নিজে ভিক্ষা করেন। স্বামী পরিত্যক্তা তানিয়া তাই চার বছরের সন্তান সায়েমকে নিয়ে একটু সুখে জীবন ধারণের আশায় দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন বাস হেলপার নয়নকে। নগরীর সিঅ্যান্ডবি এলাকার একটি কলোনিতে সংসার পাতেন। টানাপড়েনের সংসারে স্বামীকে সাহায্যের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি অব্যাহত রাখেন। কিন্তু তখন কি জানতেন, একটু সুখের আশায় যার সাথে সংসার পেতেছেন সেই স্বামী নয়নের হাতেই খুন হতে হবে তার আদরের সন্তান সায়েমকে! বাস্তবে তা-ই হয়েছে। শিশু সায়েমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে স্বামী নয়ন।
নয়নকে গ্রেপ্তারের পর সে খুনের বর্ণনা দেয় জানিয়ে চান্দগাঁও থানার ওসি আতাউর রহমান খন্দকার আজাদীকে বলেন, তানিয়া ও নয়নের সংসারে দ্বিতীয় সন্তান আসার পর থেকেই সায়েমের ওপর নির্যাতন বেড়ে যায়। বাধা দিতে এলে তানিয়ার ওপরও চলত নির্যাতন। দুজনের মধ্যে গত ২৫ অক্টোবর ঝগড়া হয়। এরপর ২৭ অক্টোবর তানিয়া প্রতিদিনের মতো ভিক্ষা করতে বের হলে তানিয়ার সন্তান সায়েমকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয় নয়ন। পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে ফেলে দ্রুত সটকে পড়ে। কিন্তু আত্মগোপনে চলে গিয়েও পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে পারেনি। এ ঘটনায় তানিয়া বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা করলেও এখন সেটি হত্যা মামলায় রূপ নেবে বলে জানিয়েছেন ওসি চান্দগাঁও।
২৭ অক্টোবর দুপুরে চমেক হাসপাতালের সামনে থেকে অজ্ঞাত পরিচয় একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। পরে তারা বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে আনজুমানে মফিদুল ইসলামের মাধ্যমে তাকে দাফন করে।
ওসি চান্দগাঁও বলেন, ঘরে এসে সায়েমকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন তানিয়া। পুলিশও নয়নকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। এর মধ্যে ৩০ অক্টোবর নয়ন বাসায় এলে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে একেক সময় একেক তথ্য দিতে থাকে সে। প্রথমে বলে, সে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। পরে জানায়, বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়ায় এক বন্ধু তার কাছে ২০ হাজার টাকা পায়। টাকা শোধ করতে না পেরে সৎ পুত্র সায়েমকে বিক্রি করে দেয় তার কাছে। রাতেই তাকে নিয়ে বোয়ালখালী পুলিশের সহযোগিতায় সেখানে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয় পুলিশ। পরে গতকাল ১ অক্টোবর টানা জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে নয়ন স্বীকার করে, হিংসাপ্রবণ হয়ে সে সায়েমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ চমেক হাসপাতালের সামনে ফেলে পালিয়ে যায়।