জনদুর্ভোগ লাগবে রাউজান সদর ইউনিয়নের জামুয়াইন–কাগতিয়া সড়ক পথের কাগতিয়া খালের ওপর একটি পাকা সেতু পাওয়ার বহু বছরের স্বপ্ন ছিল ওই এলাকার মানুষের। এলাকাবাসী প্রত্যাশা পূরণে এখানে একটি সেতু ইতোমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে স্থানীয়রা এখন সদ্য নির্মিত সেতুটি দেখে বলছেন, নতুন সেতুটি এলাকার মানুষের জন্য নতুন দুর্ভোগের কারণ হয়েছে। বিশেষ করে প্রবীণ ও শিশুদের জন্য ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সদ্য নির্মিত সেতুটি মূল সড়ক থেকে অন্তত ৬ থেকে ৮ ফুট উচ্চতায়। দুই পাশে থাকা সংযোগ সড়ক সেতুর গোড়া থেকে অনেক নিচে থাকা বালুর বস্তায় মানুষ সেতু পারাপার করছে। এমন অবস্থার মধ্যে মানুষ সেতু পারাপার করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য এই সেতু চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা যায়, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে রাউজানের মোট ছয়টি সেতুর কাজ পেয়েছিল মের্সাস চম্পা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছর প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ পেয়ে নিজে কাজ না করে ছয়টি সেতু নির্মাণে উপ–ঠিকাদার হিসাবে চুক্তিবদ্ধ হয় রাউজানের ছয় ব্যক্তির সাথে। উপ–ঠিকাদরের হাতে নির্মিত হয় জামুয়াইন–কাগতিয়া সড়ক পথের আলোচিত সেতুটি।
জানা যায়, এই সড়ক পথে কয়েকটি গ্রামের মানুষের বিভিন্নমুখী যাতায়াত করে। নানা বয়সী শিক্ষার্থীরা যাওয়া–আসা করে স্কুল, কলেজ, মাদরাসায়। এলাকাবাসীর বহু বছরের গণদাবির পরিপেক্ষিতে খালের ওপর করা হয়েছে এই পাকা সেতু। কিন্তু এখানে নির্মাণ করা সেতুটি এখন বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বাড়িয়ে দিয়েছে অন্য রকম ভোগান্তি। স্থানীয় বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত বিজিবির কর্মকর্তা মহসিন আলী বলেন, মূল সড়ক থেকে এত উচ্চতায় সেতু নির্মাণ করতে আমি কোথাও দেখেনি। তার অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ মনগড়া নঙায় সেতু নির্মাণের অনুমোদন দেয়ায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেতুটি এত উচ্চতায় করতে পেরেছে। তিনি বলেন, সেতুটি দুই পাশের গোড়া পর্যন্ত সংযোগ সড়কে মাটি ভরাট না করায় এখন এই পথে যাতায়াতকারী মানুষের দুর্ভোগ আগের চাইতে আরো বেড়ে গেছে।
আলো রাণী দে নামে এক বয়স্ক নারী বলেন, সেতুটি পার হতে গিয়ে আমাদের মত বয়স্কদের হাঁপিয়ে উঠে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। মনে হয় পাহাড়ে উঠানামা করছি। আবুল কাসেম নামে একজন বলেন, এত উঁচুতে নির্মিত সেতুটি পারপার করতে গিয়ে শ্বাস কষ্টে থাকা প্রবীণ নারী পুরুষ ও শিশুরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। তিনি মনে করেন, এখানে মনগড়া এমন সেতু নির্মাণ না করাটাই ভালো ছিল। গ্রামীণ জনপদে মূল
সড়ক থেকে এত উচ্চতায় সেতু নির্মাণ নিয়ে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসের বিবেচনায় ঢাকা থেকে এমন নকশা অনুমোদন করা হয়। এই কর্মকর্তার মতে যারা নকশা অনুমোদন করেন তাদের অনেকের ধারণা থাকে না; কোন জেলা উপজেলার প্রাকৃতিক দুর্যোগের গতি প্রকৃতি কী রকম।
নির্মাণকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আবদুল জাব্বারের কাছে সেতুটির বর্তমান অবস্থা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি রাউজানের বাইরের লোক। নিজের লাইসেন্সে রাউজানের ছয়টি সেতুর কাজ পেলেও বিভিন্ন কারণে সেখানে গিয়ে কাজ করার তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। এ কারণে স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় মেম্বার বাবুল, রিপন, শহীদ, ইউছুপ নামের লোকজনের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে উপ–ঠিকাদার নিয়োগ করেছেন। তারা সরকারি কর্তৃপক্ষের নকশা অনুসারে কাজ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে রাউজান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সুজন দাশের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।