নগরীতে দিন দিন বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। রয়েছে অসহনীয় যানজট। দুর্ঘটনা এড়াতে মোটরযান আইন থাকলেও তা তোয়াক্কা করছে না অনেকে। জনসাধারণের সচেতনতার অভাব, চালকদের অসতর্কতা, অবহেলা, আইন–কানুন না জানা, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বহীনতা এবং আইন বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ না থাকাই এর মূল কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। একদিকে যেমন সাধারণ জনগন ট্রাফিক আইন মেনে চলছেন না ঠিক তেমনি তা অনুসরণ করছেন না চালকরাও। এ অবস্থায় ট্রাফিক আইন মেনে চলার বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও যানজট মুক্ত নগরী হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে আজ ৪ জুন থেকে ট্রাফিক পক্ষ শুরু হচ্ছে সিএমপির ট্রাফিক উত্তর বিভাগে। নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে সিএমপির উপ কমিশনার (ট্রাফিক–উত্তর) জয়নাল আবেদীন আজাদীকে বলেন, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইন মেনে না চলার প্রবণতা বেশি। তাই ট্রাফিক পক্ষ উপলক্ষে আমরা উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক বেশ কিছু কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। মূলত নগরবাসীকে সচেতন করতেই এ উদ্যোগগুলো নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাফিক উত্তর বিভাগে ইতোপূর্বে কিছু উদ্যোগ নিয়েছিলাম যা রমজান মাসে যান চলাচলে স্বস্তি দিয়েছিল। রাস্তার মোড়ে, গুরুত্বপূর্ণ জংশনে রোড ডিভাইডার দিয়ে কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। ফলে উত্তর ডিভিশন এলাকায় কোথাও গাড়ির চাকা খুব একটা থেমে থাকে না।
উপ কমিশনার জয়নাল আরও বলেন, দামপাড়া গরীবুল্লাহ শাহ এলাকার দীর্ঘদিনের অবৈধ বাস টার্মিনাল উঠিয়ে দিয়েছি। গাড়িগুলো এখন শৃঙ্খলায় চলাচল করে। শুধুমাত্র যাদের পার্কিং আছে তারা নির্ধারিত পার্কিংয়ে যাত্রী পরিবহন করে চলে যেতে পারে। আমাদের এই উদ্যোগটি সফল হয়েছে। এখন আমরা চেষ্টা করছি নগরীর অভ্যন্তরে গাড়িগুলোকে বিশেষ করে বাস নির্দিষ্ট জায়গায় থামানোয় অভ্যস্ত করতে। সেইজন্যে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা আপাতত দুইটি এলাকা জিইসি এবং ২ নং গেট এলাকায় বাস থামার জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছি। ট্রাফিক পক্ষে আমরা চেষ্টা করব বাসগুলোকে নির্ধারিত জায়গায় থামাতে। যদি সফল হই তবে অন্য এলাকাগুলোতে চেষ্টা করব। রোববার (আজ) পুলিশ কমিশনার স্যার নতুন একটি উদ্যোগের উদ্বোধন করবেন। তা হল কাউন্টার ভিত্তিক বুক কর্নার। একটা সেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নযাত্রীকে সাথে রেখেছি। অপেক্ষমান যাত্রীরা অনেকেই ওয়াইফাই সার্চ করেন। আমার মনে হল যেহেতু আমি বইয়ের মানুষ তাদেরকেও বই পড়াতে উদ্বুদ্ধ করলে ক্ষতি কি?
নগরীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে গতকাল দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রাস্তা পার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। ফলে অনেক সময়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। আবার যেসব স্থানে ফুট ওভার ব্রিজ আছে সেগুলো দীর্ঘদিন ধরে পথচারী পারাপারে ব্যবহৃত না হয়ে হকারদের প্রয়োজনে, কখনো আবার অসামাজিক কার্যকলাপে ব্যবহার হচ্ছে। ফুটওভার ব্রিজের নিচ দিয়ে দৌড়ে রাস্তা পারাপারের চিত্র অহরহ দেখা যায়। এমনকি শিশু সন্তান কোলে নিয়ে অথবা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অনেকে রাস্তা পার হচ্ছেন। যাত্রী সংগ্রহে দুর্বার গতিতে লোকাল বাস, হিউম্যান হলারের ছুটে চলার দৃশ্য নিত্যদিনের। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাসগুলোর এমন বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোট–বড় দুর্ঘটনা। এছাড়া রয়েছে ফিটনেস বিহীন লক্কর ঝক্কর গাড়ির ছড়াছড়ি। নির্ধারিত রুট পারমিটের রাস্তা ব্যবহার করার কথা থাকলেও মানছেন না চালক। কোন কোন সড়কে গতিসীমা ১৫–২০ থাকলেও গাড়ি চলছে ৩০–৪০ কি.মি. গতিতে। বিপজ্জনকভাবে ওভারটেক করতেও দেখা যায় চালকদের। আবার যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠা–নামানোর কাজ করছে চালক–হেলপার। ফলে বাড়ছে যানজট আর ভোগান্তি। এক্ষেত্রে ট্রাফিক উত্তর বিভাগের মতো বাকি তিনটি বিভাগও এগিয়ে এলে শৃঙ্খরায় ফিরবে যান চলাচল।