গাইনী (৩৩ নং) ওয়ার্ডের সামনে থেকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মোশারফ হোসেন নামে এক দালালকে আটক করেছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল প্রশাসন। তার বাড়ি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুরিতে। পরে তাকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। হাসপাতাল প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডের সামনে ঘোরাফেরা করছিলেন মোশারফ। সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির এক নেতার সহায়তায় দায়িত্বরত আনসার সদস্য তাকে আটক করেন। পরে তাকে হাসপাতাল পরিচালকের অফিসে নেওয়া হয়। হাসপাতালের পূর্ব গেটের ফার্মেসিগুলোর হয়ে নির্দিষ্ট হারে কমিশনের বিনিময়ে কাজ করতেন বলে পরিচালকের কাছে স্বীকার করেন মোশারফ। পরে ‘আমি দালাল’ লেখা গলায় ঝুলিয়ে মোশারফকে সেখানে আটক রেখে পাঁচলাইশ থানা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ওই সময় আটক মোশারফের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের।
মোশারফ স্বীকার করেন, ওষুধ কিনতে সহায়তার নামে রোগীর স্বজনদের হাত থেকে স্লিপ টেনে ফার্মেসিতে নিয়ে যেতেন তিনি। আর ওষুধের বিল বাবদ ফার্মেসির কাছ থেকে প্রতি হাজারে ৬০ টাকা করে পেতেন। হাসপাতালের পূর্ব গেটে থাকা সব ফার্মেসির সাথে তাদের এমন চুক্তি রয়েছে। পূর্ব গেটে অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি ফার্মেসি রয়েছে বলে জানান তিনি।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দালালরা কোনো একজন রোগীর স্বজনকে নিয়ে গেলে ওষুধের মূল্য বাবদ কয়েক গুণ বেশি দাম রাখে ফার্মেসিগুলো, যা সাধারণ মানুষের বোঝার উপায় থাকে না। আর চড়া দামে ওষুধ বিক্রির অংশ থেকে দালালদের নির্দিষ্ট হারে কমিশন দেয় ফার্মেসিগুলো।
কোন কোন ফার্মেসির সাথে তার চুক্তি রয়েছে জানতে চাইলে মোশারফ জানান, পূর্ব গেটের যেকোনো ফার্মেসিতে নিয়ে গেলেই তাদের কমিশন দেয়। অর্থাৎ সবকয়টি ফার্মেসির সাথেই তাদের কথা বা চুক্তি রয়েছে। যদিও এ ধরনের কাজে জড়িত অন্য কারো নাম বলেননি তিনি।
হাসপাতাল কর্মচারীরা জানিয়েছেন, মোশারফের মতো অন্তত ৫০ জনেরও বেশি দালাল সক্রিয় রয়েছে হাসপাতালে। বিশেষ করে গাইনী, সার্জারি, অর্থোপেডিকসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে দালালরা বেশি সক্রিয়।
পরে আটক মোশারফকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে সোপর্দ করে হাসপাতাল প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর আজাদীকে বলেন, হাসপাতাল থেকে দালাল নির্মূলে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। দালালরা কোনোভাবেই যাতে রোগী কিংবা রোগীর স্বজনদের হয়রানি করতে না পারে, তার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নিচ্ছি। দালাল নির্মূল প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হাসপাতাল কর্মচারীদের পরিচিতির সুবিধার্থে নামসহ ব্যাজ এবং আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীদের আলাদা হাফ অ্যাপ্রোন পরা থাকবে। এত করে দালাল চিহ্নিত করা সহজ হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত অভিযানের লক্ষ্যে ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হবে।
এদিকে, মোশারফকে থানা হাজতে রাখা হয়েছে। আজ বুধবার তাকে আদালতে চালান দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালে যাওয়া পাঁচলাইশ থানার এএসআই হাবিবুর রহমান।