সড়কেই কাটল ঘণ্টার পর ঘণ্টা

যানজটে স্থবির নগরী

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৯ নভেম্বর, ২০২০ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

মাত্রাতিরিক্ত যানজটে স্থবির বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে গতকাল রোববার তীব্র যানজটের মধ্যে পড়েছেন নগরবাসী। যানজটে কার্যত থমকে ছিল মহানগর। দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। প্রতিটি মোড় ও প্রধান সড়কে যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর বিভিন্ন সড়কে গতকাল সকাল থেকে প্রচন্ড যানজট দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতেও একই চিত্র। যানজটে সড়কে তৈরি হয়েছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এতে কখনো গাড়ির চাকা যাচ্ছে থমকে, কখনো ঘুরছে ধীরগতিতে। যানজটের কবলে পড়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন যাত্রী ও গাড়িচালকরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা সড়কেই কাটাচ্ছেন। তবে নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর ও দক্ষিণ) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আজাদীকে বলেন, সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবস হওয়ায় রাস্তায় চাপ আছে। বিকল্প সড়কগুলোতেও এর প্রভাব পড়ছে। তবে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বসে নেই। তারা দিন-রাত চেষ্টা করছেন নগরীতে যানজট নিয়ন্ত্রণে রাখতে দায়িত্ব পালন করে চলেছে দিন রাত।
গতকাল রোববার নগরীর পাঁচ প্রবেশ পথে সবচেয়ে বেশি যানবাহনের জটলা দেখা গেছে। বিশেষ করে নগরীর প্রবেশদ্বার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় ছিল যানবাহনের জটলা। নগরীতে প্রবেশ ও নগরী থেকে বের হওয়ার পথে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল অতিমাত্রায় বেড়েছে। নগরীর বহদ্দারহাট, নিউমার্কেট, ইপিজেড, স্টেশন রোড, ফ্রি-পোর্ট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ মোড়, দুই নম্বর গেট, জিইসি মোড়সহ ব্যস্ত সড়কে অন্যদিনের চেয়ে বেশি যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর লালদীঘি মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। দীর্ঘ এই যানজট কোতোয়ালী মোড় থেকে বকশিবিট পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে। গাড়িচালকরা একে অপরের সাথে তর্কে লিপ্ত হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশের কোনো সদস্যকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মুরাদপুরের চিত্রও ছিল একই রকম। ফ্লাইওভারের দুই পাশেই হিউম্যান হলারগুলো নিয়মনীতি না মেনে যাত্রী ওঠাতে দেখা গেছে। এ কারণে মুরাদপুর মোড় থেকে রেললাইন ও অপরপাশে মির্জারপোল পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়।
নগরীর বাদামতলীর মোড়ের যানজট পেরিয়ে গেছে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত। একইভাবে বারিক বিল্ডিং হয়ে যানজট বিস্তৃত হয়েছে কাস্টমস মোড় ফেলে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত। এদিকে নগরীর সিমেন্ট ক্রসিং থেকে চট্টগ্রাম ইপিজেড পর্যন্ত সড়কে সকাল থেকে তীব্র যানজট দেখা গেছে।
যানজটে নাকাল গৃহিণী জেমমিন সুলতানা আজাদীকে জানান, সকালে তিনি লাভলেন মোড়ে একটি ব্যাংকে গিয়েছিলেন। বাসা থেকে যাতায়াত করতে তাঁর এক ঘণ্টার বেশি সময় যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে।
খুলশী থেকে এম এম আলী সড়কে প্রাইভেট টিউটরের বাসা থেকে মেয়েকে আনতে গিয়ে তীব্র যানজটের কবলে পড়েন ব্যবসায়ী শিহাব আনোয়ার। একপর্যায়ে তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে শিক্ষকের বাসায় পৌঁছান। বেলা ১টা ২০ মিনিটে মেয়ের ছুটির পর তিনি সিএনজি টেঙি নিয়ে বিকল্প পথে বাসায় যান। তিনি বলেন, যানজটের মধ্যে গাড়ির চাকা যেন ঘুরছিল না। এদিকে মেয়ের ছুটি হয়ে যাচ্ছিল। তাই গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে প্রাইভেট টিউটরের বাসায় পৌঁছাই।
ব্যাংকার মো.নাসির উদ্দিন যানজটে নাকাল হওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রোববার দুপুরে শাহ আমানত বিমানবন্দরে যাই আমার চাচাতো ভাইকে আনতে। বেলা ১১টায় রওনা দেই, তখন নিউমার্কেট, রিয়াজউদ্দিন বাজার, আগ্রাবাদ এলাকায় যানজটে আটকে থাকি দীর্ঘসময়। তবে সিমেন্ট ক্রসিং ও ইপিজেড মোড় এলাকায় এসময় যানজট ছিল না। ফিরতি পথে বিকেল সাড়ে তিনটায় দেখি মারাত্মক যানজট। বারিকবিল্ডিং মোড়ে এসে দেখি আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ের সিগন্যালের রেশ গিয়ে পড়েছে সেখানেও।
আন্দরকিল্লা মোড়ে ত্রিমুখী যানজটের শিকার সুজায়েত ইসলাম নামে এক চাকরিজীবী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কর্মজীবী মানুষের প্রতি কর্মঘণ্টার আয় যদি দিনে ট্রাফিক জ্যামে নষ্ট হওয়া ঘণ্টার সঙ্গে মিলিয়ে হিসাব করেন, তাহলে কর্মঘণ্টা নষ্টের আর্থিক হিসাব দেখে নিশ্চয় চোখ কপালে উঠবে। এরসঙ্গে জ্বালানি পোড়ানোর অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি তো আছেই।
তিনি জানান, চট্টগ্রামের কোথাও আধুনিক প্রযুক্তির ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি কাজ করে না। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের হাত দেখাতে হয়, সিগন্যাল বুঝতে। রশি টাঙিয়ে কিংবা রোড ডিভাইডার দিয়ে কী যানজট নিরসন সম্ভব ? এসব পুরনো সমস্যার কথা সিটি কর্পোরেশন, ট্রাফিক পুলিশ, সিডিএ, বিআরটিএ-সবাই জানে। কিন্তু কী করলে ট্রাফিক সিস্টেম দাঁড় করানো যায়, সেটা কেউ করছেন না। সেই সাথে রয়েছে দু’দিন পরপর সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউস্কানি দেয়ার হটকারী পথ পরিহারের পরামর্শ আল্লামা বাবুনগরীর
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যালয়ে অ্যাসাইনমেন্ট বাবদ ফি নেওয়া যাবে না