সড়ক দুর্ঘটনার সমন্বিত ডাটা ব্যাংক নেই 

জানা যায় না সঠিক তথ্য

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ৩০ এপ্রিল, ২০২৩ at ৬:৪৫ পূর্বাহ্ণ

সড়ক দুর্ঘটনার সমন্বিত কোন ডাটা ব্যাংক নেই। চালুর উদ্যোগও নেই। এই ডাটা ব্যাংক না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনার পূর্ণাঙ্গ কোন পরিসংখ্যান জানা যাচ্ছে না। সরকারিবেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তারা নিজেদের মতো করে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে। দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য তুলে ধরার জন্য কেন্দ্রীয় ডাটা ব্যাংক থাকা দরকার বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ জন্য বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে বলেও জানান তারা।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুবরব্বানী বলেছেন, এখন পর্যন্ত সরকারিবেসরকারি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ডাটা ব্যাংক করার কোনও পরিকল্পনা নেই। সারা দেশে বিআরটিএর যেসব অফিস রয়েছে, সেসব অফিস থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে সদর দফতরে পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করে থাকি। আগামীতে সব স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পরবর্তী সময়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ভবিষ্যতে বলা যাবে।

২০২৩ সালের শুরু থেকে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রকাশ করা শুরু করেছে বিআরটিএ। বেসরকারিভাবে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা), রোড সেফটি ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং প্রতি বছর তা প্রকাশ করে। এছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার যেসব বিষয় থানায় মামলা কিংবা জিডি হয়, সেসব বিষয় ছাড়া আর কোনও বাড়তি তথ্য পুলিশের কাছে থাকে না।

২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি ও মার্চে বিআরটিএর প্রতিবেদনে উঠে আসে ৩৮৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ৪১৫ জন ও আহত ৬৮৮ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে মার্চে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮৭টি, নিহত ৫৩৮ জন আর আহত ১১৩৮ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ৪৮৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৬৪ জন ও আহত ১০৯৭ জন।

একইভাবে চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে বিআরটিএর প্রতিবেদনে ৩৩৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৩০৩ জন ও আহত ৪১৬ জন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদনে ফেব্রুয়ারিতে ৪৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৪৬৭ জন ও আহত ৭৭১ জন। রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে ৪৩৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮৭ জন নিহত এবং আহত হয়েছে ৭১২ জন।

পরিসংখ্যানের এ তারতম্য গত বছরে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতবছর পর্যন্ত বিআরটিএর কোনো পরিসংখ্যান নেই। নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৫ হাজার ৭০টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৫ হাজার ৭৬০ জন এবং আহত হয়েছে ৭ হাজার ৩৩১ জন। এর মধ্যে ৭৭টি নৌদুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২০৪ জন, আহত ১৪৪ জন ও নিখোঁজ রয়েছে ১৮৬ জন। ২৫৬টি রেল দুর্ঘটনায় নিহত ২৭০ জন ও আহত হয়েছে ৫১ জন। ১১টি জাতীয় ইলেকট্রনিঙ মিডিয়া, অনলাইন, শাখা সংগঠনের প্রতিবেদন, অনুমেয় বা অপ্রকাশিত ঘটনার ভিত্তিতে তৈরি করা হয় নিসচার এই প্রতিবেদন।

আবার রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের ২০২২ সালের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৮২৯টি। নিহত হয়েছে ৭ হাজার ৭১৩ জন, আহত হয়েছে ১২ হাজার ৬১৫ জন। এর মধ্যে ১৯৭টি নৌদুর্ঘটনায় ৩১৯ জন নিহত, আহত ৭৩ জন এবং নিখোঁজ ৯২ জন। ৩৫৪টি রেল দুর্ঘটনায় নিহত ৩২৬ জন, আহতের সংখ্যা ১১৩ জন। ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন পোর্টাল ও টিভি চ্যানেলের খবরের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংস্থাটি।

এদিকে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির ২০২২ সালের তথ্যে দেখা যায়, দুর্ঘটনার সংখ্যা ৬ হাজার ৭৪৯টি। নিহতের সংখ্যা ৯ হাজার ৯৫১ জন। আহত ১২ হাজার ৩৫৬ জন। এর মধ্যে রেলপথে ৬০৬টি দুর্ঘটনায় ৫৫০ জন নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২০১ জন। ২৫২টি নৌ দুর্ঘটনায় নিহত ৩৫৭ জন, আহত ৩১৮ জন এবং নিখোঁজ ৭৪৩ জন। দেশের জাতীয়, আঞ্চলিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌদুর্ঘটনার সংবাদ মনিটর করে এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংস্থাটি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় মূল হোতাসহ দুই আসামি গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধ‘কোনো কৌশলেই’ সিটি নির্বাচনে নেই বিএনপি : ফখরুল