সড়কে আহাজারি থামবে কবে

| শুক্রবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ

একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। কিছুতেই থামছে না, বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অবস্থা এমন সেটা কারো সাথে তুলনা করা চলে না। এটি যেন ‘মহামারী’র আকার ধারণ করেছে। একটি ঘটনার রেশ না কাটতেই আরেকটি ঘটনা ঘটছে। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর থাকছে। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যাও অনেক। এর প্রতিকার অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে ‘সড়কে কেন এত দুর্ঘটনা, কান্না/ চট্টগ্রামে ঊনচল্লিশ দিনে নিহত ১৯’ শীর্ষক প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চালকের বেপরোয়া গতি নিভিয়ে দিচ্ছে একের পর এক জীবন প্রদীপ। যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। বাড়ছে সাধারণ মানুষের কান্না। প্রিয়তমা স্ত্রীর সামনে মুহূর্তেই স্বামী হয়ে যাচ্ছে লাশ, মায়ের সামনে সন্তান হয়ে যাচ্ছে শুধুই মাংসপিণ্ড। চলতি বছর গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ঊনচল্লিশ দিনে নগরী ও জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৯ জন। প্রতিকারে নেই কোনো ব্যবস্থা। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা হয় অনেক, কার্যকর হয় গুটিকয়েক। সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (যানবাহন) শ্যামল কুমার নাথ আজাদীকে বলেন, জনসচেনতা, অসতর্কতা ও সড়কে অল্প দূরত্বে অনেক বিপজ্জনক বাঁক, যানবাহন চলাচলে অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা, কার আগে কে যাবে এ প্রতিযোগিতায় নেমে সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে গিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ, পেছন দিকে আঘাত করা এবং নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চালকের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে সবচেয়ে বেশি। নিয়ম ভেঙে সামনের গাড়িকে ওভারটেক করতে যাওয়া, অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া, চালকের পরিবর্তে হেলপারের গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন না মানার কারণে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দুর্ঘটনার তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ এবং যথার্থ গবেষণা হলে সড়কপথে অনেক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। দুর্ঘটনা রোধে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং বিআরটিএর সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ সেলগুলো কার্যকর কিছুই করতে পারছে না। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে গবেষণাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন এভাবে মানুষ মরত না। সর্বশেষ চকরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ ভাইয়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোনো কোনো দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়। আমাদের দেশে সড়ক দুর্ঘটনার অনেক কারণ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চালকদের অসাবধানতা, অদক্ষতা, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুঃসাহসিকতার প্রমাণ ঘটনার চেষ্টা, ওভারটেকিং, ছোট যানবাহনের সংখ্যাধিক্য, সড়কের দু’পার্শ্বে অবৈধ হাট বাজার, ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা, অতিরিক্ত মাল ও যাত্রী বোঝাই, লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালক ইত্যাদি। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ চালকের অসাবধানতা ও বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত যাত্রী, চলন্ত বাসে চালকের মুঠোফোন ব্যবহারের প্রবণতা। তাছাড়া একজন চালকের অবৈধ লাইসেন্সের ব্যাপারও জড়িত। বেশিরভাগ চালকের বৈধ লাইসেন্স নেই। এক প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বর্তমান দেশের ৬১ শতাংশ চালক পরীক্ষা না দিয়ে লাইসেন্স পাচ্ছেন। আবার ১৬ লাখ চালকের কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। আমাদের দেশটা এমন হয়েছে যে, টাকার জোরে অনেক কিছু অসাধ্য সাধন করা যায়। যাদের সাবধানতা দক্ষতার ওপরে অনেক যাত্রীর প্রাণ রক্ষা পাওয়ার কথা অথচ তাদের কোনো বৈধ লাইসেন্স ও দক্ষতা নেই। এ সমস্ত অদক্ষ চালকের দ্বারা তো দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। হচ্ছেও তাই। এ সমস্ত লাইসেন্স বিহীন অদক্ষ চালকের অসাবধানতার জন্য কত মানুষের যে জীবন প্রদীপ নিভে যাচ্ছে তার কোনো হিসেব নেই। কত পরিবারে নেমে আসছে অবর্ণনীয় দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা, যন্ত্রণা। এর থেকে আমরা রেহাই পেতে চাই। আমরা দেখতে চাই নিরাপদ সড়ক, সড়ক পথে কোনো প্রাণহানি নয়, দেখতে চাই স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধসৈয়দ মুজতবা আলী : বহুভাষাবিদ ও রম্যসাহিত্যিক