হাটহাজারীতে গতকাল বৃহস্পতিবার পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। উপজেলার আওতাধীন কাপ্তাই মহাসড়কের নজুমিয়ার হাটে সকালে, নাজিরহাট মহাসড়কের চারিয়া বোর্ড স্কুল এলাকায় বিকেলে এবং রাঙামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার নাপিতেরঘাট এলাকায় রাতে এই তিনটি দুর্ঘটনা ঘটে। পৃথক এইসব দুর্ঘটনায় একজন প্রাইভেটকার চালক, একজন গৃহবধূ এবং এক কিশোর নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন শিশু ও নারীসহ অন্তত ৮ ব্যক্তি। আমাদের রাউজান প্রতিনিধি জানান, রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের দেওয়ানপুর আমিন মেম্বারের বাড়ির প্রবাসী মোহাম্মদ আলীর একমাত্র ছেলে মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম আসিফ (২২) মুদি দোকানের চাকরি ছেড়ে শখের বশে হয়ে যান গাড়ি চালক। ছয় মাস মাইক্রোবাসের চালকের সহকারী হিসেবে কাজ করে ভাড়ায় চালিত একটি কার নিয়ে বসে যান চালকের আসনে। আসিফ গত কিছুদিন ধরে চালাচ্ছিলেন এই কার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কারে করে রাউজানের নোয়াপাড়া থেকে প্রবাসগামী যাত্রী উঠিয়ে পৌঁছে দিয়েছিলেন হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে। সকালে ঘুম চোখে গাড়ি চালিয়ে নোয়াপাড়ায় ফেরার পথে সড়কে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কাভার্ডভ্যানের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে চিরতরে পরপারের পথে পাড়ি জমান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কাপ্তাই রোডের (হাটহাজারী অংশে) হাজী হামিদ শরীফ রোডের কাছে দ্রুতগতির কারটি এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কভার্ডভ্যানের উপর আছড়ে পড়ে। এতে দুমড়ে মুচড়ে যায় কারটি। স্টিয়ারিংয়ের চাপে গুরুতর আহত হয়ে মর্মান্তিকভাবে নিহত হন প্রাইভেটকার চালক আসিফ। এই ঘটনায় আহত হন কারে থাকা প্রবাসী পরিবারের পাঁচজন।
জানা যায়, দুর্ঘটনার সাথে সাথে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠালে চিকিৎসক চালক আসিফকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত অপর পাঁচ যাত্রী মোহাম্মদ জাফর (৪৫), রোজি আকতার (২৫), রানা (১২), মীম (৭) ও আবিদকে (৫) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা সকলেই রাউজানের পুবগুজরা ইনিয়নের ছিপাতলী এলাকার বাসিন্দা। প্রবাসযাত্রী আরমানকে বিমানবন্দর পৌঁছে দিতে গিয়েছিলেন তারা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মদুনাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মাহবুবুর রহমান বলেন, সকাল ৭টার দিকে এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গাড়ি দুটি পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, দুর্ঘটনায় আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
আমাদের হাটহাজারী প্রতিনিধি জানান, হাটহাজারীতে সিএনজিচালিত টেঙি ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঝিনু আক্তার (২৭) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি মেখল ইউনিয়নের রুহুল্লাপুর এলাকার হাবিবুল্লাহর স্ত্রী। একই ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহীসহ নিহতের দুই শিশু সন্তানও গুরুতর আহত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়কের বোর্ডস্কুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সাড়ে ৫টার দিকে গৃহবধূ ঝিনু আক্তার তার সন্তানদের নিয়ে চারিয়া এলাকা থেকে দাওয়াত খেয়ে টেঙি যোগে হাটহাজারীর দিকে আসছিল। টেঙিটি রুহুল্লাপুর এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মোটরসাইকেলের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে টেঙির যাত্রীসহ তিনজন গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে নিয়ে গেলে ঝিনু আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। দুর্ঘটনায় আহতরা হলেন, গৃহবধূর সন্তান তাসনিয়া (৩) ও মহিদ (৮) ও মোটরসাইকেল আরোহী সাইফুল আমিন (১৮)।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. হিমু মজুমদার জানান, আহত মোটরসাইকেল আরোহী সাইফুল আমিনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাকে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। থানার উপপরিদর্শক মো. একরামুল হক দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এদিকে গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাঙামাটি মহাসড়কের হাটহাজারী পৌরসভার নাপিতের ঘাটা সংলগ্ন এলাকায় মোহাম্মদ জিহান নামে (১৪) এক কিশোর মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। নিহত কিশোর ফটিকছড়ি উপজেলার বক্তপুর এলাকার জহুর মিয়ার পুত্র। তিনি এক আত্মীয়ের সঙ্গে মোটরসাইকেল যোগে বাড়ি ফেরার পথে ট্রাক চাপায় নিহত হন। তাদের বহনকারী মোটরসাইকেলটি নাপিতের ঘাটা এলাকায় পৌঁছালে হঠাৎ সামনে একটি ভ্যান পড়লে নিজেকে বাঁচাতে সড়কে লাফ দিলে বিপরীত দিক থেকে আসা দ্রুতগতির ট্রাকের নিচে চাপা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান জিহান। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রাউজান হাইওয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে এসে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ মর্গে প্রেরণ করে।