রাঙ্গুনিয়ায় একটি স্কুল সড়কের আট ফুটের মধ্যে পাঁচ ফুটই দখল করে ফেলেছেন এক দখলদার। সড়কের অন্তত পঞ্চাশ ফুট অংশ কেটে তার বসতঘর অংশে টিনের বেড়া এবং কৃষি জমির অংশে বালির বস্তা দিয়ে দিয়েছেন। উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী আলহাজ্ব আবুল বশর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে এই দখল প্রক্রিয়া চালানো হয়েছে। এভাবে সড়ক কেটে ফেলায় গত শনিবার দুপুরে একটি বৈদ্যুতিক খুঁটিসহ সড়কটি ধসে পড়েছে। এতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সহস্রাধিক গ্রাহকের ঘরে অন্ধকার নেমে আসে। এছাড়া সড়ক পথে চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত এটি ঠিক করে বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক করা যায়নি। সড়কের মাটি ভরাট করে না দিলে খুঁটিটি ঠিক করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। এদিকে সড়কের জায়গা দখলের ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ থেকে জানা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আলহাজ্ব আবুল বশর চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয় সড়কটি অন্তত আটফুট প্রশস্ত। সড়কে সরকারিভাবে স্থাপন করা দুটি কালভার্ট এই সড়কের প্রবেশমুখে এবং শেষ প্রান্তে ইতিপূর্বে স্থাপিত হয়েছিল। ২০১৫ সালে স্কুলের উদ্যোগে সড়কটিতে বৃক্ষরোপণও করা হয়েছিলো। যেটি দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি ডিঙ্গেললোঙ্গা, অ্যান্দরঘোনা, বানিয়াখোলা ও আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকা থেকে শত শত স্কুল শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে যাতায়াত করে থাকে। সমপ্রতি এই সড়কের অর্ধেক অংশ কেটে টিনের বেড়া দিয়ে দখল করে ফেলেছেন স্থানীয় আবু মুছা নামের এক ব্যক্তি। এতে স্থানীয় ও স্কুল শিক্ষার্থীদের চলাচলের পথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। শত শত স্কুল শিক্ষার্থী ও এলাকার সচেতন মহল এর প্রতিবাদ করেও তাকে বিরত রাখতে পারেননি। পরে ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কান্তি নাথসহ স্কুল পরিচালনা কমিটি। টুম্পা আক্তার নামে এক স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, সড়ক ধসে পড়ায় আমাদের ৫ মিনিটের পথ একঘণ্টা দূরত্বের রাস্তা ঘুরে আসতে হচ্ছে। এজন্য আমাদের অনেক সহপাঠী স্কুলেও আসছে না। শাপলা বেগম নামে স্থানীয় এক নারী বলেন, একজন মানুষের কারণে স্কুলের সব শিক্ষার্থী কষ্ট পাচ্ছে। এখন বৈদ্যুতিক খুঁটিও ভেঙে পড়ায় আমরা অন্ধকারে। সড়ক ধসে পড়ায় ঘর থেকে বের হওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবীর কান্তি নাথ জানান, বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ৬০০ শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক চলাচল কষ্টকর হচ্ছে। সড়ক দখলমুক্ত ও কালভার্টের পানি চলাচল ব্যবস্থা অবমুক্ত করতে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহায়তা কামনা করেন। সড়ক দখলের ব্যাপারে অভিযুক্ত মো. মুছা চৌধুরী জানান, তিনি প্রবাসে থাকা অবস্থায় তার জায়গা দখল করে এই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি এখন তার জায়গা দখলে নিয়েছেন বলে জানান। সড়ক কাটার কারণেই সড়কসহ বৈদ্যুতিক খুঁটিটি ধসে পড়েছে বলে স্বীকার করলেও সড়ক অন্য কেউ কেটেছে বলে তিনি দাবি করেন। বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম জুয়েল দাশ জানান, খুঁটিটি ঠিক করতে হলে খুঁটির গোড়ায় মাটি না দিলে এটি আবারও ধসে পড়ার আশংকা থেকে যাবে। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ‘স্কুলের পক্ষ থেকে সড়ক দখলের ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্তের জন্য সমপ্রতি স্থানীয় ভূমি অফিসের কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পাঠানো হয়েছে। শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’