সড়ক দুর্ঘটনা : চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে

| সোমবার , ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত হয়েছে ‘চট্টগ্রাম সিটি রোড সেফটি রিপোর্ট২০২৫’। এতে বলা হয়েছে, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার দিন দিন আশংকাজনক পর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে। ২০১৭ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আট বছরে নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ৬৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পথচারীরাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন। রিপোর্টে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে মৃত্যুর হার ২৯ শতাংশ এবং পথচারী মৃত্যুর হার ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। গত বুধবার নগরীর দামপাড়াস্থ পুলিশ লাইনের সম্মেলন কক্ষে প্রতিবেদনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ও অপারেশন) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ওয়াহিদুল হক চৌধুরী এবং চসিকের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আনিসুর রহমান সোহেল। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ। বিশেষ করে ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই হার প্রায় অপরিবর্তিত থাকলেও তা নগরীর সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকেই স্পষ্ট করে।

৮ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে পথচারীর সংখ্যা ৩৬৩ জন, যা মোট মৃত্যুর অর্ধেকেরও বেশি। একই সময়ে পথচারীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। পথচারীদের পর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে ছিলেন দুই ও তিন চাকার যানবাহনের চালক ও আরোহীরা। এসব যানবাহনের চালক এবং যাত্রী নিহত হয়েছেন ১৯৫ জন। প্রতিবেদনে নগরীর ২০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বড়পোল মোড়, অলংকার মোড়, সিইপিজেড গেট, সিটি গেট, নিউমার্কেট বাসস্টপ, কালামিয়া বাজার বাসস্টপ ও সাগরিকা গোলচত্বর। এসব এলাকায় দ্রুত সড়কের ত্রুটি চিহ্নিত এবং বিজ্ঞানভিত্তিক নকশা তৈরি করে সড়ক পুনর্নিমাণের সুপারিশ করা হয়েছে। পথচারী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফুটপাত প্রশস্ত করা, উঁচু জেব্রা ক্রসিং নির্মাণ, নিরবচ্ছিন্ন ফুটপাত, স্পিড হাম্প ও পথচারী দ্বীপ স্থাপনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪ বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে।

আসলে নানা রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরও সড়কে থামানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী যানবাহনের অতিরিক্ত গতি এবং চালকের বেপরোয়া মনোভাব। মহাসড়কে যান চলাচলের সর্বোচ্চ গতি বেঁধে দিয়ে এবং গতি পরিমাপক যন্ত্র ব্যবহার করে চালকদের ওই নির্দিষ্ট গতি মেনে চলতে বাধ্য করা হলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া চালকের দক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে লাইসেন্স প্রদানের ক্ষেত্রে। মহাসড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের কাজ করতে হবে সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে ইতোপূর্বে নানা ধরনের পরামর্শ ও সুপারিশ করা হয়। কিন্তু কেউ তাতে কর্ণপাত করেন বলে মনে হয় না। কর্তৃপক্ষও যেন নির্বিকার। ফলে একের পর এক ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ২০১৯ সালে একটি আইন কার্যকর করা হলেও এর যথাযথ বাস্তবায়ন আজও নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিরা পার পেয়ে যাচ্ছেন সহজেই। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে, সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকা। অতি বৃষ্টিতে সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টার্নিং চিহ্ন না থাকার ফলে নতুন চালকরা এসব সড়কে দুর্ঘটনায় পড়েছেন। উল্টোপথে চলাচল, অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং অতিরিক্ত সময় ধরে চালকের আসনে একজন থাকায় দুর্ঘটনার সংখ্যা কমছে না। ধীর ও দ্রুতগতির বাহনের জন্য পৃথক লেনের ব্যবস্থা করতে সুপারিশ করেছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, দুর্ঘটনা রোধে চালকদের ওভারটেকিং করার মানসিকতাও পরিহার করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে দেশের সড়ক ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। শুধু চালকদের দক্ষতা বিচার করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করা জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে