নগরীর সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক হচ্ছে বারিকবিল্ডিং থেকে শুরু করে বিমানবন্দর সড়ক। পতেঙ্গা ও বড়পুল দিয়ে আউটার রিং রোডের সাথেও যুক্ত হয়েছে এই সড়কটি। আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়িও চট্টগ্রাম বন্দরের তিন, চার, পাঁচ নম্বর গেইট, সিসিটি, এনসিটি গেইটে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হয় সড়কটি। আবার ইপিজেডসহ পতেঙ্গার বেশ কয়েকটি বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালের পণ্যবাহী ভারী যানবাহন এবং পতেঙ্গা এলাকার জ্বালানি তেল ডিপোগুলো থেকে তেলবাহী অসংখ্য ট্যাংক লরি চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। পতেঙ্গা সাইলো থেকে খাদ্যবাহী শত শত ট্রাকের ভারও সইতে হয় সড়কটিকে। যে কারণে চট্টগ্রাম ও দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। গত আড়াই বছর ধরে সড়কটির উপর দিয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছে বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক্সপ্রেসওয়েটি নিয়ে মানুষের মাঝে উচ্ছ্বাস থাকলেও ভোগান্তিও বেশি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে বারিকবিল্ডিং থেকে লালখান বাজারমুখী অংশে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হলে বাণিজ্যিক এলাকা আগ্রাবাদের বাসিন্দাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিশেষ করে অফিস চলাকালীন সময়ে পুরো এলাকাজুড়ে যানজটের কবলে পড়তে হয়। একইসাথে চলমান রয়েছে পতেঙ্গা বারিকবিল্ডিং অংশের কাজও। বর্তমানে ওই অংশের সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত আনুমানিক আড়াই কিলোমিটার সড়ক জুড়েই তৈরি হয়েছে গর্ত। চলতি ভারি বর্ষণে এসব গর্ত ডোবায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সড়কটির পাশের নালাগুলো ভরাট থাকায় ভারী বর্ষণে আশপাশের পানি রাস্তায় জমে জলাবদ্ধতা তৈরি করছে। এতে পানির মধ্যে দিয়ে গাড়ি চলাচলের কারণে সড়কটিতে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। বিশেষ করে ভারী পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ডাম্পার, ট্যাংক লরি, প্রাইমমুভার চলাচলের কারণে পুরো সড়কটি ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের পাশাপাশি নিয়ম মাফিক পাশের সড়কটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার তা মানছেন না। বৃষ্টিতে পানি জমে গর্তগুলো দুর্ঘটনার অদৃশ্য ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এসব ফাঁদ মাড়িয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলছে শত শত গাড়ি।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, সল্টগোলা ক্রসিং পেরিয়ে মাইলের মাথা থেকে ইপিজেড মোড় হয়ে বন্দরটিলা পর্যন্ত পুরো সড়কটি ভেঙে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইপিজেড এলাকায় কথা হলে বাস চালক আলী আকবর বলেন, ‘এখানে পতেঙ্গা থেকে ফ্লাইওভার (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণ হচ্ছে। ফ্লাইওভারের বড় পিলারগুলো হয়ে গেলেও পাশের সড়কগুলো ভালোভাবে মেরামত করা হয় না। এখন শত শত গর্ত হয়েছে। পানির মধ্যে এসব গর্ত চোখে দেখা যায় না। অনুমানের উপর গাড়ি চালালেও অনেক সময় গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যায়। চাকা নষ্ট হয়ে যায়। রাস্তার মধ্যেই চলন্ত অবস্থার গাড়ি নষ্ট হয়ে পড়লে পুরো সড়কটিই বন্ধ হয়ে যায়।’ পতেঙ্গার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন বলেন, ‘বিমান বন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। এ ধরণের উন্নয়ন ভালো উদ্যোগ। কিন্তু এ উন্নয়ন কাজ কখন শেষ হবে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। আমরা জেনেছি, সড়ক চলাচল উপযোগী রেখেই প্রকল্পের কাজ করবে ঠিকাদার। কিন্তু সড়কটিতে শত শত গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্ত ভরাটের কোন আগ্রহ নেই ঠিকাদারের। সিডিএ এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলেও মনে হচ্ছে ঠিকাদার তাদের কথা শুনছেন না। এখন পানির মধ্যে গাড়ি চলাচল করায় দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক ভ্যান, রিকশা ও সিএনজি উল্টে অনেক মানুষ ইতোমধ্যে আহত হয়েছেন। অনেক সময় ট্রাক ও বাস বিকল হয়ে পুরো রাস্তায় যানজট তৈরি হয়। এখন সিডিএ’র উচিত গর্তগুলো দ্রুত ভরাটের ব্যবস্থা নেয়া।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিডিএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিমেন্ট ক্রসিং থেকে শুরু হওয়া সড়কটিতে পাশে ড্রেন বলতে নেই। সিটি কর্পোরেশন পুরো সড়কটিতে আগে কোন ড্রেন করেনি। পুরনো ড্রেনগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হওয়ায় এখন বিপত্তি আরও বেড়েছে। রাস্তায় পানি জমে বড় বড় গর্ত হচ্ছে। এখানে পানির কারণে ম্যাকাডামও ঠিকবে না। ইট-বালি ফেললে দুই চারদিনের মধ্যেই ট্রাকের চাকার সাথে উঠে গিয়ে পুনরায় গর্ত হয়ে যায়। আমরা ঠিকাদারকে বলেছি ইট দিয়ে সলিন তৈরি করে দেয়ার জন্য। ঠিকাদারের গাফেলতি রয়েছে। এখানে আপাতত ইটের সলিন করে দিলে রাস্তাটিতে গর্ত হবে না।’
জানতে চাইলে সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বর্ষা চলে আসায় সড়কটিতে কার্পেটিং করা সম্ভব হচ্ছে না। আমি পিডিকে (প্রকল্প পরিচালক) বলেছি গর্তগুলো দ্রুত ভরাট করার ব্যবস্থা নিতে।’
প্রসঙ্গত, ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিমানবন্দর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ক কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেকে প্রকল্পটি পাশ হয়। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।