সড়কে আর কতো রক্তস্নান হবে?

শিউলী নাথ | শুক্রবার , ৪ জুন, ২০২১ at ৬:০১ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ ও শান্তির স্থান নিজের ঘর। সে অট্টালিকাই হোক বা কুঁড়েঘর। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে একটু শ্রান্তির আশায় পাখি যেমন নীড়ে ফিরে আসে,তেমনি মানুষও ঘরে ফিরে আসে। আজকাল এই ঘরে ফিরে আসাটা মানুষের কাছে বিস্ময়কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা সুস্থ ও নিরাপদ ভাবে ঘরে পৌঁছাতে পেরেছি মানেই আরেকটি দিন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা পাচ্ছি। “একটা দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না”-এই শ্লোগানটি যেন দিনের পর দিন মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। গত এক বছরে করোনা মহামারীতে যত না মানুষ মারা গেছে,তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে মানুষ বাড়ি ফেরে।কিন্তু মাঝপথেই আশা ও স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে।যে পিতা- মাতা সন্তানের ফেরার অপেক্ষায় থাকেন,তারাই হয়তো সন্তানের শেষকৃত্যের জন্য ছুটে যান। অথবা সন্তানেরা পিতা- মাতার অপেক্ষায় থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত লাশ ঘরেই তাদের খুঁজে পান।
রাস্তায় অদক্ষ, বেপরোয়া, অনভিজ্ঞ কমবয়সী ড্রাইভারের হাতে স্টিয়ারিং তুলে দেয়ার আগে জনগণের কথা ভাববার মত মানুষ যেন মাথার উপরে নেই। নয়তো তাজা প্রাণগুলো ঝরে পড়তো না। তাছাড়া মানবিক মূল্যবোধগুলো ক্রমশ যে হ্রাস পাচ্ছে এবং দারিদ্র্য হতাশা আমাদের যে নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তার প্রমাণ হলো- দুর্ঘটনা পরবর্তী পরিস্থিতি। মানুষগুলোকে বাঁচানোর জন্য আশেপাশের মানুষ তৎপর না হয়ে ঐ দুর্ঘটনা কবলিত মানুষগুলোর ব্যাগ, মানিব্যাগ, মোবাইল ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে ব্যস্ত। তাই দীর্ঘ সময় পরেও তাদের পরিচয় কেউ খুঁজে পায় না। আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব সবার কাছে নিথর দেহটাই ফিরে আসে। তাছাড়া কিছু আইনী জটিলতার কারণে অনেকে উদ্ধার কার্যে এগিয়ে আসতে ভয় পায়। যে কিশোর পরীক্ষা পাসের জন্য ‘সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন’ লিখে, সেও হয়ত সড়কে প্রাণ বিসর্জন দিয়ে সংবাদপত্রে শিরোনাম হয়। অন্যদের ও নিশ্চয়তা নেই। এভাবে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ আপামর মানুষ প্রাণ দিচ্ছে। আর পরীক্ষায় পাসের জন্য গৎবাধা প্রতিবেদন বা সংবাদপত্রে চিঠি নয়– এবার সৎ, নির্লোভ ও যোগ্য কর্তৃপক্ষের আশুদৃষ্টি ও যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার সময় এসেছে। প্রয়োজনে ক্ষেত্র বিশেষে কড়াকড়ি বা শিথিলতার ব্যবস্থা করে প্রাণের স্পন্দনকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আর একটা পরিবারও যেন নিঃস্ব না হয় এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। প্রতিবাদ আর মানববন্ধন করেই যেন আমাদের দায়িত্ব শেষ! এরপর আবার মৃত্যু, আবার মানববন্ধন। এর শেষ কোথায়?

পূর্ববর্তী নিবন্ধউৎপাদিত খাদ্যের মান ভালো করতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধএকবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের চা শিল্প