিকমতো প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র কিনতে পারি না। কোনোরকম সংসার চলছে।

সয়াবিন তেল কখন কিনেছেন জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বলেন, সয়াবিন তেল ছাড়া তো কিছু হয় না। রান্নাবান্নার কাজ তো হবেই না। ঈদের আগে গলির মুখ থেকে দুই কেজি কিনেছিলোম। এখনো তা দিয়ে চলছে। এর মধ্যে দাম আবার বেড়েছে। আমরা কোথায় যাব?
তিনি বলেন, ঘরে মা ও মেয়ে অসুস্থ। তাদের জন্য ঔষধসহ নানা কিছু কিনতে হচ্ছে প্রতিদিন। একজনের আয়ে এতকিছু হয় না। কিন্তু কিছু করার নেই। কষ্ট করে তো বেঁচে থাকতে হবে। প্রয়োজনে কম খাব, রান্নায় তেল ব্যবহার বন্ধ করে দেব।

শাক বিক্রেতা ছাবের মিয়া
তেল ছাড়াই তরিতরকারি রান্না হচ্ছে

আমার এখানে পাট শাক, কলমি শাক, লাল শাক রয়েছে। এসব বিক্রি করে শ-দুয়েক টাকা আয় হয়। বয়স হয়ে গেছে, এরপরও রাস্তায় নেমেছি পেটের দায়ে। একমাত্র ছেলের আয়ে হয় না। সব কিছুর দাম চড়া। তেলের দাম সবার উপরে। এক কেজি তেলের মূল্য দুইশ টাকা। এত দামের তেল তো আমরা কিনতে পারব না। তাই খুব প্রয়োজন না হলে আমার ঘরে রান্নায় তেল ব্যবহার হয় না। তেল ছাড়াই তরিতরকারি রান্না হচ্ছে।

চকবাজার কাঁচাবাজারের ভ্রাম্যমাণ শাক বিক্রেতা ছাবের মিয়া আজাদীকে বললেন এসব কথা। গতকাল তিনি জানান, তার বাসা ডিসি রোডে। প্রতিদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেন। এরপর পাইকারি শাক বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে শাকের অর্ডার করেন। শাক চলে এলে বিক্রি শুরু করেন।

তেল ছাড়া তো রান্না হয় না। তাহলে কীভাবে রান্না হচ্ছে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, তেল ছাড়াও রান্না হয়। সেটা যে যেভাবে করেন আর কি। তবে মাছ মুরগিতে তেল অবশ্যই দিতে হয়। তা না হলে স্বাদ হয় না। সেক্ষেত্রে সামান্য হলেও তেল ব্যবহার করতে হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে নিম্নচাপ, বন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা
পরবর্তী নিবন্ধমাকে ভালোবাসি প্রতিদিন